প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:২৫
ফরিদগঞ্জে বায়নাকৃত জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ
বায়না করেছেন একজন, জমির রেজিস্ট্রি পেয়েছেন আরেকজন। বায়নাকৃত জমির রেজিস্ট্রি নিয়ে এমন প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে মরহুম আলী আকবরের পাঁচ সন্তানের বিরুদ্ধে। তারা উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা। পূর্বে বায়নাকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য পাওয়ায় বিক্রেতারা এমনটি ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে। জমির রেজিস্ট্রি পেতে উকিল নোটিশ, থানা পুলিশ আর দলিল লেখক সমিতিতে আবেদন জানিয়েও প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী ফেরদৌসী বেগম। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। জমি ফেরত পেতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে দায়িত্বশীল মহলের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
|আরো খবর
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট ফেরদৌসী বেগমের সাথে ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে বদরপুর মৌজায় ২শতক জমি বিক্রয়ের বায়না চুক্তিতে আবদ্ধ হন আলী আকবর ও তার পাঁচ সন্তান মিন্টু, সুজন, ডালিয়া, জেসমিন এবং রোকেয়া। যেখানে জমির মূল্য নির্ধারিত হয় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং বায়না বাবদ পরিশোধ করা হয় ১ লাখ টাকা। পরবর্তীতে আলী আকবরের চিকিৎসার অজুহাতে জমির মূল্য বাবদ আরো ৫৫ হাজার টাকা নেয় তার সন্তানেরা। চুক্তি অনুসারে যে কোনো সময় অবশিষ্ট পাওনা পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরদৌসী বেগমের অনুকূলে জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কথা আলী আকবর ও তার সন্তানদের। কিন্তু অসুস্থ আলী আকবর মৃত্যুবরণ করলে বিলম্বিত হয় রেজিস্ট্রি ও লেনদেন। বিভিন্ন সময়ে রেজিস্ট্রির তাগিদ দিলে দেই দিচ্ছি বলে বারংবার ঘোরাতে থাকেন তারা। রেজিস্ট্রির কথা বললেই হুমকি-ধমকি দিতেন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন। প্রতিকার চেয়ে গত ৪ জুন আলী আকবরের ছেলে মিন্টু মিয়াকে বিবাদী করে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেন ফেরদৌসী বেগমের মা রোকেয়া বেগম। তাতে কোনো ইতিবাচক ফল না মিলায় নিরূপায় হয়ে আইনজীবীর দ্বারস্থ হন তারা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেলের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি চেয়ে আলী আকবরের ছেলে মিন্টু মিয়া বরাবর একটি উকিল নোটিশ প্রেরণ করেন রোকেয়া বেগম। এরপরও বায়নাকৃত জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি আলী আকবরের সন্তানেরা। সম্প্রতি পূর্বের বায়নার চেয়ে অধিক মূল্যে স্থানীয় দলিল লেখক ও দালালদের সহযোগিতায় অন্য একজনের কাছে জমি বিক্রির উদ্যোগ নিলে রেজিস্ট্রি বন্ধ রাখতে গত ২২ অক্টোবর ফরিদগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অনুরোধ করেন তিনি। তা সত্ত্বেও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদির পাটওয়ারীর সহযোগিতায় জাহাঙ্গীর (৩০) নামে অপর একজনকে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেয় মিন্টু মিয়া ও তার ভাই-বোনেরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ফেরদৌসী বেগম বলেন, বায়নাকৃত জমিটি আমার দাদার সম্পত্তি ছিলো। আলী আকবর আমার জেঠা। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ আমরা ও আমার জেঠারা পাশাপাশি ভোগ করে আসছি। আমার জেঠা জমিটি বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে আমাদের ঘরের সাথে হওয়ায় এবং পূর্বপুরুষের সম্পত্তি বিবেচনায় ক্রয়ে আগ্রহী হই। কিন্তু জেঠার মৃত্যুর পর জেঠাতো ভাই-বোনেরা প্রতারণা করে। বিভিন্নভাবে প্রতিকার চেয়েও পাইনি। শেষ পর্যন্ত তারা জমিটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা যেনো জমিটি ফিরে পেতে পারি এবং তাদের প্রতারণার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিকার পেতে পারি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা।
আলী আকবরের ছেলে মোঃ মিন্টু বলেন, উনি আমাকে ঠিক সময়ে টাকা দিতে পারেননি। তাই আমি জমি রেজিস্ট্রি করে দেইনি। দলিল লেখক নূরে আলম মফিজ বলেন, সমিতির সভাপতির নির্দেশনা অনুসারে দলিল করেছি। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদির পাটওয়ারী বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটি নালিশ পেয়েছি। উভয় পক্ষকে নিয়ে আমরা কথা বলেছি। জমিটি অপর একজনের নামে রেজিস্ট্রি হয়েছে। বায়নাকৃতদের টাকা আমাদের জিম্মায় আছে।