প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৫
কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ: এক নাম, এক ইতিহাস
![কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ: এক নাম, এক ইতিহাস](/assets/news_photos/2025/02/09/image-58777-1739103737bdjournal.jpg)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটি থেকে উঠে আসা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যাঁর নাম শুনলেই মনে পড়ে সাহস, ত্যাগ আর দেশপ্রেমের এক অনন্য গাথা। কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ—একজন সৈনিক, একজন নেতা, একজন বীর। তাঁর জীবন ছিল কর্মে উদ্যমী, ত্যাগে মহান এবং দেশপ্রেমে উজ্জ্বল। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দুরন্ত, মেধাবী এবং স্বপ্নবান। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন দেশের সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে। ধীরে ধীরে তাঁর মেধা, নেতৃত্বগুণ এবং সাহসিকতা তাঁকে আলাদা করে চিনিয়েছিল।
|আরো খবর
২০০৪ সাল। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কালো ছায়া ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। এই সংকটময় সময়ে সরকার গঠন করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। কর্নেল গুলজার, যাঁর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ছিল অতুলনীয়, তাঁকে এই নতুন বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার এবং পরবর্তীতে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তাঁর নেতৃত্বে র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম এক নতুন মাত্রা পায়। তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং কৌশলী পরিকল্পনায় একের পর এক জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস হয়। জঙ্গিরা বুঝতে শুরু করে, তাদের দিন শেষ হয়ে আসছে।
২০০৬ সালের ২ মার্চ। কর্নেল গুলজার তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। সিলেটের 'সূর্যদিঘল বাড়ি'তে জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমানের আত্মগোপন করার খবর আসে। এই ভয়ঙ্কর জঙ্গিকে গ্রেফতার করা ছিল এক কঠিনতম কাজ। কিন্তু কর্নেল গুলজার পিছপা হননি। তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে অভিযান শুরু করেন এবং শায়খ আবদুর রহমানকে সপরিবারে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এই অভিযানে তাঁর বীরত্ব শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হয়। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ যে কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তা কর্নেল গুলজার তাঁর কাজ দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু তাঁর অবদান শুধু জঙ্গি দমনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। ২০০৯ সালে, যখন তিনি বিডিআরের সিলেট সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন পিলখানায় এক ভয়াবহ বিদ্রোহ হয়। এই বিদ্রোহে অনেক সেনা কর্মকর্তা শহীদ হন। কিন্তু কর্নেল গুলজার তাঁর সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে অনেক জওয়ানকে রক্ষা করেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই বিদ্রোহেই তিনি নিজেও শহীদ হন। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী এই বীর সেনানীকে জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
গুলজার উদ্দিন আহমেদের জীবন ছিল সাহসিকতা, দেশপ্রেম এবং পেশাদারিত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর ত্যাগ এবং অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি শুধু একজন সেনা কর্মকর্তাই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শ, একজন অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনী আমাদের শেখায়, দেশপ্রেম এবং দায়িত্ববোধ কতটা মহান হতে পারে। কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ—এক নাম, এক ইতিহাস, এক অমর গাথা।
লেখক :তথ্য গবেষণা সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা বিএনপি।
ডিসিকে/এমজেডএইচ