প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২১, ০০:০০
শাহরাস্তিতে নিজ বাসার ছাদে সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তার রক্তাক্ত মৃতদেহ
বাসার ভেতর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্ত্রীকে উদ্ধার
শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া এলাকায় নিজ বাসার ছাদ থেকে সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরুল আমিনের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে শাহরাস্তি থানা পুলিশ। একই সাথে বাসার ভেতর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্ত্রী কামরুন্নাহারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল ১ জুলাই সকালে তাদের উদ্ধার করা হয়। কী কারণে এ হত্যাকা- ঘটলো বা কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত এমন কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শাহরাস্তি থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, ডিবিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ক’বছর পূর্বে অবসরে যাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরুল আমিন ও কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলায় সমাজসেবা অফিস থেকে সদ্য এলপিআরে আসা তার স্ত্রী কামরুন্নাহার দীর্ঘদিন যাবৎ এখানেই বসবাস করে আসছেন। তাদের ১ ছেলে ও ৩ মেয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। চাকুরির কারণে তারা দুজন এখানেই নিজ বাসায় বসবাস করতেন। সমাজের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে নূরল আমিন অত্যন্ত পরিচিত। এলাকাবাসী সকলের সাথেই রয়েছে তার সুসম্পর্ক। নূরুল আমিনের সন্তানরা সবসময়ই বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন।
জানা যায়, গতকাল তার পরিবারের সদস্যরা তাদের ফোন করে না পাওয়ায় পাশের বাড়ির সামছুল হক পাটওয়ারীকে ফোন করেন। সামছুল হক পাটওয়ারী সন্তানদের ফোন পেয়ে নূরুল আমিন সাহেবের বাড়িতে এসে বাসার প্রধান ফটকে তালা লাগানো দেখতে পান। বাসার ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ না পাওয়ায় তিনি বাসার জানালা দিয়ে দেখেন ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় কামরুন্নাহার পড়ে আছেন। তৎক্ষণাত তিনি বিষয়টি ফোন করে নূরুল আমিনের সন্তানদের এবং এলাকায় জানান। স্থানীয় যুবক পলাশ জানতে পেয়ে ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন করে। সংবাদ পেয়ে শাহরাস্তি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসার তালা ভেঙ্গে মুমূর্ষু অবস্থায় নূরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন্নাহারকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক তার অবস্থার বেগতিক দেখে সাথে সাথে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এদিকে কামরুন্নাহারকে উদ্ধার করার পর পুলিশ বাসার ছাদে গিয়ে গলায় মৌজা পেছানো ও শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত নূরুল আমিনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরা পৌঁছেন। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পুলিশ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালায়। তবে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়। নূরুল আমিনের মৃতদেহের গন্ধ ও মাছি বসতে দেখে ধারণা করা হচ্ছে ২/১ দিন আগে দুর্বৃত্তরা নূরুল আমিনকে খুন করে।
সংবাদ পেয়ে নূরুল আমিনের ছেলে জাকারিয়া বাবু ও মেজো মেয়ে জান্নাতুন নূর বাড়িতে ছুটে আসেন। এ সময় পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। নূরুল আমিনের মেজো মেয়ে জান্নাতুন নূর মিলি জানান, বাবা-মায়ের সাথে সবসময়ই কথা হয় তাদের। ২৯ জুন রাত ৮টা ৭ মিনিটে সর্বশেষ কথা হয়। ৩০ জুন ফোন করে বাবা-মাকে পাওয়া যায়নি। নূর জানান, তারা ধারণা করেছেন মোবাইলে চার্জ না থাকায় বাবা-মাকে পাওয়া যায়নি। পরে ১ জুলাই সকালে তিনি বাবা-মাকে ফোনে বারবার চেষ্টা করেও না পাওয়ায় পাশের বাড়ির সামছুল কাকাকে ফোন দিয়ে বাবা-মায়ের খবর জানতে চান। কাকা সামছুল হক বাড়িতে এসে তাদের এ অবস্থায় দেখতে পান।
জান্নাতুন নূর আরো জানান, গত দুদিন আগে তার ছোট বোনের সেশন ফি দেয়ার জন্যে ব্যাংক থেকে তার মায়ের ৩৫ হাজার টাকা উঠানোর কথা। তার ধারণা উক্ত টাকা তার মা কামরুন্নাহার উত্তোলন করেছেন। এছাড়া বাসায় অতিরিক্ত কোনো টাকা বা স্বর্ণ-গহনা ছিলো না। তাদের সাথে সমাজের কারো বিরোধ নেই বলেও তিনি জানান। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি তারা।
শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আঃ মান্নান জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কাউকে আটক করা হয়নি। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোঃ আবুল কালাম জানান, ঘটনাস্থলের সব আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। আশা করছি হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের সন্ধান দ্রুত পাওয়া যাবে। চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, নূরুল আমিনের বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার রাজাপুরা গ্রামে। ২৫ বছর পূর্বে নাওড়ায় জায়গা কিনে তিনি এ বাড়ি নির্মাণ করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকুরি করেন। নূরুল আমিন লাকসাম উপজেলায় চাকুরি অবস্থায় অবসরগ্রহণ করেন। ৪ মাস পূর্বে কামরুন্নাহার বরুড়া উপজেলা থেকে এলপিআরে যান। ৩০ জুন কামরুন্নাহারের অফিসে যাওয়ার কথা ছিলো বলে মেজো মেয়ে মিলি জানান।
নূরুল আমিনের খুব কাছের লোক গুগুশাল গ্রামের আঃ জলিল জানান, প্রায় দুবছর ধরে নূরুল আমিনের যে কোনো কাজের প্রয়োজন হলে তিনি তা করে দেন। গত কয়েকদিন আমার জ্বর থাকায় তার সাথে কথা হয়নি। আমার জ্বর হওয়ায় তিনিই আমাকে জ্বর ভালো না হওয়া পর্যন্ত আসতে বারণ করেছেন।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার সংবাদ পেয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে প্রেরণ করে।