শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

সত্যের জয়
অনলাইন ডেস্ক

একজন দরিদ্র কৃষক ছিলো, তার ছিল একটি বকনা বাছুর। ঐ কৃষকের একজন প্রতিবেশী ছিল খুব ধনী। তার ছিল একটি ঘোড়া। তার অনেক টাকা-পয়সা ও ধন-দৌলত ছিল। ছিল চারণভূমি, চাকর, চাকরানী ও দাস-দাসী। একদিন ধনী লোকটি তার দরিদ্র প্রতিবেশীকে বললো, ‘তুমি প্রতিদিন আমার ঘোড়াকে চারণভূমিতে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গেলে কেমন হয়, সাথে তোমার ঐ ছোট বাছুরকেও নিয়ে যাবে আমার সেই চারণভূমিতে অনেক তাজা ঘাস আছে, যা আমার ঘোড়াকে দেখাশোনার বিনিময়ে তোমার বাছুর খাবে ও তরতাজা হয়ে বেড়ে উঠবে।’ কৃষক বললো, ‘এতো ভালো কথা।’ সে তার মত আছে বলে জানাল। তাই প্রতিদিন ধনী প্রতিবেশীর চারণভূমিতে তার বাছুর ও প্রতিবেশীর ঘোড়াকে একসাথে নিয়ে যেত এবং তাদের আহারের পর বেলা শেষে বাড়ি ফিরে আসতো। এভাবে সময় পার হতে লাগলো আর তার বাছুর বড় হয়ে উঠতে লাগলো। এক সময় তার বাছুরটি অনেক বড় হলো। কিছুদিন পর তা গর্ভবতী হলো এবং বাচ্চা প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলো। গরিব লোকটি তাই একদিন ধনী প্রতিবেশীর কাছে গিয়ে তার গাভীর অবস্থা জানাল এবং ঘোড়া নিয়ে চারণভূমিতে যেতে পারবে না বলে জানালো। ধনী প্রতিবেশী সব জেনেও না জানার ভান করে বললো, ‘তুমি কোন গাভীর কথা বলছো?’ কৃষক বললো, ‘সেই গাভীটি যেটি আমি আপনার ঘোড়ার সাথে চারণভূমিতে নিয়ে যেতাম।’ ধনী প্রতিবেশী বললো, ‘তুমি কী বলছো!’ এটিতো আমার ঘোড়ার বাচ্চা, তা তোমার গাভী হলো কী করে!!!’

তাদের মাঝে এক কঠিন ঝগড়া শুরু হলো। পরে তারা এই কথার ওপর একমত হলো যে, এই বিষয়ের ফয়সালা কাজির মাধ্যমে করবে। কাজি ছিলেন তাদের এক প্রতিবেশী, তার এই ধরনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দানের অনেক অভিজ্ঞতা আছে।

তাদের বিচারের নির্দিষ্ট তারিখের আগে ধনী লোকটি তার পক্ষে রায় দেয়ার আশায় প্রতিবেশী ঐ কাজিকে অনেক ধন-দৌলত ঘুষ হিসেবে দিল, যাতে তার ন্যায়বিচারের চোখে পর্দা পড়ে যায় ও তার পক্ষে রায় প্রদান করে। তাই বিচারের নির্দিষ্ট সময়ে সে বলে যে, গাভীটি ঘোড়ার বাচ্চা, তার মালিক ধনী লোকটি। এটি কিছুতেই কৃষকের গাভী নয়। কৃষক এই বিচার মেনে নিলো না। সে বললো, আমি অন্য লোকের নিকট বিচার দাখিল করবো। সে যে রায় দিবে আমি তা মেনে নেবো। ধনী লোকটি তা মেনে নিলো। বিচারের নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বে ধনী লোকটি অনেক উপহার নিয়ে কাজির নিকট উপস্থিত হলো, এই উদ্দেশ্যে যে, পূর্বের লোকটির মত এই লোকও তার পক্ষে রায় দিবে, কিন্তু কাজি কোন রকমে তাকে পাত্তা দিলেন না। তিনি বললেন, ‘আমি কক্ষনো ঘুষ গ্রহণ করি না। আমি আমার হৃদয়ে যাকে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে উপযুক্ত মনে হয় তার পক্ষে রায় প্রদান করি।’ কাজি তাকে নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত হতে আদেশ দিলেন। পরবর্তীতে তারা কাজির সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করলো। বক্তব্য শুনে কাজি বললেন, এখন কিছুতেই আমার পক্ষে তোমাদের রায় প্রদান করা সম্ভব নয়। তোমরা দু’জন আমার কাছে এক সপ্তাহ পর দেখা কর। ধনী লোকটি প্রশ্নের আলোকে বললো, ‘কেন এই কালক্ষেপণ?’ অথচ বিষয়টি আপনার সামনে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার, এতে কোনো জটিলতা নেই কেননা আমরা সব প্রমাণ আপনার কাছে উপস্থাপন করেছি।’ কাজি বললেন, ‘বিষয়টি অতি সাধারণ, আর তা হচ্ছে যে, আমি আগামী এক সপ্তাহ ঘাস খাবো। তারপর ঘোড়া ও গরুর অনুভূতি রপ্ত করবো এবং ঘোড়া ও গরুর সাক্ষাৎকার নিয়ে তোমাদের বিচারের রায় দেবো।’ ধনী লোকটি বললো, ‘আপনি কী বলছেন? মানুষ কি কখনো ঘাস খায়? আর ঘাস খেয়ে কি ঘোড়া-গরুর অনুভূতি রপ্ত করা যায়? এটি কখনো সত্যি হতে পারে না।’

কাজিও অবাক হওয়ার সুরে বললেন, ‘তবে এটি কি করে সত্যি হতে পারে যে, ঘোড়া একটি গাভীকে জন্ম দিয়েছে, এটাতো একটি অসম্ভব ব্যাপার! ভাগো এখান থেকে, গরিব লোকের গাভীর ওপর তোমার কোন অধিকার নেই, তোমার অত্যাচারী ও জালিম হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। কখনো তোমার প্রতিবেশীর ওপর যন্ত্রণাকর বিষয় উপস্থাপন করো না।’ ধনী লোকটির চেহারা রক্তশূন্য হয়ে পড়লো সে কাজির কথার কোন উত্তর খুঁজে পেল না। সে বিতাড়িত হয়ে লজ্জিত ও অপমানিত অবস্থায় বাসায় ফিরে গেল। অপর দিকে দরিদ্র লোকটি আনন্দিত চিত্তে, সুখবর নিয়ে বাড়ির দিকে গেল। সে কাজির উত্তম বিচার ও তার উপস্থিত বুদ্ধি দেখে খুব চমৎকৃত হলো এবং ইনসাফ ফিরে পেয়ে কাজির প্রতি কৃতজ্ঞ হৃদয়ে দোয়া করলো। ‘আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবী করুন।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়