রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৬

বিরাণ পৃথিবীর অভিমুখে

জাকির আলম
বিরাণ পৃথিবীর অভিমুখে

জন্মের পর থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছি মৃত্যুর নমনীয়তায়। একটু সুখের আশায় ঘুরে দাঁড়িয়েছি ফেরারি পথের বাঁকে। ভরা নদীতে সাঁতার কেটে ভেসে গেছি সমুদ্রের নোনা জলে। জোছনা রাতের বেমালুম সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে দৃষ্টির আরণ্যকে হারিয়ে গেছি অমানিশার ঘোর অন্ধকারে। ওড়ন্ত বলাকার পালক খুঁজে ঝরা পাতার মর্মর শব্দে কুঁচকে গেছি স্যাঁতসেঁতে মৃত্তিকার আবর্তনে। দিন থেকে রাতের ঘূর্ণায়মান পরিসীমার দৃষ্টিকোণ থেকে সংকীর্ণ জীবনের পরাবাস্তব কাহিনি লিখতে লিখতে হাপিত্যেশ আমি ঘোরের ভেতর। ফাগুনের রাতে পলাশ ফুলের সুবাসিত সমীরণে বিভোর নিঃসঙ্গতার মাঝে। শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ির পাশে পুকুরজলে পদ্মপাতার সৌকর্যে তাকিয়ে থাকি পালবাড়ির উদ্বাস্তু আঙ্গিনায়।

প্রথম ভালো লাগা মানুষের স্বপ্নে গা ভাসিয়ে যে কষ্ট পেয়েছিলাম, সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। যাকে বিশ্বাস করে জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছিলাম, তার প্রায়শ্চিত্ত জ্বলন্ত অঙ্গারের চেয়ে বেশি ভয়ানক। মাঝরাতে ঘুমের বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে করতে চোখের জলে ভিজে যায় শিথানের বালিশ। বুকের বাঁ পাশের ব্যথা জেগে উঠে যন্ত্রণার আগুনে ক্রমাগত জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাই। শারীরিক অক্ষমতায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি প্রকৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে।

মানুষের কটু কথা শুনতে শুনতে শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসছে। বিশ্বাস শব্দটি উঠে গেছে পৃথিবীর বুক থেকে। আজকাল মানুষ হয়েছে মানুষের চরম শত্রু। যেদিকে তাকাই, হিংস্রতার ভয়াবহতা গিলে খাচ্ছে মানবিক বোধকে। ফসলি জমিতে রাসায়নিক সারের তীব্র বিষের খাদ্য খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে মানুষ। পশুপাখির উড়ে চলার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে শখের বশে খাঁচায় পুষে বিলাসিতায় কাটিয়ে দিচ্ছে উচ্চবিত্ত মানুষেরা। জলের পোনামাছগুলো ধ্বংস করায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে কত না মানুষ। আজকাল মানুষ হানাহানিতে লিপ্ত। কেউ কারও ভালো দেখতে পারে না। কাকে মেরে কে ওপরে উঠবে, সেই নগ্ন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

বিশ্বাস করে যাকে বুকে ঠাঁই দিয়েছিলাম, সে-ই হৃদয়ে তুলে দিয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। কথা ছিল অগণিত মৃত্যুকে জয় করে সুখে-দুঃখে একসঙ্গে বেঁচে থাকব। কত স্বপ্ন ছিল হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে ঘিরে। প্রকৃতির নিয়মে দিন শেষে রাত আসে, রাত শেষে দিন আসে। সন্ধ্যা হলেই নীড়ে ফিরে আসে জোট বেঁধে পাখির দল। সেই আনন্দে কিচিরমিচির করে পুনর্বার একত্র হওয়ার সমাগমে।

