প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০
তরুণদের কৃষিযন্ত্র কেনায় ঋণ দিলে তাদের বেকারত্ব ঘুচতে পারে : সুব্রত রঞ্জন
কৃষিকণ্ঠ : কৃষির যান্ত্রিকীকরণে এসিআই মোটরস কোন্ অবস্থানে আছে?
|আরো খবর
সুব্রত রঞ্জন : আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। এখন কৃষিযন্ত্রের বাজারে আমাদের হিস্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশের তিন ভাগের এক ভাগ কৃষিজমি চাষ হয় এসিআইয়ের ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারের মতো চাষের যন্ত্র দিয়ে। হারভেস্টর, কম্বাইন্ড হারভেস্টর, ট্রান্সপ্ল্যান্টার-এগুলো এসিআইয়ের হাত ধরে বাংলাদেশে এসেছে। বৈশি^কভাবেই এসিআই কৃষিযন্ত্র সরবরাহে একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান।
কৃষিকণ্ঠ : সরবরাহের পরবর্তী সেবা বা আফটার সেলস সার্ভিসের বিষয়টিও জরুরি। এ ক্ষেত্রে আপনারা কী করছেন?
সুব্রত রঞ্জন : কৃষিযন্ত্র বিক্রির পরে মেরামত-সেবা খুবই জরুরি। কৃষিযন্ত্র যদি মাঠে নষ্ট হয়, তাহলে মাঠে গিয়েই সেবা দিতে হয়। অথবা মাঠের আশপাশে সেবাকেন্দ্র থাকতে হয়। আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছয় ঘণ্টার মধ্যে বাড়িতে গিয়ে সেবা দিই। ৮৫ শতাংশ ঘটনায় আমরা ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেবা দিতে সফল হই।
কৃষিকণ্ঠ : বাংলাদেশ কোন্ পর্যায়ে আছে?
সুব্রত রঞ্জন : বাংলাদেশ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। জমি চাষে যন্ত্রের ব্যবহারে আমরা এগিয়ে। বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ জমি এখন যন্ত্র দিয়ে চাষ হয়। বাকি ক্ষেত্রে মাত্র শুরু হলো। বাংলাদেশে যেহেতু মাথাপিছু আয় বাড়ছে, সেহেতু যান্ত্রিকীকরণ বাড়তেই থাকবে।
কৃষিকণ্ঠ : যান্ত্রিকীকরণে কৃষকের উপকার কী কী? এতে কি উৎপাদন খরচ কমে?
সুব্রত রঞ্জন : কৃষি যন্ত্রপাতি আসলে এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। এর কারণ কৃষিতে শ্রমিক সংকট। ফসল রোপণ ও কাটা সময়মতো করতে হয়। এখন ৪০ শতাংশ শ্রমিক সংকট। তাই যান্ত্রিকীকরণ না হলে কৃষিকাজ করা কঠিন। যন্ত্রের খরচ অনেক কম। তাতে উৎপাদন খরচও কম পড়ে। তরুণদের কৃষিতে আগ্রহী করতে যান্ত্রিকীকরণ জরুরি।
কৃষিকণ্ঠ : বাংলাদেশে জমি ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত। ছোট জমিতে কৃষি যন্ত্রপাতি কতটা কার্যকর?
সুব্রত রঞ্জন : দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১৫ ফুট করে আয়তনের জমিতে এসব কৃষিযন্ত্র কাজ করতে পারে। যারা এসব উদ্ভাবন করে, সেই জাপান ও কোরিয়ায় জমির আকারও ছোট। তারা এটা মাথায় নিয়েই যন্ত্র তৈরি করে। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কৃষকদের মধ্যে সমিতি গড়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের উদাহরণ দেওয়া যায়। সেখানে সরকার বলে দিয়েছে, ন্যূনতম দুই একর জমিতে সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হবে। পানি পেতেও বড় জমি অগ্রাধিকার পায়। এতে কৃষকেরা সমিতি করে ছোট ছোট জমি মিলিয়ে বড় করেছেন।
কৃষিকণ্ঠ : বাংলাদেশে সরকারের কী কী করার আছে বলে আপনার মনে হয়?
