প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৮
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এগারো.
ইরফান নাস্তা খেয়ে চলে যাচ্ছে। পেছন থেকে তাকিয়ে আছে অনন্যা। হঠাৎ করেই আবার পেছন ফিরলো ইরফান, দেখলো বিমর্ষ বদনে তার চলে যাওয়া দেখছে অনন্যা।
‘কী হলো, এতো বিমর্ষ কেনো দেখাচ্ছে তোমাকে?’ প্রশ্ন করলো ইরফান।
হঠাৎ করেই দৌড়ে চলে এসে ইরফানকে বুকে জড়িয়ে ধরলো অনন্যা। তারপর বললো, ‘যেখানেই যাও আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে খুব মিস করবো। তোমাকে আমি খুব মিস করবো ইরফান।’
ইরফান বুঝতে পারলো, মায়া এমন একটা আবেগ, যা মানুষকে পাগল করে তোলে। অনন্যার মাঝে তার প্রতি মায়া লেপ্টে একাকার হয়ে গেছে। এখন আর এই মায়া ছাড়াতে খুব কষ্ট হবে।
সে বললো, ‘শোনো অনন্যা তুমি আসলে জানো না যে, আমি একজন আর্মি অফিসার। আমার গত ১৫ দিনের ছু্টেিত আমি ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। শুধু বেড়ানোটাই আমার মুখ্য ছিলো না। ওসি প্রদীপের অপকর্মের বিষয়গুলো রেকর্ড এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন মাফিয়া ইমতিয়াজকে ধরাই আমার মিশন ছিলো। আমি একটাতে সফল হয়েছি, কিন্তু আরেকটাতে সফল হইনি। ইমতিয়াজকে ধরতে না পারলে আমার প্রমোশন হবে না। তাই আগামীকালই আমার যেতে হবে আবার কক্সবাজারে, মিশন ইমতিয়াজ। সাথে থাকছে আমার বন্ধু তুষার আহমেদ। দুজনেরই উদ্দেশ্য একটি, তবে প্রকাশ ভিন্ন। এই আর কি?’
‘আমি তোমাকে একটি দিন মাত্র চোখের সামনে দেখতে চাই ইরফান।’ অনন্যার দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
ইরফান এবার হতবাক। মেয়েটি তাহলে তাকে সত্যিকারভাবেই ভালোবেসে ফেলেছে! এর মায়ার বাঁধন থেকে ছুটে যাওয়া মুশকিল। কিন্তু তার ডিউটি তো আর ফেলে দিতে পারবে না। দেরি করলে হয়তো ইমতিয়াজ দেশের বাইরে চলে যাবে। সেটা তার বিশাল দায়িত্ব। এখন কোন্ পথে যাবে সে?
ঠিক এমন সময়ই কামরায় প্রবেশ করলেন নাদের সাহেব। তিনি বললেন, ‘আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো? আজকের দিনটা তো আমরা তোমাকে সেলিব্রেট করবো। সবকিছুই আয়োজন হয়ে আছে।’
‘বুঝলাম না। মি. নাদের। কী ধরনের সেলিব্রেট?’
হাসলেন নাদের সাহেব। তারপর বললেন, ‘তোমার জন্যে আমাদের পক্ষ থেকে একটা গিফট নির্বাচন করা হয়েছে। সেটা না নিয়েই তুমি চলে যাবে?’
ইমতিয়াজ প্রশ্ন করলো, ‘সেটা কী ধরনের গিফট?
‘সবাই তো জড় বস্তু গিফট করে, আমি না হয় আমার কন্যা অনন্যাকে তোমাকে গিফট করলাম। তোমরা দু জন যদি রাজি হও, তাহলে ডেকে আনি কাজী? কী বলো?’
এ সময় রুবিনা ও তাসফিয়া এলো। তারপর দু জনে মিলে হাততালি দিতে থাকলো। মনে হচ্ছে যেনো বাইরে সানাই বাজছে। বিয়ের আয়োজন চলছে।
পরদিন। বিশাল আয়োজন। আর্মির লোকজনও বিয়েতে চলে এসেছে। ইরফানের যেহেতু বাবা-মা বেঁচে নেই। সেহেতু আজ নাদের সাহেবই অভিভাবক দু জনের। কিন্তু এ কী খবর এলো। অনন্যাকে পাওয়া যাচ্ছে না!
চারদিকে খোঁজ চললো। কিন্তু কোনো জায়গায়ই অনন্যার খোঁজ নেই।
আর্মির লোকেরা তন্ন তন্ন করে ঘরে বাইরে খুঁজতে লাগলো। নেই--অনন্যা নেই কোনোখানেই।
এ সময়ই নাদের সাহেবের মুঠোফোনে কল এলো। ‘আমি হরকত বলছি, আপনার মেয়েকে আমরাই উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। তার জন্যে বিনিময় দরকার। বাড়াবাড়ি করলে তাকে মৃত পাবেন। বুঝলেন?’
‘না না। তাকে আমি মৃত দেখতে চাই না। কতো টাকা লাগবে বলো, আমি পাঠিয়ে দিবো।’
‘বেশি না। মাত্র বিশ লাখ। টাকা দিবেন কক্সবাজারের একটা শুঁটকির দোকানে। ওখানে কেউ থাকবে না। সোজা টাকার বান্ডেলটা রেখে চলে আসবেন। টাকা আমার লোকেরা বুঝে পাওয়ার পরই আপনার মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
কথা শেষ হতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। ইরফানসহ আর্মি অফিসাররা চেক করে দেখলো এটা একটা বিদেশী নাম্বার, যা করা হয়েছে কানাডা থেকে। ইরফানের আর বুঝতে বাকি রইলো না চালটা ইমতিয়াজেরই।
রুবিনার চোখে অশ্রু। বোনের নিরুদ্দেশে সে আজ অসহায়। এমন সময় সেখানে এলো তুষার আহমেদ। তারপর রুবিনার হাতটি ধরে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, ‘কেঁদো না রুবিনা। আমার বন্ধু ইরফান অনন্যার জন্যে জীবনের সবকিছু বাজি লাগতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না। তুমি নিশ্চিত থাকো, ইমতিয়াজ যেখানেই নিয়ে অনন্যাকে লুকিয়ে রাখুক না কেনো, সেখানেই আমরা হাজির হবো।’
রুবিনা কাঁদতে কাঁদতে তুষারকে জড়িয়ে ধরলো, তারপর বললো, ‘জীবনটা এতো অসহায়, জীবনের মুহূর্তগুলো শুধুই রূপ বদলায়। আপাকে হারালাম আর তোমাকে পেলাম। জানি না, তোমাকেও হয়তো হারিয়ে ফেলতে হবে বেলায় অবেলায়।’
‘আমি তুষার। আমার জন্ম হিমলায়ের এক তুষারঘেরা স্থানে। তাই বাবা আমার নাম রেখেছিলেন তুষার আহমেদ। বাবা বেঁচে নেই, কিন্তু বাবার দেওয়া নামটা বয়ে চলছি। আমি তুষার হলেও আমার হৃদয় গলে তোমার দু চোখের মতো অশ্রু বিগলিত হয়। তবে সেই অশ্রু যখন শুকিয়ে যায় তাতে আগুনের ফুলকি ছুটতে বেশি দেরি হয় না। এবার আমি আগুনেই ঝাঁপ দিলাম, আগুন থেকেই বের করে আনবো তোমার বোন অনন্যাকে।’
(চলবে)







