প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ২০:৪৪
আসছে শীত, বাড়ছে লেপতোশকের কদর
নভেম্বরের শুরুতেই ফরিদগঞ্জের গ্রামগুলিতে বিরাজ করছে ভোরের হালকা কুয়াশায় শীতের আমেজ। এতেই লেপ তোষক তৈরির ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে কারিগরদের মাঝে। আর গৃহিণীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঘরে থাকা পুরনো লেপ-তোষক-কম্বল রোদে দেওয়া ও মেরামত করার কাজে। দিনের গরমের সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যার শুরুতে পড়ছে কুয়াশার মিহিদানা। বাংলা মাসের হেমন্তের দিনগুলো শেষ হতে না হতেই শীতবুড়ি এসে যেন দখল করে নিচ্ছে প্রকৃতির সবটুকু
|আরো খবর
দিনে গরম আর রাতে হিমালয় থেকে আসা কুয়াশার শীতল হাওয়া আর ভোররাতে ঘন কুয়াশার হাতছানি বলে দিচ্ছে ঘনশীত বেশি দূরে নয়। দিনেরবেলা সূর্যের আলোর দেখা মিললেও দিন দিন কমে আসছে তাপমাত্রা। এতদিন যারা হালকা-পাতলা কাপড় গায়ে জড়িয়ে বের হতেন তাদের অনেকেই এখন শীতের ভারী কাপড় পরতে শুরু করেছেন। সকালে ঘাসের ডগায় আর বৃক্ষরাজির পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দুর দিকে তাকালে টের পাওয়া যায় শীতকালের আগমন। ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর বিকেলের হিমেল বাতাসে শীতের হাওয়াও শরীরজুড়ে হিম হিম অনুভূতি এনে দিচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শীতকে সামনে রেখে প্রতিটি বাড়ি-বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছেন লেপ-তোষক কারিগররা। অনেকেই নিচ্ছেন আগাম শীতের প্রস্তুতি। যাদের নতুন লেপ-তোষকের দরকার তারা ঠিকই দরদাম ঠিক করে বাড়িতেই বানিয়ে নিচ্ছেন পছন্দমতো শীত উপাদান। শীতের শুরুতেই ধুনারিদের তুলা ছাঁটাই ও লেপ তৈরির কাজে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচের দিকটাও বাড়তে থাকবে বলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ আগেভাগেই লেপ-তোষক বানাতে শুরু করেছে। কারিগরদের তাই এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। বিরামহীন কাজ করছেন তারা। কেউ কেউ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ, তোষক ও বালিশ। লেপ-তোষকের কারিগরদের ব্যস্ততাই মনে করিয়ে দিচ্ছে শীতকাল বেশি দূরে নয়।
এদিকে শীতকে সামনে রেখে অনেকেই যারা পুরনো শীতবস্ত্র তুলে রেখেছেন সেগুলো বের করছেন। কেউ নতুন করে কেনার জন্য মার্কেটে ছুটছেন। শীতের শুরুতে ছোটদের জন্য পোশাক-আশাক কিনতে হচ্ছে বেশি করে। বিত্তবানদের যেখানে বাহারি ডিজাইনের শীতের কাপড়ের সমারোহ থাকে, সেখানে নিম্ন শ্রেণীর অনেকের ভাগ্যে হয়তো একটি কাপড়ও জোটে না। আর তাই নিম্ন শ্রেণীর নারীরা বেশ আগেভাগেই সংসারের কাজের ফাঁকে পুরনো শীতের কাঁথাগুলো নতুন করে ছেঁড়া শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে এবং পুরনো পোশাকগুলি ধুয়ে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার নয়াহাট বাজারে চরমথুরা গ্রাম থেকে লেপ তৈরি করতে আসা আবদুল খালেক বলেন, এখনও শীতের দেখা তেমনভাবে না মিললেও আগেভাগেই শীতের জন্য একটি লেপ বানিয়ে নিচ্ছি। যেন শীতে কষ্ট পেতে না হয়।
নয়াহাট বাজারের লেপ-তোষকের দোকান মালিক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শীত এখনও তেমনভাবে না এলেও অনেকে আগেভাগেই লেপ, তোষক, জাজিম বানাতে আসছেন। গতবছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতার সংখ্যা বেশি বলে মনে হচ্ছে। সারাবছরের চেয়ে শীতের এ তিন মাস বেচাকেনা একটু বেশিই হয়। তাই ক্রেতাদের কথা ভেবে কাজের গুণগতমান বজায় রেখে অর্ডারি কাজের পাশাপাশি রেডিমেড জিনিসও তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে।
নয়াহাট বাজারের ঢালী বেডিংয়ের ধুনারি মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, শীত উপলক্ষে লোকজন নতুন লেপ, তোষক ও জাজিম তৈরি করার জন্য অর্ডার দিচ্ছেন। প্রতি পিস ছোট লেপ ৮০০-১২০০ টাকা, বড় লেপ ১২০০-১৫০০ টাকা এবং প্রতি পিস তোষক ছোট ৯০০-২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ভারী জাজিম ৪০০০-৫৫০০ টাকার মধ্যে খরচ পড়ে।
তবে পুরোপুরি শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দাম আরও বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।