প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২২
রায়পুরের ১২ শহীদ
কাঠের সেতুতে ১২ জনকে দাঁড় করানো হয়। তারপর গুলি করে হত্যা করা হয় সবাইকে। আর এভাবেই মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের ১২ জন শহীদ হন। পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রামে প্রবেশ করলে এ ১২ শহীদ পালিয়ে বাঁচতে চান; কিন্তু রায়পুর খালের কাঠের সেতু পার হওয়ার আগেই পাকিস্তানিরা তাদের ধরে ফেলে এবং হত্যা করে। তারা সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী।
|আরো খবর
১২ শহীদ হলেনÑপা-ব চন্দ্র দেবনাথ, সুধীর বণিক, শীতল সরকার, শরৎ সরকার, উমেশ সরকার (আড়াই মেম্বরী), ফেলন সরকার, পা-ব সাহা, বিদেশিনী সাহা, কামিনী বালা দেবনাথ, নকুল দেবনাথ, রঞ্জিত সরকার ও অনাথ বন্ধু দেবনাথ।
রায়পুর খাল কালাডুমুর নদীর ছোট্ট একটি শাখা। এ খাল পার হয়ে একটু এগুলেই কালাডুমুর নদী। নদীর ওপার গেলেই নিরাপদ। সেজন্যে রায়পুর গ্রামে পাকিস্তানিরা প্রবেশ করলে গ্রামবাসী দৌড়ে রায়পুর খাল পার হয়ে কালাডুমুর নদী সাঁতরে ওপার চলে যান।
১২ শহীদের হত্যাযজ্ঞ নিজের চোখে দেখেছেন রায়পুরের চৌধুরী বাড়ির মোঃ ওমর ফারুক শিকদার। তার বাড়ি থেকে রায়পুর খালের সেতুটি প্রায় ২০০ মিটার দূরে। তিনি তখন ২১ বছরের তরুণ। সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ওমর ফারুক শিকদার বলেন, দাউদকান্দি উপজেলা সদরে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প ছিলো। সেই ক্যাম্পের ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সশস্ত্র দল রায়পুর গ্রামে আসে মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে। পাকিস্তানিরা ভেবেছে রায়পুরে মুক্তিযোদ্ধারা লুকিয়ে আছেন, তাই তারা গ্রামে হামলা করে। দাউদকান্দি সদরের পাশাপাশি রায়পুর কৈলাশ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়েও পাকিস্তানিদের ক্যাম্প ছিলো। মুক্তিযোদ্ধারা গাছের আড়ালে পালিয়ে থাকতে পারেন এ ভয়ে পাকিস্তানিরা গ্রামের সব বড় গাছ, ঝোপঝাড় কেটে ফেলে। এ হত্যাযজ্ঞের প্রায় আড়াই মাস পর আরও সাত থেকে আটজনের সঙ্গে আমি ভারতের পালাটানা যাই মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। ৩ মাস প্রশিক্ষণ শেষে গ্রামে ফিরে মামার বাড়ি যাই।
জিংলাতলী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কবির ভূঁইয়া বলেন, রায়পুরের এ ১২ শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা স্মৃতিস্তম্ভ করার উদ্যোগ নিয়েছি। শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে।
কৃষি সংগঠক প্রভাষক মতিন সৈকত ও সাংস্কৃতিক কর্মী এসএম মিজান বলেন, রায়পুরের এ ১২ শহীদ আমাদের গর্ব। তাঁদের জন্যেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ হলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।