প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ০০:০০
অনেক দিন আগে ছিলেন এক রাজা। যিনি ছিলেন খুব ভালো এবং তার ছিল লম্বা দাড়ি। তিনি ছিলেন খুব দয়াবান। তিনি দিন হলে রাজপ্রাসাদের ও মানুষের সবধরনের খোঁজখবর রাখতেন। এমনকি তিনি রাত্রি বেলায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। একদিন তিনি রাত্রি বেলায় বের হলেন অসহায় মানুষের খবর নিতে। তিনি কিছুদূর যাওয়ার পর চারজন লোক দেখতে পেলেন। তিনি ভাবলেন হয়তো কোনো ভালো লোক হবে। আর ওই চারজন ভাবলো আমাদের মতো হবে। ওরা চারজন ছিল চোর। তারা বাদশাহর পাশে দাঁড়ালো। এবং বললো, ‘মুরব্বি আপনি কে?’ তখন তিনি মনে মনে ভাবলেন আমি তো তাদের মতো মানুষ। শুধুমাত্র আমি একজন দেশের শাসক। তাতে কী হয়েছে? আমিও তাদের মতো মানুষ। তিনি তাদের উত্তরে বললেন, ‘আমিও তোমাদের মতো মানুষ।’ তখন তারা ভাবলো, বাদশাহ তাদের মতো চোর। তারা বললো চলো।
কিছু দূর যাওয়ার পরে একজন বললো, ‘ভেবে নেও কিভাবে চুরি করবো?’ তখন প্রথমে একজন বললো, ‘তুমি তো চুরি করতে এসেছো? চুরির এমনকি যোগ্যতা আছে তোমার মাঝে?’ তখন প্রথমজন বললো, ‘আমার এমন এক যোগ্যতা আছে যে, আমি কুকুরের কথা বুঝতে পারি।’ তখন বললো, ‘বাহ! তাহলে তো আমরা রাজার বাড়িতে যাওয়ার পর কুকুর ডাকবে। তখন তুমি সামলে নিবে। তাহলে ঠিক আছে।’ তখন দ্বিতীয় জনকে বললো, ‘তোমার চুরি করার এমন কী যোগ্যতা আছে?’ উত্তরে সে বললো, ‘আমি এক কিল দিয়ে যতবড় দেয়াল হোক ভেঙে ফেলি।’
সে বললো, ‘তাহলে বাহ! আমরা তো আর সামনের দিকে গিয়ে গেট নাড়াচাড়া করতে হবে না। পিছন দিক দিয়ে গিয়ে দেয়াল ভেঙে ঢুকে যাব।’ তারপর তৃতীয়জনকে বললো, ‘তোমার কী যোগ্যতা আছে?’ উত্তরে সে বললো, ‘আমি মাটির ঘ্রাণ শুঁকে বলতে পারি মাটির নিচে কী আছে।’ তখন সে বললো, ‘বাহ! তাহলে তো ঘর খুঁড়তে হবে না। তুমি যেখানে বলবে সেখান থেকে নিয়ে আসবো।’ তারপর চতুর্থজনকে বললো, ‘তোমার কী যোগ্যতা আছে?’ সে জবাব দিলো, ‘আমি রাতের অন্ধকারে যাকে দেখি দিনের বেলায় তাকে চিনতে পারি।’ তারপর বাদশাহকে বললো, ‘তোমার কী যোগ্যতা আছে?’ বলেই সবাই হাসতে লাগলো! এবং সবাই বলে উঠলো, আরে এই দাড়িওয়ালা আর কী যোগ্যতা দেখাবে? তখন বাদশা রাগান্বিত অবস্থায় বলে, এই তোমরা কি জানো আমার এই দাড়ির মধ্যে কী যোগ্যতা আছে? যদি কেউ ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আর যদি আমার দয়া লাগে তাহলে আমি তাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে বাঁচিয়ে আনতে পারি। বাহ! তাহলে আমাদের যোগ্যতা দিয়ে চুরি সম্পন্ন করবো। আর ধরা পড়লে তোমার যোগ্যতা দিয়ে আমাদেরকে বাঁচিয়ে আনবে। তাহলে চলো এবার যাই। যাওয়ার পর প্রথমে রাজবাড়ীর কুকুরটা ঘেউ ঘেউ শুরু করলো।
সবাই প্রথম জনকে বললো, ‘কুকুরটা কী বলছে?’ তখন সে বললো, ‘কুকুরটা বলছে যার বাড়ি এসেছো চুরির জন্য সে তো তোমাদের সাথে। বলে কুকুরটা আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তারা সবাই কুকুরের কথার দিকে না তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লো। এবং দ্বিতীয়জন দেয়াল ভাঙলো। অতঃপর তারা ভিতরে প্রবেশ করলো। তারপর তৃতীয়জন ঘ্রাণ শুঁকে বললো। এবং তারা টাকা পয়সা চুরি করে নিয়ে আসলো। তারা চারজন ভাগ করলো এবং সবাই সমানভাবে নিলো। তারা বাদশাহকে দিলে বাদশাহ নিতে রাজি হলেন না। অতঃপর পরের দিন বাদশাহ যখন রাজদরবারে আসলেন এবং বললেন ওই চারজনকে নিয়ে আসো। যখন তাদেরকে হাজির করা হলো এবং কিছু সময় পর তাদেরকে ফাঁসির রায় দেওয়া হলো। তারা সবাই কাঁদতে থাকলো। কিন্তু একজন কিছু সময় কাঁদে আর কিছু সময় হাসে। কারণ সে চিনতে পেরেছে রাজাকে।
ফাঁসির রায় হওয়ার পরে তাদেরকে বলা হলো শেষ ইচ্ছা কী? তখন চতুর্থজন দাঁড়িয়ে বললো, ‘আমার ইচ্ছা হলো রাজাকে কিছু কথা বলা।’ রাজা আদেশ দিলেন, এবং সে বললো আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আমাদের মধ্যে প্রথম তিনজন তাদের যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছেন এখন আমিও আপনাকে চিনতে পেরে আমার যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছি। এখন শুধুমাত্র আপনার যোগ্যতার বিকাশ ঘটানোর সময় হয়েছে। তখন রাজা সবাইকে মুচকি হেসে মুক্তি দিলেন। তারা সবাই চলে গেলো।