প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
শিহাব ওর জন্মদিনে কখনো অনাথ আশ্রম, কখনও অন্ধ স্কুল বা কোন বিকলাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসে। এবার ও গাড়িতে অনেক উপহার খাবার ইত্যাদি, নিয়ে শহরের বাইরে একটি ছোট পাহাড়ী জায়গায় এক বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে পৌঁছালো। বলাই ছিল, তাই ও আসতেই অফিস থেকে লোক এসে ওকে ভিতরে নিয়ে গেলো। খোলামেলা জায়গা, ছোট ছোট বেলার মতো এক একটি ঘর, সামনে বাগান, পাশে মসজিদ আর একটি সবার আড্ডার জায়গা, সেখানে সব কিছু মিলে কিছু খেলা বা গল্প করে সময় কাটানোর একটি ছোট জায়গা ও আছে। সাথে একটি ছোট লাইব্রেরি ও আছে।
শিহাব ওদের সঙ্গে অনেক কথা বললো, উপহার গুলো দিলো, ওদের সঙ্গে বসে খাবার খেল, সবাই নিজেদের জীবনের নানা সুখ দুঃখের ঘটনা বলছিলো।
ম্যানেজার বললো, চলুন আপনাকে এখানের সবচেয়ে সিনিয়রের সঙ্গে পরিচয় করে দেই। রাহুল আর তার স্ত্রী জোছনা। মাথায় শ্বেত শুভ্র চুল ঘাড় অবধি চোখে মোটা চশমা বয়স ৮০ ওপর।
কিন্তু চেহারায় একটি সুন্দর আভিজাত আছে। দীর্ঘকাল কলেজে শিক্ষকতা করেছে। ওদের কোন সন্তান নেই। শেষ বয়সে এই আশ্রমেই কাটাবেন ঠিক করেছেন।
আমি রুমে যেতেই তারা আমাকে খুব সহজেই আপন করে নিলো এবং তাদের সব কথা বলতে লাগলো।
রাহুল বললেন, ‘জানো বিয়ের পর থেকে আমরা কখনও পৃথক থাকিনি। আমি বাপের বাড়ি গেলে ও আমার সঙ্গে যেত।
হেসে জোছনা বললো, ‘কি করি বল? তোমাকে ছাড়া থাকতেই পারি না। এত বছরের এক সঙ্গে থেকে আমরা একে ওপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। জানো, একবার আমার টায়ফয়েড হয়েছিল।
দিন রাত আমার সেবা করে আমাকে ভালো করে তোলে, তবে শান্তি।’
‘আর তুমি? আমার সামান্য কিছু হলেই তুমি অস্থির হয়ে পড়’।
ভালোলাগছিলো এই বৃদ্ধ দাম্পত্যির সুখময় সুন্দর দীর্ঘ জীবনের নানা ঘটনা শুনে। একদম সধফব ড়ভ বধপয ড়ঃযবৎ. এমন সচরাচর দেখা যায় না।
রাহুল বললেন, "আমাকে উনি কোনদিন আঘাত দিয়ে কোন কথা বলেননি। বরং আমাকে খুশি করার জন্য কি না করেছেন। আমাদের কোন দিন ঝগড়া হয়েছে কিনা মনে ও পড়ে না।
"একটি বাক্স খুলে দেখালেন, রাহুলের অনবরত সকল উপহার। এখনও তাদের বিয়ের কাপড়, জুতা, গহনা, সব যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।"
রাহুল বললেন, তুমি বসো! আজ তোমার জন্মদিন। একটু পায়েসের ব্যবস্থা করি। কথা শুরু করলে শেষ করতে চাও না।
জোছনা বললেন, "তুমি শুনলে আশ্চর্য হবে যে, আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যেন ও আমার আগে মরে। কারণ ওর বিয়োগ যন্ত্রনা আমি সহ্য করে নিতে পারবো। কিন্তু আমি যদি আগে যাই ও নিজেকে সামলাতে পারবে না। বড় কষ্ট পাবে ও।
সম্পূর্ণ এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে সিহাব ওদের থেকে বিদায় নিল। ওরা দুজন বুকে জড়িয়ে দোয়া করলো।
এর কদিন পর সিহাব নিহার থেকে একটি চিঠি পেল, "তোমার সঙ্গে পরিচয় হয়ে আমরা খুবই প্রান্ন হইয়াছি। আমাদের কোন সন্তান নেই। কেন জানি না আমরা দুজনেই তোমার ভিতর আমাদের এক ছেলের রুপ দেখিয়াছি। তাই আমাদের খুশির সীমা নেই।
আগামী মাসের ১৫তারিখে আমাদের বিবাহের ৫৫তম বার্ষিকী। তুমি যদি সময় করিয়া উক্ত দিনে আসিতে পার, আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করবো।
সিহাব জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। সেখানে অসংখ্য গাড়ি আর মানুষের স্রোত। দূরে এক মসজিদের চুড়া। মনে মনে প্রার্থনা করল, "আল্লাহ তুমি এমন সুখি বিবাহিত জীবন প্রতিটি মানুষকে দাও।
ইতি : গল্পটা শুধু ডাইরীর।