মানুষ হয়ে জন্মেছিলাম বলে সীমাবদ্ধতার গণ্ডিতে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা আমি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। যেখানে মৃত্যু অবধারিত। আমাকে কষ্ট দিয়ে যে মানুষ সুখী হয়েছে, তার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। নিজের কাছে নিজেই অপরাধী হয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্তসমেত ভোগ করছি দহনে পোড়া যন্ত্রণার মধ্যে। পায়ের অতলে জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখার সমুদ্রে হেঁটে চলেছি মৃত্যুর যন্ত্রণায়। একপেয়ালা পানির পিপাসায় পিপাসিত হয়ে কাঠফাটা রোদে অনবরত আর্তনাদ করে গেলেও মানবিক তাড়নায় এগিয়ে আসেনি কেউ। সীমাবদ্ধতার নিগড়ে আপাদমস্তক বেঁধে কেউ একজন হাতুড়ি পেটাচ্ছে শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায়। গলন্ত সিসার প্রলেপ বুকে ঢেলে হিংস্রতায় আঘাত করছে প্রতিনিয়ত। এমন পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার ইচ্ছাগুলো মরে গেছে চরম অসহায়ত্বে। মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে একদিন ঘুমিয়ে যাব প্রকৃতির ক্যানভাসে। সেদিন কেউ আমার সমাধির পাশে বসে দুফোঁটা জলে চোখ ভেজাবে না। নীরবতার মধ্যেই প্রত্যাবর্তন হবে আমার। সেদিন আমার শোকাবহ আত্মা ক্রন্দনে ডুবে যাবে বন্দনার তরিতে। শূন্য হাতে এসেছিলোম, আবার শূন্য হাতেই ফিরে যাব বিরাণ পৃথিবীর অভিমুখে। কেউ আমার অপেক্ষায় থেকে জড়াবে না শোকের মাঝে।

পৃথিবীর বুকে আমি এক নির্বস্তুক প্রাণী যাকে ভালোবাসার মতো কেউ নেই। কোনো দিন কারও প্রিয়জন হতে পারিনি। যাকেই প্রিয়জন ভাবতে গিয়েছি, সে-ই দিয়েছে ব্যথাভরা যন্ত্রণার পাহাড়। শেষ যাকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছি, তার কাছেও চরমভাবে অবহেলিত ছিলাম। কোনো দিন ভালোবাসা পাইনি। বরং তার দুর্ব্যবহারে বারবার আঘাত পেয়েছি কলিজার ভেতর। ভালোবেসে যতই কাছে যেতে চাইতাম, সে ততই হিংস্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত। যেদিন তার বিয়ে হলো, সেদিন ছিল ডিসেম্বরের সতেরো তারিখ, শুক্রবার। আমাকে কাঁদিয়ে সেদিন তার মনে যে উচ্ছ্বাস দেখেছিলাম, তা মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছিলে। একটিবারের জন্যও আমার প্রতি তার মনে কোনো প্রবৃত্তি জাগেনি। নতুন মানুষের হাত ধরে হাসিমুখে বিদায় নিয়েছে।

তাকে পাওয়ার জন্য কত না কষ্ট করেছি! অথচ আমার ভালোবাসাকে সে পদাঘাত করে ছুড়ে দিয়েছে ব্যর্থতার আগুনে। জীবনের প্রান্তিক সময় পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করেছি। পথ চেয়ে ভালোবাসার অর্ঘ সাজিয়েছি। তার নামে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালিয়ে আরাধনায় লিপ্ত থেকেছি। এত ভালোবাসার পরও আমি তার প্রিয়জন হতে পারিনি। যখন তার দিন কাটে চরম সুখের আবহে, তখন আমি শোকার্ত আর্তনাদে নুয়ে পড়ি উদ্বাস্তু মৃত্তিকার বুকে। তবু একটু সহানুভূতি জাগেনি আমার প্রতি। এত কিছু উপেক্ষা করেও সে কোনো দিন ফিরে আসেনি। শুনেছি বিয়ের দুবছরের মাথায় সে নাকি কন্যাসন্তানের মা হয়েছে। স্বর্গের চেয়ে সুখের মধ্যে তার বসবাস। কানায় কানায় পরিপূর্ণ জীবনের অস্থিমজ্জা। তাকে ছুঁতে পারিনি আমার ভালোবাসা দিয়ে। সে অন্যকে পেয়ে সুখী। অন্যকে পেয়ে ভুলে গেছে আমার অস্তিত্ব। সেই কষ্ট বুকে ধারণ করে আমিও চলে গেলাম বিরাণ পৃথিবীর অভিমুখে। সে ভালো থাকুক প্রিয় মানুষের কাছে। আমি দূর থেকেই দেখে যাব তার জীবনে সুখের প্রতিচ্ছবি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়