সুব্রত রঞ্জন : এ দেশে কৃষিযন্ত্র কেনার জন্য কোনো ঋণের ব্যবস্থা নেই। একটা হারভেস্টরের দাম ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ট্রাক্টর ১০-১৫ লাখ টাকা। রোপণযন্ত্র ৪-৫ লাখ টাকা। এতো দামি যন্ত্র কৃষকের পক্ষে কেনা কঠিন। এ ক্ষেত্রে কম সুদ তো দূরের কথা, ব্যাংকঋণই পাওয়া যায় না।
কৃষিকণ্ঠ : তাহলে কী কী দরকার, শুধু কি ঋণ?
সুব্রত রঞ্জন : কৃষক ও গ্রামীণ উদ্যোক্তারা সাধারণ হারে হলেও ঋণ পেতে চান। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নীতি আছে যে, যান্ত্রিকীকরণে ঋণ দিতে হবে। কিন্তু সেখানে নজরদারি নেই। ভারতে ব্যাংকে নজরদারি করা হয়, ব্যাংকগুলো কত ঋণ দিল, তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা আছে। এতে ব্যাংক কৃষকের পেছনে ছোটে। আরেকটি বিষয় হলো, দেশে এখন প্রচুর তরুণ শিক্ষিত বেকার। তারা কৃষিকাজে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আবার চাকরির বাজার ছোট। এ ক্ষেত্রে তরুণদের কৃষিযন্ত্র কেনায় ঋণ দিলে তাদের বেকারত্ব ঘুচতে পারে। এ ছাড়া যান্ত্রিকীকরণ মানে হলো জীবনযাত্রার মান বাড়ানো। এটা সরকারেরও লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে যারা কাজ করছে, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দিয়ে হলেও উৎসাহ দেয়া উচিত। কৃষককে নানা পুরস্কার দেয়া হয়। কিন্তু গ্রামে যেসব মানুষ যান্ত্রিক সহায়তা দিচ্ছে, তারাও তো স্বীকৃতি পেতে পারে। আমরা কৃষককে প্রচুর টাকা বাকি দিই। এ ধরনের কোম্পানিকে ঋণ দেয়া ও সুদের হারের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে বিবেচনা করা উচিত।
কৃষিকণ্ঠ : সরকার তো কেনায় ভর্তুকি দেয়।
সুব্রত রঞ্জন : কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন যন্ত্রে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়। তবে সংখ্যার দিক দিয়ে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
কৃষিকণ্ঠ : কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে যারা সেবা দেয়, তারা তো কৃষকের কাছ থেকে একটা মূল্য নিয়ে নেয়। কৃষক সমিতি করে, সমিতির মাধ্যমে যন্ত্র কিনে ব্যবহার করে মধ্যস্বত্বভোগীকে দূর করা যায় না?
সুব্রত রঞ্জন : বিভিন্ন দেশে সেটাই হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি নীতি, প্রণোদনা ও পুরস্কারের মাধ্যমে সমিতিকে উৎসাহিত করতে হবে। ইদানীং একটি সমস্যা দেখা দিচ্ছে, কিছু এলাকায় ট্রাক্টর রাস্তায় চলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে জমি চাষ অথবা ফসল নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায় না। নছিমন, করিমনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলছে। সেখানে ট্রাক্টরের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা তো অনেক ভালো।
কৃষিকণ্ঠ : তাহলে আপনি মোটাদাগে কোন্ বিষয়গুলোতে জোর দেবেন?
সুব্রত রঞ্জন : আমি চারটি ক্ষেত্রের কথা বলব। কৃষিযন্ত্র কিনতে ব্যাংকঋণ, এ খাতের প্রতিষ্ঠান ও গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ও স্বীকৃতি, কৃষক সমিতি করে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এগিয়ে নেওয়া এবং ট্রাক্টর রাস্তায় চলতে দেওয়া।
সুব্রত রঞ্জন দাস : নির্বাহী পরিচালক, এসি আই মটরস্।