প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:১৯
ভেসাল, কারেন্ট আর চায়না ছাই জালে বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ
অবৈধ ভেসাল জাল, কারেন্ট জাল,ঝাঁক আর চায়না ছাই জালে বিলুপ্তি হতে চলেছে দেশীয় প্রজাতির সকল মাছ। অবৈধ এসব জাল উচ্ছেদ বা বন্ধে কোন কার্যকর ভূমিকা না থাকার কারনে অবৈধ মাছ ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কারেন্ট জাল আর চায়না ছাই জালে দেশীয় প্রজাতির একদিনের মাছ পর্যন্ত ধরা পড়ার কারনে সাধারন মাছ ব্যাবসায়ীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে।
|আরো খবর
সরজমিনে দেখা যায়, ডাকাদিয়া নদীর হাজীগঞ্জ অংশ, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হাজীগঞ্জের বলাখাল এলাকার খালে, বোয়ালজুরি খাল, ঝমঝমিয়া খালসহ উপজেলার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট খালগুলোতে ভেসাল জাল, ফরত আর কারেন্ট জালে পরিপূর্ন।
এছাড়া ডাকাতিয়া নদীর হাজীগঞ্জ অংশের বিভিন্ন স্থালে কারেন্ট জাল ভেসাল জালের ব্যবহার চলে আসলেও সম্প্রতি সময় চায়না ছাই জালের ব্যবহারের কারনে নদীতে বিচরনকারীর সকল দেশীয় প্রজাতির একদিনের মাছ পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।
উপজেলার খালগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভেসাল জালের পাশে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈর করা ফরতের ব্যবহার করায় ভেসাল জাল থেকে কোন মাছ বাঁচার সুযোগ পাচ্ছে না। আবার একটি ভেজাল জাল থেকে ৫/৭শ মিটার দুরে দুরে ভেজাল জাল থাকার কারনে কোন মাছ বা মাছের পোনা ভেজাল জালের ফাঁদ থেকে বাঁচার কোন সম্ভাবনাই থাকেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাজারের বনিক পট্টির কিছু অসাধু জাল ব্যবসায়ী কারেন্ট জাল,চায়না ছাই জালের পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে থাকে। এদের থেকে খুচরা জাল ব্যবসায়ীরা পাইকারী জাল কিনে বাকিলা,বলাখাল,রামপুর,রাজাগাঁও বাজারে প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল বিক্রি করছে। মূলত এভাবেই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার বেড়ে গেছে।
ডাকাতিয়া নদী পাড়ের বাসিদ্ধা ধেররা গ্রামের বাসিদ্ধ উপজেলা মৎস প্রতিনিধি নির্মল দাস জানান,আমি হাজীগঞ্জ অংশের ডাকাতিয়া নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা দেখাশুনা করার দায়িত্ব পালন বরছি। সম্প্রতি নদীতে চায়না ছাই জালের ব্যবহারের কারনে একদিনে মাছ পর্যন্ত মারা হচ্ছে। প্রতিদিন এমন জাল দিয়ে নদীর মাছ শেষ করে ফেলা হচ্ছে।
ধেররা মাছ বাজারের মৎস চাষী শাহজালাল জানান, প্রতাপপুর ব্রীজের নীচে,ধেররা এলাকার আশপাশে ডাকাতিয়া নদীতে ২৪ ঘন্টাই ছাই জাল পাতা থাকে। এসব জাল বন্ধ না করলে আসছে ১ বছরের মধ্যে ডাকাতিয়ার মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ধেররা গ্রামের ডাকাতিয়া নদী পাড়ের বাসিদ্ধা সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন জানান, যে মাছ এক ঘন্টা আগে জন্মায় সেই মাছের পোনা পর্যন্ত ছাই জালে আটকে পড়ে। এ ছাড়া সকল জলজপ্রানী যেমন কাঁকড়া,সাপ,ব্যাংঙ ধ্বংষকারী ছাই জাল চাঁদপুর পুরান বাজার ও হাজীগঞ্জ বাজারে চায়না ছাই জাল কিনতে পাওয়া যায়।
দেশীয় মাছের মাছে বিলুপ্তির পথে রয়েছে, মলা,ঢেলা, পুঁটি, ট্যাংরা, কৈ, শিং, মাগুর, শোল, বাইম মাছ মারা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাঙ, সাপ, কুচিয়াসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। এমনকি কচ্ছপ ও কাঁকড়া আটকা পড়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, বড় মাছের পাশাপাশি ধরা পড়ছে পাঙাশ, রুই, কাতলসহ বিভিন্ন মাছের পোনাও।
মৎস সপ্তাহ উপলক্ষে সংবাদ সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ওয়ালি উল্যাহ সরকার সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনসচেতনতা তৈরি না হলে ভেসাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার কমবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, জনবল সল্পতার কারনে অবৈধ জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছেনা।