রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪০

শেষ বিকেলের চিঠি

কবির হোসেন মিজি
শেষ বিকেলের চিঠি

অপরূপ এই সুন্দর বিকেলে বর্ষাকে কেউ ডাকছে না। বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। এত সুন্দর ফুল ফোটা আর পাখি ডাকা বিকেলেও বর্ষার মুখে এক ফোটা হাসি নেই। মলিন মুখে তাকিয়ে আছে বাগানের গোলাপটার পানে। প্রজাপতিটা উড়ে উড়ে কতো আদরের পরশ দিয়ে গোলাপটাকে তার বুকে জড়িয়ে নিলো। অথচ এই মনোরম সুন্দর বিকেলে বর্ষাকে কেউ ভালোবাসার পরশে বুকে টেনে নেয়নি। খাঁচার ভেতর ময়নাটা ঘুরে ঘুরে বলছে বর্ষা আপু কী হয়েছে তোমার? কী ভাবছো এমন করে? মন খারাপ করো না। শ্রাবণ ভাইয়া আসবে, কাল যে বাংলা নববর্ষ। তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। বর্ষা ধমকের সুরে মায়নাটাকে বলল, তুই চুপ করবি? চুপ হয়ে যায় ময়না।

বর্ষার আজ কিছুই ভালো লাগছে না, বার বার মনে পড়ছে তার একান্ত প্রিয় ভালোবাসার মানুষ শ্রাবণের কথা। বর্ষা যে শ্রাবণকে কতটুকু ভালোবাসে তা ব্যাখ্যা দেয়ার মতো কিছু জানা নেই। তবুও বলতে হয়, সূর্য ছাড়া যেমন পৃথিবী অন্ধকার হয়তো তেমনি শ্রাবণ ছাড়াও বর্ষার জীবন অন্ধকার।

প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে কলেজ ক্যাম্পাসে বর্ষা আর শ্রাবণের হৃদয়ের আদান-প্রদান হয়েছিলো। দুজন দুজনকে খুব পছন্দ করে। তেমনি ভীষণ রকম ভালোবাসে। একদিন শ্রাবণ তার ভালোবাসার মানুষটাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বর্ষাকে বললো, বর্ষা আমি যদি কখনো তোমার অজান্তে তোমার আগেই মরে যাই তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পারবে তো। মৃত্যুর কথাটা মুখে নিতেই শ্রাবণের মুখে হাত চেপে ধরলো বর্ষা। দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে বললো, এমন অলক্ষনে কথা মুখে নিও না শ্রাবণ। আমি কখনোই তোমাকে হারাতে চাই না। তোমাকে হারানোর আগেই যেনো আমার মৃত্যু হয়।

বর্ষার মুখে কথাটা শুনতেই শ্রাবণ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বর্ষাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এভাবেই তাদের দুজনের ভালোবাসাটা অনেক গভীর হয়ে উঠে। মাঝে মাঝে দেখা হয়, কথা হয়। মন চাইলে তারা পার্কে ঘুরে বেড়াতে যান।

গত এক সপ্তাহ ধরে শ্রাবণ কলেজে আসছে না। বর্ষার সঙ্গে কোনো দেখা এবং কথা নেই। আগামীকাল কলেজে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বর্ষারও যে খুব ইচ্ছে করছে সেই বসন্ত উৎসবে প্রকৃতির ছোঁয়ায় নিজেদের রাঙিয়ে তুলতে। বর্ষার হয়তো সেই অনুষ্ঠানে যাওয়া হবে না। নানা কিছু ভাবতে কখন যে গড়িতে দশটা বেজে গেছে টেরই পায়নি বর্ষা।

-পরদিন সকালে বর্ষার বাসায় বান্ধুবীদের আগমন। কি রে বর্ষা কেমন আছিস তুই?

-ভালো নেই রে।

-তাহলে চল এই বৈশাখী দুপুরে সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসি।

-না রে ঋতু আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।

-কেন কী হয়েছে তোর?

-না তেমন কিছুই হয়নি।

-তাহলে চল সবাই একসঙ্গে ঘুরে তারপর কলেজের অনুষ্ঠান দেখব।

বান্ধবীদের অনুরোধে বর্ষা আর ঘরে বসে থাকতে পারল না। অনেক বলাবলির পর বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে বের হলো বর্ষা। বছরের এই শুভক্ষণে বর্ষারও যে খুব ইচ্ছে করছে শ্রাবণের সঙ্গে ঘুরতে। কিন্তু শ্রাবণ এখন কোথায় আছে, কেমন আছে, বর্ষা তার কিছুই জানে না। বর্ষা এমন কাউকে পাচ্ছে না যে শ্রাবণের একটু খোঁজ নিবে। কলেজের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ করে সব বান্ধবী চলে গেলো যার যার আপন ঠিকানায়। সেই সঙ্গে বর্ষাও চলে এলো বাসায়। ঘরে ঢুকে বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে বর্ষা।

আজকের বিকেলটা কেমন জানি নির্জন। মনে হচ্ছে তার কাছে। বাগানের ফুলগুলো কেমন যেনো নীরব হয়ে আছে, গাছের ডালে বসে সেই বউ কথা কও পাখিটা ও ডাকছে না। হঠাৎ পোস্টম্যানের কণ্ঠে সম্বিত ফিরে পায় বর্ষা। -বাসায় কেউ আছেন?

চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে বর্ষা। দরজার সিটকিনি খুলতেই পোস্টম্যান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো-আপা আপনার চিঠি।

খামের ওপর শ্রাবণের নামটি দেখেই খুশিতে আত্মহারা। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে খুব কৌতূহল নিয়ে খামের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করে ভাঁজ খুলে পড়তে লাগলোÑ

প্রিয় বর্ষা, আমার এ লেখা যখন তোমার হাতে দিয়ে পৌঁছাবে তখন হয়তো এই সুন্দর পৃথিবীতে আমি আর থাকবো না। কারণ ক্যান্সার নামক মরণব্যাধিটি আমাকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে ফেলেছে। ডাক্তারের রিপোর্টে আমার জীবনের সময় মাত্র পাঁচদিন। তাই তোমাকে জানানোর মতো সেই সময়টুকুও আমার কাছে ছিলো না। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে এলাম। বিশ্বাস করো বর্ষা আমি তোমাকে ঠকাতে চাইনি। বড় আশা ছিল তোমাকে নিয়ে একটি সুন্দর সুখের নীড় বাঁধবো। কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমার সেই সুখের নীড় বাঁধা হলো না। বিধাতা যে আমাকে এত তাড়াতাড়ি ওপারে ডাক দেবে একথা কখনোই ভাবিনি। প্লিজ বর্ষা আমার এই চিঠি পড়ে তুমি এক ফোঁটা জলও ফেলবে না। নিজের অজান্তে যদি কখনো তোমার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা করে দিও। ইতি তোমারই প্রিয় শ্রাবণ।

চিঠিটা পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো বর্ষা। তার মুখে কোনো ভাষা নেই, শুধু কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বুকে জমাট বাঁধা কষ্টগুলো। দিন, সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে আবার ফিরে এলো নতুন বছর, নতুন বৈশাখ, শুধু একবারও ফিরে আসেনি বর্ষার ভালোবাসার শ্রাবণ। আর কোনদিন আসবেও না। বৈশাখের এই প্রথম দিনে বর্ষার খুব বেশি মনে পড়ছে শ্রাবণের কথা। তাই শ্রাবণের দেওয়া শেষ স্মৃতিটুকু সেই শেষ বিকেলের চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো...।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়