প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯
নীলগিরির পথে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ রাতে ঠিক হলো, নীলগিরি যাবোÑবান্দরবানের একটি মনোমুগ্ধকর পর্যটনকেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২২০০ ফুট। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পাহাড়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এখানে মেঘ ছোঁয়া যায়।
সারারাত ঘুম এলো না। মেঘ ছুঁয়ে মন ভরানোর প্রতীক্ষায় সময় কাটলো।
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সকালেই সবাই প্রস্তুত হলাম। এটি ছিল একটি পারিবারিক ভ্রমণÑবাবা, মা ও খালামনির সঙ্গে। সকাল ছয়টায় চান্দের গাড়িতে চেপে যাত্রা শুরু করলাম। প্রথমে সুয়ালক থেকে বান্দরবান জেলা শহর।
সেখান থেকে নীলগিরির পথে রওনা দিলাম। পথে শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি ও চিম্বুক পাহাড় দেখার সৌভাগ্য হলো। শৈলপ্রপাতের স্রোতের শব্দ যেন মনকে হারিয়ে যেতে বলছিল।
আগের রাতের বৃষ্টিতে মেঘ নেমে এসেছিল। ভোরের আলোয় মিলনছড়ি পয়েন্ট থেকে সাঙ্গু নদীর উপর ভেসে থাকা মেঘের দৃশ্য ছিল অপূর্ব।
চিম্বুক পাহাড়ে পৌঁছে কালো মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ দেখে মুগ্ধ হলাম। সৃষ্টিকর্তার এমন সৌন্দর্য মনকে ভরে দিলো।
এরপর আর্মি চেকপোস্ট পার হয়ে সোজা নীলগিরির পথে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার চারপাশের দৃশ্য ছিল মনোমুগ্ধকর। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল পাহাড়ে ছায়া ফেলা মেঘ। যতই নীলগিরির কাছে যাচ্ছিলাম, সাদা মেঘ যেন হাতছানি দিচ্ছিল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মনে হচ্ছিল, এই পথ যেন শেষ না হয়।
পথে আনারস চাষ, লেবু ও আমের বাগান এবং পাহাড়ি জুম চাষ দেখতে পেলাম। পাহাড়িদের পরিশ্রমী জীবনযাপন ও জুম ঘরগুলো ছিল চমকপ্রদ।
নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছে প্রথমেই চোখে পড়লো কারুকাজময় দেয়াল, যেখানে পাহাড়িদের জীবনযাত্রার চিত্র ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ, বান্দরবান জেলার মানচিত্র, একটি হ্যালিপ্যাড এবং সাইকাস গাছের দেখা পেলাম।
মেঘ ছুঁয়ে দেখার প্রথম অনুভূতি ছিল অসাধারণ, যেন স্বর্গীয় সুখ।
দুপুর পর্যন্ত থেকে খাবার খেয়ে বান্দরবান শহরের পথে রওনা হলাম।
পরবর্তী গন্তব্য ছিল নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র, যা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুট উঁচু এই পাহাড় থেকে পুরো বান্দরবান শহর এবং পরিষ্কার আকাশে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত দেখা যায়।
সেখানে সুন্দর রিসোর্ট, পাহাড়ি হাতের কাজের চাদর ও ব্যাগ এবং তাজা ফল যেমন আনারস, কলা, পেঁপে পাওয়া গেল। ঘুরেফিরে আবার সুয়ালকে ফিরে আসলাম।
এই ভ্রমণের স্মৃতি কখনো ভুলবার নয়। ভ্রমণ আমাদের জ্ঞান বাড়ায়, মনকে প্রশান্তি দেয়।