প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৮
মাঠে মাঠে সর্ষের আবাদ, কৃষকের মুখে হাসি

চাঁদপুরে মাঠে মাঠে সর্ষে খেত। গাছে গাছে হলুদ ফুলের সমারোহ। পাশ দিয়ে গেলে সবারই নজর কাড়ছে। এ চিত্র চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের। এই গ্রামের অন্তত ৮০ জন কৃষক ৩৮ একর জমিতে বিনা উদ্ভাবিত উন্নত জাতের বিনা-৯ ও বিনা-১১ জাতের সর্ষে আবাদ করেছেন। এর মধ্যে বিনা-৯ জাতটি এবারই প্রথম চাষ করা হলো।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, আগে আমন মৌসুম শেষে মাঠের জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। সেই জমিতে এখন সর্ষে চাষ করা হয়েছে। চাঁদপুরে এ বছর সর্ষে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৮শ’ ৭ হেক্টর। তার মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৪শ’ ৫০ হেক্টর, মতলব উত্তরে ১৫০০ হেক্টর, মতলব দক্ষিণে ২ হাজার ৫শ’ ৬৫ হেক্টর, হাজীগঞ্জে ৫শ’ ৩০ হেক্টর, শাহরাস্তিতে ১শ’ ৭৪ হেক্টর, কচুয়ায় ৪ শ’ ৬৭ হেক্টর, ফরিদগঞ্জে ১ শ’ ৯৫ হেক্টর ও হাইমচরে ২ শ’ ১৫ হেক্টর আবাদ হয়েছে।
রাজরাশ্বের কৃষক জয়নাল মিয়া এবার চার বিঘা জমিতে সর্ষের আবাদ করেছেন। অপর একজন বলেন, এইবার দুই বিঘা জমিতে সর্ষে দিছি। আশা করি, অনেক ভালো ফলন পামু। আমাগো দেহাদেহি আগামীতে এই এলাকার অনেক কৃষক সর্ষে আবাদ করার মনস্থির করছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চাঁদপুরের কৃষকেরা আগে সর্ষের আবাদ করতেন কম। বছর পাঁচেক ধরে এই ফসলের আবাদ বাড়ছে। সর্ষে আবাদে উৎসাহ ও উদ্বুদ্ধ করতে বৃহস্পতিবার দুপুরে আশিকাঠি ইউনিয়নের আমানুল্লাহপুর গ্রামে আয়োজন করা হয়েছিল মাঠ দিবস।
কৃষি অফিস জানায়, ‘সর্ষে থেকে উৎপাদিত তেল অত্যন্ত নিরাপদ। অথচ আমরা ভোজ্যতেল হিসেবে বেশি ব্যবহার করছি সয়াবিন, যা সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। দেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ভোজ্যতেল আমদানিতে। তাই সরকারের লক্ষ্য হলো ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে সর্ষের আবাদ বাড়ানো। বিশেষ করে চাঁদপুরে এমন শস্যের নিবিড়তা আনয়নের বিকল্প নেই। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে বিনা জলবায়ুসহিষ্ণু বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো বিনা-৯ ও বিনা-১১, যা আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে চাঁদপুর অঞ্চলে চাষ করা সম্ভব।
বিনা-৯ জাতটি জমি চাষ ছাড়াই আবাদ করা যায়। আমন ধান পাকার ১০ থেকে ২০ দিন আগে জমিতে বীজ ছিটিয়ে (রিলেক্রপ) দিলেই এর অঙ্কুরোদ্গম এবং চারা বড় ও পরিপক্ব হয়। জাতটির জীবনকাল ৮০ থেকে ৮৫ দিন। আর হেক্টরপ্রতি ফলন ২ টন। অন্যদিকে বিনা-১১-এর জীবনকাল ৭৫ থেকে ৮০ দিন এবং জাতটির হেক্টরপ্রতি ফলন ২ টন।