শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:৫০

হাজীগঞ্জে বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমিতে পানি, আলুসহ শীতকালীন সবজি ৯০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে

কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ

কামরুজ্জামান টুটুল
কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে সৃষ্ট বৃষ্টিতে হাজীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমিতে পানি জমে আলু, সরিষাসহ শীতকালীন সকল সবজির জমি কিংবা বীজতলার ৯০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে শীতকালীন সবজি কিংবা বীজতলা তৈরি না করলে শীতকালীন সবজি শীতে আর উৎপাদন হচ্ছে না। কিন্তু কৃষকরা যে টাকা ব্যয় করে আলুর জমি তৈরি করে আলু রোপণ শেষ করেছে সেই জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুনরায় সমপরিমাণ ব্যয় করে আলু কিংবা শীতকালীন সবজি উৎপাদন করার মতো অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী কোনো কৃষক আছে বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। এক কথায় কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। জাওয়াদের ক্ষতির বিষয়টি চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টিতে কৃষি জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে আলু, সরিষা, শাক্-সবজি, পেঁয়াজ, রসুন ও বোরো ধানের বীজতলার ৯০ ভাগ ডুবে গেছে। গত দুদিনে যে পানি জমি থেকে নেমেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। এ জলাবদ্ধতায় ইতিমধ্যে আলু, সরিষা, শীতকালীন সবজি ও রসুনের প্রায় ৯০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও পেঁয়াজের বীজতলা প্রায় ৫০ ভাগ এবং বোরো ধানের বীজতলা প্রায় ২০ ভাগ নষ্ট হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে আলুর বীজ বপন করা হয়েছিলো। গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে সবগুলো বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। ৪০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা বীজ বপনের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ বীজ নষ্ট হয়েছে। ৬১০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি ও ১৫ হেক্টর জমির রসুনের প্রায় সবই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও ৪০ হেক্টর জমির বপনকৃত পেঁয়াজের অর্ধেকেরও বেশি নষ্ট এবং ৫০৫ হেক্টর জমির বোরো ধানের বীজতলার প্রায় ১০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে।

উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বহু বছর ধরে আলু সরিষাসহ শীতকালীন সকল ধরনের সবজি চাষ হয়। এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পলাশ জানান, আমাদের এ অঞ্চলের কৃষকেরা আলু রোপণের পর বৃষ্টি শুরু হয়। এ বৃষ্টির পানি এখনো কৃষি জমিতে জমে রয়েছে। এ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কোনো লোকে এসে একটু পরামর্শ দিতে দেখা যায়নি। আমাদের ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ মাঠ, নিশ্চিন্তপুর মাঠ, মাড়কি মাঠ, ছিলাচোঁ মাঠ, বামনগাঁও মাঠ বৃষ্টির আগে সবাই আলু রোপণ করার কাজ শেষ করেছে। কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে সকল আলুর আর সরিষার জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো ৮০ ভাগ জমিতে পানি জমে রয়েছে।

উক্ত ইউনিয়নের খিলপাড়া মাঠের আলু চাষি আলাউদ্দিন ৩৬ শতাংশ, নিশ্চিন্তপুর মাঠে সেলিম ৩৬০ শতাংশ, তারাপাল্লা মাঠের চাষি মন্টু ৩৬০ শতাংশ, তারাপাল্লা পশ্চিম পাড়ার কৃষক কামাল হোসেনের ১৪০ শতাংশ, হানিফ বেপারী ৬০০ শতাংশ আলু চাষ করেছিলেন। বৃষ্টির পানি জমে ইতিমধ্যে সকল আলু ও তৈরি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ সকল কৃষক। এ সকল কৃষক আরো জানান, ধার-দেনা করে আলুর বীজ রোপণ করেছি। এই বীজ এখন পানিতে ডুবে আছে। একদিকে বীজতলা নষ্ট, অপরদিকে বীজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা এখন দুই দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত। ফের জমি তৈরি করে বীজ বা ফসল রোপণ করা কোনোভাবেই সম্ভব না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার কৃষকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশেষ করে আলু, সরিষা, রসুন ও শীতকালীন সবজিসহ তেরশ (এক হাজার তিনশ’) হেক্টর জমির বীজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। অথচ এ বছর আলু, মিষ্টি আলু ও শীতকালীন সবজিসহ উন্নতজাতের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এছাড়াও জেলা প্রশাসন থেকেও তথ্য চেয়েছে। সেখানেও আমরা তথ্য দিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়