রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৬

হাসি

সৌরভ আহমেদ
হাসি

নিধি ভাবছে। এক দিন, দুই দিন ধরে না, টানা ৯০ দিন ধরে ভেবে যাচ্ছে। ভাবনার বিষয় সামান্য, ছেলেটার সঙ্গে প্রেম করবে কি করবে না। ভাবতে ভাবতে ডিমভাজিতে লবণ দিতে ভুলে গেছে সকালে। সেই ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে অফিসে আসার পথে ভুলে বাসের ভাড়া দিয়েছে দুইবার। তার এই ভাবনা বন্ধ করা দরকার। কিন্তু যতই চেষ্টা করে, ঘুরেফিরে চলে আসে, সেই ছেলেটা।

ছেলেটার নাম জয়নাল। জয়নাল নামের ছেলেদের সঙ্গে সে কোনোভাবেই প্রেম করতে পারে না। দেখা গেল, সে ছেলে একটা চিঠি পাঠাল। সেখানে কোনো এক জায়গায় লেখা জয়নাল+নিধি। নাহ, ব্যাপারটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। আবার মাথা থেকেও ছেলেটাকে ছুড়ে ফেলতে পারছে না। কিসের টানে সে আটকে আছে, তার কাছে তা–ও ঠিক বের করতে পারছে না।

জয়নালের সঙ্গে কথা হয় ফেসবুকে। ভালো গল্প লেখে। হাসির গল্প সব। সেগুলো পড়ে নিধি বিছানায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেয়। বিচ্ছেদের ৬ বছর পর যে ছেলেটা হাসি ফোটাতে পেরেছে, সে এই জয়নাল। একটু ভুল হচ্ছে। ছেলেটার লেখা তার মন কেড়েছে। কিন্তু ভাবনাতে সে ছেলেটাকে ঢুকিয়ে ফেলেছে।

জয়নাল ঘুমাচ্ছে। টানা ১৭ ঘণ্টা ঘুমের রেকর্ড হতে চলল তার। বাসায় খাওয়ার কিছু নেই। উঠে নিচ থেকে কিছু নিয়ে আসবে, সে ইচ্ছাও করছে না।

‘মা, আমার ঘড়িটা কোথায়? একটু খুঁজে দাও না।’ বাবার ডাকে ছুটে আসে নিধি। আজমত সাহেবের একমাত্র মেয়ে সে। বড় করেছেন পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে। জীবনে কোনো কিছুর কমতি রাখেননি। মেয়েকে ডাকেন মা। চশমাটা খুঁজে না পেলে ডাক পড়ে, টাকার দরকার পড়লে ডাক পড়ে, খাবারের টেবিলে ডাক পড়ে। তিনি চান মায়ের মতো মেয়েও তার আশপাশে ঘুরঘুর করবে। দায়িত্ব নেবে।

বাবাকে বলার চেয়ে ছেলেটাকে মনের কথা জানানোর ব্যাপারটা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবার অনুমতি আছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এসব নিয়ে তার কোনো সমস্যা নেই। তিনি মেয়েকে সুখী দেখতে চান। কিন্তু নিধি সেখানটাতেই আটকেছে। এই ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করা মানে আজীবন একটা অনিশ্চয়তায় থাকা। আবার কখনো কখনো মনে হয় তার সঙ্গেই সুখী হবে সে। জীবনে টাকার যেমন দরকার আছে, তেমনি পাগলামিরও দরকার আছে। এই ছেলে বড্ড পাগল।

জয়নাল ঘুমাচ্ছে। টানা ১৭ ঘণ্টা ঘুমের রেকর্ড হতে চলল তার। বাসায় খাওয়ার কিছু নেই। উঠে নিচ থেকে কিছু নিয়ে আসবে, সে ইচ্ছাও করছে না। ইচ্ছা করছে না, যাওয়ার দরকার নেই। মনের কথা শোনা দরকার। পেটের কথা শুনে লাভ নেই। মানুষ শুধু পানি খেয়েই ৯০ দিনের বেশি বাঁচতে পারে। তার তো এক দিনও হয়নি এখনো। মাঝেমধ্যে ঘুম ভাঙছে। কোলবালিশটা গায়ের সঙ্গে শক্ত করে জড়িয়ে সে আবার ঘুমাচ্ছে। ঘুমের সব হিসাব মিটমাট করতে হবে তার। আজকে ঘুমানোর দিন।

নিধির কলে, ঘুম ভাঙে জয়নালের। চোখ বন্ধ রেখেই মোবাইলটা হাতড়িয়ে খুঁজে বের করল। ঘুম চোখে রিসিভ করে কানে ধরল,

হ্যালো।

কেমন আছেন? আমি নিধি।

অনেক ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

এই তো আছি। ঘুমাচ্ছিলেন মনে হয়। সরি বিরক্ত করার জন্য।

আরে না না। আপনি বলেন।

তেমন কিছু না। ভালো লাগছিল না। তাই ভাবলাম আপনার সঙ্গে কথা বলি।

আচ্ছা। বলেন কথা, সমস্যা নেই।

না থাক। পরে বলব। আপনি ঘুমান।

নিধি ফোন কেটে দিল। জয়নালের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা ফোন না কাটলেও পারত। তার সঙ্গে কথা বলতে ভালোই লাগে। একটা সফট কর্নার কাজ করে মেয়েটার প্রতি। ঘুমের রেশ কেটে গেল। পেটের ভেতর ইঁদুর-বিড়াল-খরগোশ সব একসঙ্গে দৌড়াচ্ছে। তবু বিছানা ছাড়া যাবে না। পাশে রাখা বোতলটা থেকে আরও এক ঢোঁক পানি গিলল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ দিল নিধিকেÑ

একটানা সর্বোচ্চ কতক্ষণ ঘুমানোর রেকর্ড আছে আপনার?

হিসাব করিনি কখনো? কিন্তু কেন?

না, এমনিতেই। আমি আজকে ঘুম ডে পালন করছি তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম।

বাপরে, ঘুম ডে! ঘুমের আবার ডে আছেৃ

দুজনের কথা চলছে। নিধি হাসছে। মুচকি হাসি থেকে খিলখিল হাসি। আজমত সাহেব ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন। নিধির পাশের সোফায় তিনি বসে ছিলেন। মেয়ের মুখে হাসি দেখছেন অনেক দিন পর। আগের সম্পর্কটার কথা জানতেন তিনিও। আবার নতুন কেউ, সেটাও টের পেলেন। রুম থেকে বের হওয়ার সময় বললেন, ‘মা, ছেলেটাকে একদিন বাসায় আসতে বলিস। যে আমার মেয়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, তাকে তো একবার দেখতেই হয়।’

নিধি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে, সেটা আজমত সাহেবের স্বপ্ন ছিল। ডাক্তার তো একরকম আশাহীন করে দিয়েছিল। সারাক্ষণ ভয়ে থাকতে হতো মেয়েটাকে নিয়ে। তিনবার সুইসাইড অ্যাটেম্পও নিয়েছিল। চোখে চোখে রাখতে হতো সারাক্ষণ। ব্যস্ত রাখার জন্য একটা চাকরিও জোগাড় করে দিয়েছিলেন। হাসি কী জিনিস, সেটা তিনি গত ছয় বছর দেখেননি।

নিধি আর বাবার সামনে কিছু বলে না। মুচকি হেসে তার রুমের দিকে চলে যায়। অযথা ভাবনাতে ইতিরেখা টেনে দেয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়