মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৪

মুন্নার অন্যরকম ঈদ

কনক কুমার প্রামানিক
মুন্নার অন্যরকম ঈদ

সন্ধ্যা নামতেই মফস্বল শহরের সরু গলি রাস্তাগুলো খুব সুনসান হয়ে পড়ে। ইদানিং তো আরো বেশি। শহরের সব জায়গায় আগের তুলনায় চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া এসব গলির রাস্তায় সন্ধ্যার পরে লোকজন বের হয় না। সন্ধ্যার পরপরই লোকজন বাড়িতেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায়। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আগের মতো বৈকালিক আড্ডা জমে না। মানুষ দিন দিন যেন আরো যান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। কৌশিক বাবু অবশ্য একটু অন্য ধাঁচের মানুষ। তিনি এসবের তোয়াক্কা করেন না। মসজিদের পাশ দিয়ে একটা গলি সোজা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। গলি দিয়ে খানিকটা সামনে গেলেই কৌশিক বাবুর পাঁচতলা বাড়ি। তিনি বেশ অবস্থাসম্পন্ন মানুষ। একদম ছোট সংসার। কৌশিক বাবু তার স্ত্রী আর পাঁচ বছরের একটা মেয়ে। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী হলেও সবার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলেন। সবাই তাকে অত্যন্ত মান্যি করে।

শহরের মেইন পয়েন্ট তার একটি বেশ বড় কাপড়ের শোরুম রয়েছে। রোজগারপাতি নেহায়েত কম না। তার মনটা অনেক সাদা। সাধ্যমতো মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন না। আসলে শুধু টাকা পয়সা থাকলেই হয় না, মানুষকে ভালবাসার জন্য এক্সটা একটা মনেরও দরকার হয়। আর মাত্র কয়েকটা রোজা বাকি। তারপরেই আসবে বহু কাক্সিক্ষত সে খুশির ঈদ। শহরের দোকানগুলোতে এখন বেজায় ভিড়। সবাই এখন কেনাকাটা করতে ব্যস্ত। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নাই। এই সময়টাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফাতে ব্যবসা করে। কৌশিক বাবুর বেচাকেনা বেশ ভালো চলছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হচ্ছে। সামনে ঈদ বলে রাস্তাঘাটে লোক সমাগম আগের থেকে বেড়েছে। চুরি-ছিনতাইও বেড়েছে। মানুষের হাতে টাকা পয়সা কমে গেলে এ রকম অনৈতিক কাজ বেড়ে যায়।

চাঁদরাতের দিনটাতে অন্য দিনের তুলনায় ব্যবসা ভালো হয়। অনেক ক্রেতা সকল কাজকর্ম সেরে এই দিনটাকে কেনাকাটার জন্য বেছে নেয়। মার্কেটে অনেক কাস্টমার থাকে। দম ফেলার ফুসরতও থাকে না। রাতভর কেনাকাটা চলে। গিজগিজ করে ক্রেতা। সরগরম হয়ে ওঠে ঈদের আগের এ রাতটি। এ যেন একটি ট্রেডিশন হয়ে গেছে। ঘুম ঘুম চোখে ক্লান্তি নিয়ে রাতভর বেচাকেনা করে দোকানীরা। দোকান বন্ধ করে ভোরের দিকে কর্মচারীসহ বাড়ির দিকে রওনা দেয় কৌশিক বাবু। রোজার কটা দিন বেশ ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। আজ তার দোকান বন্ধ থাকবে। ভেবে রেখেছে সারাদিন বিশ্রাম করবে সে। দোকানের ছেলেগুলো চলে গেল। কৌশিক বাবু একটু হেঁটে সরু গলিটার মুখে মসজিদের সামনে আসতেই মসজিদের ভেতর থেকে ফজরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। পথে নামাজি লোকজনের সঙ্গে দেখা হয় কৌশিক বাবুর। সবাই তার পরিচিত। টুকটাক কথাবার্তাও হয় ওদের সঙ্গে। বাসায় প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছেন তিনি। হঠাৎ তার চোখ যায় রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ানো সাদা রঙের একটা প্রাইভেট কারের দিকে। গ্যাঞ্জাম হচ্ছে। ষণ্ডামার্কা কয়েকজন লোক দশ বারো বছরের একটা বাচ্চা নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্ঠা করছে। ছেলেটাকে অচেতন মনে হচ্ছে। কোন জ্ঞান নেই। অসাঢ় অচেতন ছেলেটার দেহ নিয়ে লোকগুলো টানাহেঁচরা করছে গাড়িতে তোলার জন্য। আকাশ এখনো পুরোপুরি ফর্সা হয়নি। কৌশিক বাবু এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকগুলোর কাণ্ড-কারখানা দেখছিলেন। তিনি এবার জোরালো গলায় হাক মারলেন, কে রে ওখানে? কী হচ্ছে ওসব? লোকগুলো বোধহয় ভয় পেয়ে গেল। ছেলেটাকে ফেলে তড়িঘড়ি পালিয়ে গেল। কৌশিক বাবু সেখানে দ্রুত এগিয়ে গেলেন। দেখলেন ছেলেটার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। কিন্তু জ্ঞান নেই। কোন কিছু দিয়ে হয়তো অজ্ঞান করা হয়েছে। কৌশিক বাবু ছেলেটাকে কাঁধে তুলে পাশের একটা ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে দোকানদারকে ডেকে তুলে তার জ্ঞান ফেরালেন। তারপর একটা রিকসা নিয়ে ছেলেটাকে তার বাসায় নিয়ে আসলেন। কৌশিক বাবু ও তার স্ত্রী মিলে ছেলেটার অনেক সেবা শ্রশ্রƒষা করে সুস্থ করে তুললেন। তারপর অনেক কথা হলো হলো ছেলেটার সঙ্গে। বড় মায়াভরা মুখ ছেলেটার। ওর নাম মুন্না। বাবা মার একমাত্র সন্তান। বাবার সঙ্গে শত্রুতার জেরে লোকগুলো তাকে কিডন্যাপ করেছিল। টাকা-পয়সার বিষয় নিয়ে রাস্তার মাঝে বাক্বিতণ্ডা চলছিল। আর তখনই কৌশিক বাবু বিষয়টি দেখতে পান। অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে তার বাসায়। প্রতিবেশী আনোয়ার সাহেব ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে গেলেন। বিকেল পর্যন্ত মুন্না সবার সঙ্গে খেলাধুলা আনন্দ করে ভালো সময় কাটালো। বিকেলে ওর বাবাকে ফোন করা হলো। মুন্নার বাবা মা আসলেন। ছেলেকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। ওর মা বারবার ছেলের গালে চুমু দিতে লাগলেন। আদরের ছেলেকে বুকে নিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললেন ওর মা। পাশে কৌশিক বাবুর দু’চোখ বেয়ে গড়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা আনন্দের জল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়