রবিবার, ০২ মার্চ, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫, ২০:১৮

অভিনব সিন্ডিকেট!

মতলব উত্তরে সয়াবিন তেলের সঙ্গে ৮ পণ্য কেনা বাধ্যতামূলক!

মতলব উত্তরে সয়াবিন তেলের সঙ্গে ৮ পণ্য কেনা বাধ্যতামূলক!
মতলব উত্তর ব্যুরো

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে মতলব উত্তর উপজেলায় পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। তেল না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনছেন।

এমন সংকটের জন্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ডিলার এবং কোম্পানিকে দোষারোপ করছেন দোকানি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, তেলের সঙ্গে একই কোম্পানির সরিষার তৈল, লবণ, চা পাতা, সেমাই, ট্যাংক, পোলাওর চাল, সুজি, হলুদ ও মসলা না নিলে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা তাদের যেসব পণ্যের চাহিদা বাজারে নেই, সেসব পণ্য না রাখলে তেল দিচ্ছেন না। এমনকি সয়াবিন তেল বিক্রিতে কোনো ধরনের মুনাফা দিতেও রাজি নন তারা। এজন্যে দোকানে তেল রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সর্বশেষ শনিবার (১ মার্চ ২০২৫) উপজেলার ছেংগারচর বাজার এবং বিভিন্ন বাজারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। যারাই তেল কিনতে আসছেন, দোকানিরা বলছেন, নেই। ছয়-সাতটি দোকান ঘুরেও তেল পাননি অনেকে। তাদের প্রশ্ন-- তেলের কি সংকট চলছে? অনেকে বড়ো দোকানে তেল না পেয়ে পাড়া-মহল্লার দোকানে যান। একই অবস্থা দেখে দোকানির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান ক্রেতারা। এমন এক ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে দোকানি বলেছেন, কোম্পানিগুলোর বেঁধে দেয়া শর্তে রাজি না হওয়ায় তারা তেল দিচ্ছে না। এজন্যে দোকানে তেল নেই।

তেল না পেয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়ে ছেংগারচর পৌর এলাকার বালুরচর গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অন্তত ছয়টি দোকান ঘুরেছি। কোনো দোকানে তেল নেই। সবাই বলছেন, নেই-নেই। এটা তো আমাদের জন্যে ভোগান্তি। দোকানিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ, কারও দোকানেই তেল নেই। শুধু ছেংগারচর বাজারে নয়, উপজেলার সব বাজারের দোকানগুলোতে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে অনেক ক্রেতা মনে করছেন সংকট। তবে বাস্তবে কোম্পানির বেঁধে দেয়া শর্তের কারণে তেল রাখছেন না দোকানিরা।

জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলার খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। সংকট মনে করে আমরা খোলা তেল কিনছি। পরে শুনেছি সংকট নেই। কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা শর্ত মেনে তেল বিক্রি করছেন। ওই শর্তে তেল কিনলে খুচরা বিক্রেতাদের লাভ হয় না। এজন্যে তারা কোনো কোম্পানির তেল দোকানে রাখছেন না।

দোকানে তেল নেই কেনো জানতে চাইলে ছেংগারচর বাজারের পাইকারি দোকানি মো. জিয়া ও মো. অপু মিয়া বলেন, তেল রাখতে চাইলে সঙ্গে তাদের কোম্পানির সরিষার তৈল, লবণ, চা পাতা, সেমাই, ট্যাংক, পোলাওর চাল, সুজি, হলুদ ও মসলা রাখার শর্ত দিচ্ছেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আবার যত টাকার তেল রাখবো, তত পরিমাণ টাকার চাহিদাহীন পণ্য রাখা বাধ্যতামূলক বলে দিচ্ছেন তারা। এরপর তেলের বোতলের গায়ে যে দাম লেখা, সেই দামে বিক্রি করতে হবে। তাও মানতে রাজি ছিলাম। কিন্তু যেসব পণ্যের ক্রেতা নেই, সেসব পণ্য রাখলে আমাদের তো লোকসান হবে। লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা উল্টো তেল রেখে বাড়তি চাপে পড়তে হচ্ছে। এর চেয়ে বরং ওই টাকার অন্য পণ্য দোকানে রাখলে কিছুটা হলেও লাভ হবে। এজন্যে তেল রাখছি না।

একই কথা বলেছেন এই বাজারের খুচরা দোকানি রসুল মিয়াজী। তিনি বলেন, এক কোম্পানির তেল রাখতে চাইলে সঙ্গে তাদের ৮টি আইটেম নেয়া বাধ্যতামূলক। অন্য কোম্পানির এক কার্টুন সয়াবিন তেল রাখতে হলে তাদের এক কার্টুন সরিষার তেলসহ বিভিন্ন পণ্য রাখা বাধ্যতামূলক। আরেক কোম্পানি তাদের পোলাও'র চাল-ডাল এবং মিনিকেট চাল রাখার শর্ত দিচ্ছে। এ কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেল দোকানে তোলা বন্ধ করে দিয়েছি আমরা।

বোতলের গায়ে লেখা দামে তেল বিক্রি করতে আমরা রাজি উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, কারণ মাসিক যারা ক্রেতা আছেন, তাদের সব মালামাল দিতে হয়। তা না হলে প্রতিযোগিতার বাজারে অন্য দোকানে চলে গেলে ক্রেতা হারাতে হয়। ফলে তেল বিক্রিতে লাভ না থাকলেও আমরা রাখতাম। কিন্তু এখন যেসব শর্ত দিচ্ছে কোম্পানিগুলো, তা কোনোভাবেই মানা সম্ভব না হওয়ায় তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান জানান, আমরা ইতোমধ্যেই চাঁদপুরের বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করতেছি। সয়াবিন তেলের সাথে অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্যতামূলক করা একটি নিয়ম বহির্ভূত কাজ। যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়