প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৩
লেখকের মুখোমুখি : আরিফুল ইসলাম শান্ত
প্রেম ও যাপনের অনুভব থেকে কবিতায় ডুবে থাকি

কবি ও সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম শান্তের জন্ম চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। বাবা নজরুল ইসলাম, মা অনজুমা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্কুলজীবন থেকেই কবিতার সঙ্গে প্রেম। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিকে তাঁর শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে সাপ্তাহিক পাঠক সংবাদ-এর নির্বাহী সম্পাদক এবং দৈনিক প্রিয় চাঁদপুর পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। মতলব প্রেসক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২০ সালে করোনাকালে বাবার নামে ‘নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি সে সময় করোনাক্রান্তদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করেছে। এবারের বইমেলায় এসেছে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মৌন বৃক্ষের রাত্রিদিন’।
আরিফুল ইসলাম শান্ত চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সদস্য। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। আজ তার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলো।
কীভাবে কবিতা লেখা শুরু হলো?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : আমার কবিতা লেখার রসদ প্রেম। স্কুলজীবন থেকেই কবিতার সঙ্গে প্রেম। প্রেম ও যাপনের অনুভব থেকে কবিতায় ডুবে থাকি।
কবিতা কেন লিখেন?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : পড়তে আমার ভালো লাগি। নিজেও সামান্য লিখি। আগে খবরের কাগজ পড়ার বেশ আগ্রহ ছিল। সেখানেই পড়তাম ছোটদের ছড়া ও কবিতা। তারপর কবিতার বই। এছাড়া কবিতা আবৃত্তির প্রতি মনোনিবেশ ছিলো। বহু পুরস্কারও পেয়েছি। সবই ছিল অন্যের লেখা কবিতা। এক সময় মনে হলো যদি হয় স্বরচিত কবিতা বেশ হবে। মূলত আত্মতৃপ্তির জন্য লিখি।
কী কী বিষয়/ঘটনা আপনার কবিতাকে প্রভাবিত করতে পারে?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : আমি বলবো, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক যাপিত জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে মনের মধ্যে শব্দের আবাদ হয়। সেই শব্দ গাঁথুনিতেই কবিতা বা সমসাময়িক লেখা নির্মাণ হয়।
এ বছর প্রকাশিত আপনার কাব্যগ্রন্থের উপজীব্য বিষয় কী?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : ‘মৌন বৃক্ষের রাত্রিদিন’ আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রেম-বিরহ, বিদ্রোহ, বিপ্লব ও আধ্যাত্ম্যসহ বিচিত্র কবিতার সম্মিলন হয়েছে। আশা করছি, কবিতায় পাঠকরা নিজস্ব চিন্তার খোরাক পাবেন।
আপনার প্রিয় কবিদের সম্পর্কে বলুন।
আরিফুল ইসলাম শান্ত : অনেক কবির নির্মাণশৈলী আমাকে আকৃষ্ট করে। তাঁদের উপজীব্য বিষয় আমাকে ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। ফলে বারবার চেষ্টা করছি কিছু শব্দ তৈরি/নির্মাণ করতে। অনেকেই আমার প্রিয়। চাঁদপুরসহ দেশের কয়েকজন কবি প্রতি আমার নিরন্তর শ্রদ্ধা রয়েছে।
তরুণদের কোন পাঁচটি কবিতার বই পড়ার পরামর্শ দেবেন?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : যাঁর লেখালেখি করেন, তাঁদের বই পড়ার বিকল্প নেই। যে যত বেশি পড়বে তার শব্দভাণ্ডার তত শক্তিমান হবে। আমি ক্লাসিক বই পড়ার অনুরোধ জানাবো। সেটি একটি বা একশটি হলেও।
সাহিত্য কি সত্যিকার অর্থেই সমাজ বদলাতে পারে?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : পারে। সাহিত্যের ঝাণ্ডা উড়িয়ে বহু কবি সাহিত্যিকরাই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে এখনো বেঁচে আছেন। তাদের অন্যতম রবীন্দ্রনাথ। নজরুলের কবিতা সমাজকে প্রভাবিত করেছে। অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেছে। এমন লেখকের সংখ্যা কম নয়।
লেখক সম্মানী পান? এ বিষয়ে কিছু বলুন।
আরিফুল ইসলাম শান্ত : লেখক হিসেবে সম্মানী পেয়েছি। তবে তার পরিমাণ খুবই কম। আমার বোধহয় লেখকরা সম্মানী পাওয়ার আশায় লেখে না। তবে সম্মানী পেলে ভালো লাগে।
সাহিত্যের পাঠক বৃদ্ধি করতে আপনার পক্ষ থেকে কী কী ভূমিকা রেখেছেন?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : বর্তমান সময়ে মোবাইল-ইন্টারনেটে তরুণরা আসক্ত। তাদের বইমুখী করতে সাহিত্য আড্ডা, বই পাঠচক্র আয়োজন করা প্রয়োজন। বইপ্রেমী কিন্তু বই কেনার সামর্থ্য নেই এমন পাঠকের বই উপহার দেয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা। সেই স্বপ্ন সফল হলে সাহিত্যের পাঠক বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবো।
২০২৫ সালে সাহিত্য চর্চার বিষয়ে কী কী পরিকল্পনা করেছেন? নতুন কী কী করতে চান?
আরিফুল ইসলাম শান্ত : বইপড়ার বিকল্প নেই। নিজের একটা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ শতাধিক বই সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে চাঁদপুরের প্রায় সকল লেখকের বই আমার সংগ্রহে রয়েছে। আরও কিছু বইয়ের নাম সংগ্রহের তালিকায় রয়েছে। এছাড়া অবসর সময়ে বইপড়া, বই পর্যালোচনার চেষ্টা করবো। অর্থ সংকটে থাকা সৃষ্টিশীল ও প্রতিভাবান লেখকদের পাশে দাঁড়াতে পারলে সাহিত্যের ভাণ্ডার আরও প্রসারিত হবে। আমি সে চেষ্টা করবো।