প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১১
পৌষ সংক্রান্তি ও আমাদের সংস্কৃতির ইতিবৃত্ত
পৌষ সংক্রান্তি আবহমান বাঙালি জাতির এক চিরায়ত উৎসব। নবান্নের পরে শীত মৌসুমে এত আনন্দের উৎসব আর নেই। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী শীতকে অভিবাদনের এই প্রক্রিয়া পৃথিবীর ইতিহাসে কেবল বাঙালিরাই রপ্ত করেছে! কষ্ট সহিষ্ণু এই জাতি নানা রোগ-শোক ও অভাবের ভেতরেও উৎসববিলাসী। অনেকের শীতের কাপড় নেই তবুও এরা হাসতে হাসতে পৌষের শেষ প্রহরে বরফময় জলে নেমে স্নান করে শরীরের সব জড়তা, জীর্ণতা কাটিয়ে নতুনত্বের অভিনব শক্তিতে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। এটাই বাঙালিত্ব। এজন্যই পৃথিবীতে বাঙালিরা সবচেয়ে আলাদা।
পৌষ সংক্রান্তি মূলত কেবল আনন্দ হৈ চৈ আর পিঠাপুলির উৎসবই নয়Ñএই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য বাঙালি জাতির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে প্রতি বছর নতুনভাবে সামনে নিয়ে আসা। বাঙালির বাঙালিত্ব হৃদয়ে লালন করা। কিন্তু তথাকথিত একটি গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই তুলে পৌষ কিংবা চৈত্র সংক্রান্তির মতো বাঙালির জাতীয় উৎসবকে ঘিরে নানা বিতর্ক উসকে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের উৎসবে পরিণত করতে চাইছে! যা কখনোই কাম্য নয়।
পৃথিবীর সবদেশে সব জাতিরই নিজস্ব কিছু কৃষ্টি কালচার বা সংস্কৃতি রয়েছে। তারা নিজেদের মতো করে তা পালন করে। আর এটাই জাতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চিরায়ত কৌশল! আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ধর্ম আর সংস্কৃতি এক জিনিস নয়! একটি নির্দিষ্ট জাতিতে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকতেই পারে কিন্তু সংস্কৃতি কখনোই আলাদা হতে পারে না। যদি আমরা সম্মিলিতভাবে এই বোধটুকু হৃদয়ে জাগ্রত করতে না পারি তাহলে কোনো একদিন শুধু আমাদের সংস্কৃতিই নয়, আমরা যে বাঙালি তার বাঙালিত্ব শত চেষ্টা করেও কোথাও খুঁজে পাবো না! আসুন, রাষ্ট্রের আপামরসাধারণ এক হই। ধর্মীয় বিভেদ ভুলে আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করি। বিশ্ব জানুক, কৃষ্টি কালচারে বাঙালিরা আদতেই আলাদা জাতি!