রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৯

নীল সাগরের ঢেউ

ডি. এম. ফয়সাল
নীল সাগরের ঢেউ

প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য আর বিস্তৃত জলরাশির সুসজ্জিত কারুকার্যময় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপার বেলাভূমির নাম কক্সবাজার। যা পৃথিবীর সবচেয়ে সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে হিমালয়ের মূল ঘেরা হিমছড়ি পাহাড়ের কোল ঘেঁষা উত্তাল জলরাশির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুবিশাল পাহাড়ি দ্বীপ, নাম তার মহেশখালী। এখানের নিবিড় শ্যামলীমা, চোখ জুড়ানো নিসর্গ পাহাড় ছুঁয়ে মেঘমালার উড়ে চলা। বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর, প্রবাল দ্বীপ আর পাহাড়ের এক অপূর্ব মিলনমেলা।

পৃথিবীর বৃহৎ সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্য ডোবা, দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ, ইনানীর লাল কাঁকড়া, সমুদ্রের কোল থেকে ভেসে আসা ঝিনুক আর ঢেউয়ের মেলা, সবুজের মাখামাখি ঝাউবন আর দ্বীপবাসী মানুষের জীবন সংগ্রাম এই সবকিছু নিজ চোখে দেখার স্বপ্ন ছিল অনেক দিনের। অবশেষে আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ প্রাণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষা সফর ছিলো এটি। স্নাতক তৃতীয় বর্ষের স্পেসিমেন সংগ্রহ এবং তার প্রতিবেদন তৈরির জন্য শিক্ষকদের পরামর্শক্রমে আমরা কক্সবাজার যাওয়ার প্রস্তুতি নিই আমরা। আমাদের এই সফরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মিলে মোট ৩৩ জন ছিলাম। স্থানীয় সময় রাত দশটায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ গেট থেকে আমরা রিজার্ভ বাস নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হই এবং ঠিক সকাল সাতটায় আমরা ডলফিন মোড়ে পৌঁছাই। আগে থেকে বুকিং করা হোটেলে আমরা এগারোটার পূর্বে ঢুকতে পারবো না। তাই ব্যাগগুলো হোটেলের নিচে একটি কোণায় রেখে আমরা চললাম ফিশারি ঘাটের দিকে। ওখানে গিয়েই দেখি আল্লাহর নানান সৃষ্টি সামুদ্রিক মাছের সমাহার। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অক্টোপাস, স্কুইড, লভস্টার, চিংড়ি, কোরাল, ছুরি, টর্পেডোসহ নানা সামুদ্রিক জীব। বইতে পড়া মাছগুলো এখন চাক্ষুষ দেখে এক একজন আনন্দে আত্মহারা। কিছু নমুনা আমরা সংগ্রহ করি কলেজের ল্যাবরেটরিতে সংগ্রহের জন্য।

এরপর নাজির স্যার বললো, ‘কক্সবাজার আসলা, বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপে যাবা না তা কি করে হয়!’

কয়েকজনের সাথে পরামর্শ করে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিই আমরা মহেশখালীতে যাব। দুটি স্পিড বোট রিজার্ভ করে উত্তাল লবণাক্ত সমুদ্রের বুক চিরে আমরা রওনা দিলাম পাহাড়ি দ্বীপের পথে। প্রথমবার সবার স্পিডবোটে ভ্রমণ, সমুদ্রে বড় বড় ঢেউয়ে আছড়ে পড়ায় চিৎকার দিয়ে উঠি এই বুঝি জীবন শেষ! সাথে থাকা সালমা, খেয়া, অর্পির চোখ দিয়ে টলমল পানি। আমি বললাম, ‘ধৈর্য ধরো, আর অল্প একটু’। এরপর আমরা ঠিক সাড়ে ১১টায় পাহাড়ি দ্বীপে পৌঁছলাম। রাস্তার দুপাশে গাছের মেলা, সারি সারি লবণের জার পেরিয়ে আমরা চললাম পাহাড় আর মন্দিরের পথে। মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে থাকা মৈনাথ পাহাড় আর আদিনাথ মন্দির দর্শন শেষে আমরা ঠিক ১২টায় হোটেলে পৌঁছি। তড়িঘড়ি করে রওনা দিই সমুদ্র তীরে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এক প্রাকৃতিক জলরাশি। যার কোনো প্রান্ত বিন্দু নেই। শোঁ শোঁ বাতাসের আর ঢেউয়ের আওয়াজ। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর স্বর্গ। খেলাধুলা আর গোসল শেষে আমরা হোটেলে ফিরে দুপুরের খাবার খাই। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রামের পর আমরা চলে যাই সূর্যাস্ত দেখতে। আদূরেই থাকা দুটি বেঞ্চ নিয়ে আমরা শুরু করে দেই গানের আড্ডা। স্যার ছিলেন আমাদের প্রধান আকর্ষণ। স্যারের সাথে রিয়া খেয়া জুবায়ের আর আমি সুর মিলাতে থাকি। এরপর সকলে মিলে কোরাল ফ্রাই খেতে আল-গনিতে যাই। সেখান থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সকলেই ঘুমিয়ে পড়ি।

পরদিন ভোর তখন পাঁচটা। আমরা চলে যাই সৈকতের সকালের হাওয়া আর সূর্যোদয়ের অপার দৃশ্য দেখতে। কিছুক্ষণ সমুদ্র সৈকতে থাকার পর আমরা তিনটি চান্দের গাড়ি ভাড়া নিয়ে রওনা হই মেরিন ড্রাইভে। পাটুয়ার টেকে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা সমুদ্রের পাড়ে কিছুক্ষণ সময় কাটাই। কুড়িয়ে নিই সামুদ্রিক শামুক, ঝিনুক এবং প্রবাল। এরপর ইনানী এবং ঝাউবন হয়ে আমরা হিমছড়ি পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই। প্রায় ২৪০ সিঁড়ি বেয়ে আমরা হিমছড়ির চূড়ায় পৌঁছাই। সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা সূর্য ডোবার সেই মহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছিলাম। সূর্যটা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে পশ্চিম আকাশে অস্ত গেল। আহা মনজুড়ানো ডুবন্ত সূর্যের দৃশ্য! এরপর আমরা সেখান থেকে রওনা হয়ে সমুদ্র সৈকতে ফিরি। সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই কিছু কেনাকাটা করি। হোটেলে ফিরে র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠান শুরু করি। এখানে একটা কাকতালীয় বিষয় হচ্ছে র‌্যাফেল ড্রয়ের পনেরোটা পুরস্কারের মধ্যে আমাদের প্রিয় স্যার একাধারে চারটি পুরস্কার পেয়ে যায়, যা ছিল বেশ আনন্দদায়ক। এরপর সব কিছু গুছিয়ে আমরা রাত ১১টায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিই এবং সকাল আটটায় পৌঁছাই।

১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে প্রাচীন ঐতিহ্য এবং দর্শনীয় স্থানের কারণে প্রতি বছর কক্সবাজারে ছুটে আসেন আমার মতো আরও বিপুল সংখ্যক পর্যটক। কক্সবাজারের এই ভ্রমণ আমার জীবনে একটি চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এখানের নীল সাগড়ের ঢেউ, প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য, মহেশখালি পাহাড়ি দ্বীপ, সমুদ্রের লাল কাকড়া, প্রবাল, লবণ চাষ, পড়ন্ত বিকেলের সূর্য ডোবা সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্তই আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে, যা আমাকে সবসময় আনন্দে ভরিয়ে রাখবে।আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় চির অম্লান হয়ে থাকবে।

ডি.এম ফয়সাল : প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়