প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৪:১৪
দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি যাচাই, মৌলভীবাজারে শিখন ঘাটতি ৩০ ভাগ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শেষ হয়েছে ১৫দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি যাচাই প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে উঠে এসেছে এ জেলার গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে শিখন ঘাটতি রয়েছে। আগামী ৪ মাস অতিরিক্ত যত্ন নিয়ে তাদের উত্তরণ করা হবে বলে জানায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি মাইল ফলক কর্ম পরিকল্পনা বলেও জানান তারা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানন্নোয়নের লক্ষ্যে বিগত পহেলা জুলাই থেকে শুরু করা হয় শিক্ষার্থীদের শিখন অবস্থান নির্ধারণ ও শিখন ঘাটতি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম, যা ১৬ জুলাই শেষ হয়।
সরজমিনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি যাচাই প্রক্রিয়া। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে প্রথমে লিখিত, পরে একজন একজন করে বিভিন্ন প্রশ্ন করে ও রিডিং পড়িয়ে মান যাচাই করছেন।
শ্রীমঙ্গল সিন্দুরখান ইউনিয়নের ছিমাইলত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ঝুমি রানী সরকার জানান, এর মাধ্যমে মূলত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বেইজলাইন টুলস-এর মাধ্যমে ৩য় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ের ওপর শিখন অবস্থান, শিখন ঘাটতি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, আর আগে আমরা ভালো ও দুর্বল শিক্ষার্থী সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখলেও এভাবে একজন একজন করে কার মান কতো তা নির্ণয় করিনি। এখন এই শিখন ঘাটতি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা লিখে রাখতে পারছি। এই মূল্যায়নপত্র অনুযায়ী তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা যাবে। তিনি বলেন, আমরা তো তাদের যত্ন নেবোই, তার ওপর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও অবগত করতে পারবো।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাইমা আক্তার জানান, তার শিক্ষকরা ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে প্রথমে লিখিত, পরে মৌখিকভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন। এটি করতে তাদের ভালোই লেগেছে। তবে যে বিষয়টি পারিনি, সে বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে পড়া শুরু করেছি।
একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাভলী রানী দে জানান, বিশেষ এ মূল্যায়নে দেখা গেছে, প্রায় ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর কেউ সঠিকভাবে পড়তে পারে না, কেউ উচ্চারণ করতে পারে না, কেউ সঠিক মাত্রায় লিখতে পারে না। যা রেকর্ড ফরমে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়।শিক্ষিকা লিপিমনি গোয়ালা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বেইজলাইন টুলস -এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখন অবস্থান, শিখন ঘাটতি যাচাইকরণের লক্ষ্যে স্তর ভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।
শ্রীমঙ্গল যোগেন্দ্র মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রায় ২৫ ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুর্বলতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আমাদের এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।শ্রীমঙ্গল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ দেব জানান, বিগত ১৫দিন উৎসব আয়োজনে আমরা নির্ধারিত নিয়মে শিক্ষার্থীদের মান পরীক্ষা করে তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। কাছাকাছি সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরামর্শ মোতাবেক তাদের মান উন্নয়নে কাজ শুরু করবো।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে উঠে এসেছে শতকরা ৬৫-৭০ ভাগ শিক্ষার্থী লিখতে ও সঠিকভাবে পড়তে পারে, বাকি ৩০-৩৫ ভাগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্তরে স্তরে শিখন ঘাটতি রয়েছে। এ সকল শিক্ষার্থীর অনেকেই সঠিকভাবে লিখতে পারে না। তাদের এই ঘাটতি দূরীকরণে ৪ মাস কাজ করা হবে এবং আগামী নভেম্বরে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখা হবে তারা উত্তীর্ণ হতে পারলো কিনা।
আগামী চার মাসের মধ্যে শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষক ও অভিভাবক মিলে এই ঘাটতি দূর করা হবে বলে জানান মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম। তিনি বলেন, সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত অ্যাসেসমেন্ট টুলস ব্যবহার করে শিখন অবস্থান নির্ধারণ ও শিখন ঘাটতি পর্যবেক্ষণ এবং শিখন উন্নীতকরণের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি মাইল ফলক সিদ্ধান্ত এটি। তিনি বলেন, এই কার্যক্রম দেখতে প্রায় প্রতিদিনই তিনি কোনো না কোনো স্কুল ভিজিট করেছেন। অনেক শিক্ষার্থীকে পুনর্বার নিজেও যাচাই করেছেন।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) কামরুল হাসান বলেন, সারা দেশব্যাপী পহেলা জুলাই হতে ১৬ জুলাই পর্যন্ত অ্যাসেসমেন্ট টুলস ব্যবহার করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ সঠিকভাবে পড়তে পারে না, উচ্চারণ করতে পারে না, কেউ সঠিক মাত্রা ব্যবহার করে লিখতে পারে না, তাদের খুঁজে বের করে এই বেজলাইন টুলস-এর মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে। এর জন্যে দুর্বল স্টুডেন্টরা সময় পাবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত । পহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের চূড়ান্ত যাচাই করা হবে। শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের এই বিশেষ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকরা।