মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:৪৯

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে কুমিল্লায় মানববন্ধন

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে কুমিল্লায় মানববন্ধন
তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা থেকে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় দু গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়সহ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে কুমিল্লায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর ২০২৫) বিকেলে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় টাউন হলের প্রধান ফটকের সামনে সংস্কৃতি কর্মী ও শিল্পী সমাজ এবং কুমিল্লায় কর্মরত সাংবাদিকদের আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকে যারা গলাটিপে ধরতে চায়, তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।’

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিকল্পিতভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একই দিন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা ও ভাঙচুর এবং পরদিন শুক্রবার রাতে উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে অর্ন্তবর্তী সরকারকে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের অফিসে অগ্নিসংযোগ স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর নগ্ন হামলা বলে আমরা মনে করি।

কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক (ফারুক) বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে যেই বর্বোচিত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেটির নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। ধর্মকে ব্যবহার করে মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে যদি দেশের ইতিহাসকে আপনারা নষ্ট করতে চান, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এদেশে সেটি কখনোই সম্ভব হবে না। আমরা মনে করি পরিকল্পিতভাবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। আগুনের লেলিহান শিখায় যখন আমাদের সংবাদকর্মীরা ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলো, সেখানে ধোঁয়ায় তাঁদের অবস্থা যখন মৃত্যুশয্যার মতো হয়েছিলো, সেখানে থেকে নারী সাংবাদিকদের যখন বের করা হয়েছিলো, তখনও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ধিক্কার জানাই সেসব নেতৃত্বকে, যারা সেই রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকে গলা টিপে ধরতে চেয়েছিলো। আমরা বলতে চাই, এভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা যাবে।

এছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠক শাহজাহান চৌধুরীর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা এমরান, সাংস্কৃতিক সংগঠক তাপস বকশি, উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর কুমিল্লার সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ, চারণ সাংস্কৃতিক সংগঠক সর্দার হুমায়ুন কবির ও কুমিল্লা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহার রায়হান প্রমুখ।

অন্য বক্তারা বলেন, বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য প্রকাশ করার কারণে গত ১৭ বছর প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার চরমভাবে নিগৃহীত হয়েছে। সংসদে একমাত্র এই দুটি পত্রিকার বিরুদ্ধে একের পর এক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতো বাধার পরও এই দুটি সংবাদপত্র সত্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। আমরা ভেবেছিলাম, ফ্যাসিস্টের আমল চলে গেছে, আমাদের বাকস্বাধীনতা রক্ষা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম আমাদের ওপর নির্যাতন আরও বেড়ে গেছে। গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে এসব পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের চতুর্থ স্তম্ভ ধ্বংস করার যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকবে হবে।

ওই মানববন্ধনে অংশ নেন সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র রায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি গোস্বামী, নজরুল পরিষদ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়ুয়া, বিনয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন (মাহবুব), সাংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যক্ষ বিধান চন্দ্র, রত্না সাহা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়াইডব্লিউসিএর সাধারণ সম্পাদক আইরিন মুক্তা অধিকারী, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী (খোকন), ওমর ফারুকী তাপস, অধ্যাপক দিলীপ মজুমদার, আতিকুর রহমান, অ্যাডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার, এন কে রিপন, মাহফুজ নান্টু, জাহিদ পাটোয়ারী, সুমন কবির, তানভীর দিপু, কামরুল হাসান, এইচ এম মহিউদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, আরিফ আজগর, সামছুল আলম, লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাওসার আলম (সোহেল) ও সাংস্কৃতিক কর্মী রেজবাউল হক (রানা) প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়