প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
যানবাহন ও কল-কারখানার ধোঁয়া, জীবাশ্ম জ্বালানী, দাবানল, বৃক্ষনিধন প্রভৃতি নানাবিধ কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণ একবিশ্ব শতাব্দীর পৃথিবীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এই দূষণ কেবল শ্বসন সংশ্লিষ্ট অঙ্গসমূহকেই কর্মে অক্ষম করে তুলছে না, বরং এটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে হৃদপি- সংক্রান্ত নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
শিশুস্বাস্থ্য ধ্বংসের মাধ্যমে সম্ভাব্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুনিশ্চিত বিপর্যয়ের সম্মুখে ফেলছে বায়ুদূষণ। এটির কারণে বৈষ্ণিক উষ্ণতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি পাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে অম্লের পরিমাণ বৃদ্ধি। এমনকি পৃথিবীর সুরক্ষাস্তর হিসেবে পরিচিত ওজোনস্তরেও অসংখ্য ফাটল তৈরি করছে এই বায়ুদূষণ, যা জীবের সংস্পর্শে নিয়ে আসছে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি।
অ্যাজমা, অ্যালজাইমা, অটিজম, পারকিনসনস এবং বহু মনস্তাত্ত্বিক কারণ যে হতে পারে এই বায়ুদূষণ বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে তা আমরা আজ জানি। এ ধরনের উদাহরণ শ’য়ে শ’য়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারপাশে। সূর্য থেকে আগত শক্তি পৃথিবীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়। অথচ দূষিত বায়ুর ভারী স্তর এই উপকারী শক্তিকেও বায়ুমণ্ডল ভেদ করে জীবের সান্নিধ্যে পেীঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে।
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সঠিক উপাদান বজায় রাখায় বিজ্ঞজনের পরামর্শ অসংখ্য। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, অধিকাংশ পরামর্শের প্রয়োগ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে খুব একটা দেখা যায় না। বিভিন্ন সময়ে গৃহীত বিশেষ বিশেষ উদ্যোগ সাময়িক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হলেও, বায়ুদূষণের স্থায়ী কোন সমাধান এখণ পর্যন্ত হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে, আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা (মসজিদের শহর) অর্জন করেছে বসবাসের অযোগ্য শহর হিসেবে পৃথিবীর শহরগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান (সম্প্রতি) ।
অত্যধিক রাসায়নিক পদার্থ ধারণ করে এমন দ্রব্যের অত্যধিক ব্যবহার, যানবাহন ও কল-কারখানার ব্যবহার, ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করে সহনশীল পর্যায়ে রাখা আজ গুরুতরভাবে প্রয়োজন। অধিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণে ভূমি ভরাট কিংবা বননিধন তৈরি করছে বিশুদ্ধ বায়ু ও পানির সঙ্কট। জীব (উদ্ভিদ ও প্রাণী)-এর বেঁচে থাকার মৌলিক এই উপাদান দু’টির আশঙ্কাজনক হ্রাসে জীববৈচিত্র্য তথা পৃথিবীর অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে। তাই, মানবজাতির বংশ ধারা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পৃথিবীতে বিদ্যমান নানাবিধ ক্ষেত্র/সেক্টরের কোনগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কোনগুলো কম, তা বাছাই করে পূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সহকারে সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে তার প্রয়োগ ঘটানো জরুরি।
অন্যথায়, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবার যে সতর্কবার্তা বিজ্ঞানীদের, তার বাস্তব উপস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা ব্যতীত দ্বিতীয় কোন পথ আমাদের জন্যে আর থাকবে না। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এমনটা ঘটুক তা আমরা চাইও না।