প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৬
ঠিকাদারের নিখোঁজ
দাউদকান্দি-মতলব সড়কের কাজ বন্ধ।। যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

দাউদকান্দি-মতলব আঞ্চলিক মহাসড়কের শ্রীরায়েরচর-ছেংগারচর সড়কের কাজের অংশ বন্ধ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে সড়কে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকলেও ঠিকাদার ও তার লোকজন নেই। খারাপ অবস্থায় সড়কটি পড়ে থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে।
|আরো খবর
কুমিল্লার দাউদকান্দি-শ্রীরায়েরচর ও চাঁদপুরের শ্রীরায়েরচর- ছেংগারচর পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যোগাযোগের বিস্তার করার লক্ষ্যে এই সড়কটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিলো।
২০২০ সালের ১ জুলাই শুরু হয় শ্রীরায়েরচর-ছেংগারচর সড়ক প্রকল্পের কাজ। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে জানা যায়, এ সড়কের মতলব অংশের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১০ কিলোমিটার। সড়কের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে ৫.২০০ কিলোমিটারের। ৪.৮০০ কিলোমিটারের কার্পেটিং বাকি। ছেংগারচর থেকে শিকিরকান্দি স্কুলের সামনেসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশে কাজ শেষ হয়নি। মোট কাজের ৭৫ ভাগ শেষ হয়েছে এবং ২৫ ভাগ কাজ বাকি আছে। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিলো হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড। সড়ক নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছিলো ২৬ কোটি টাকা। ৫ আগস্টের পর ঠিকাদারের লোকজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিকাদার খুঁজে না পাওয়ায় কাজটি বন্ধ রয়েছে। শেষ করা যাচ্ছে না। এ সড়কটির গুরুত্ব অপরিসীম। কাজ শুরু থেকে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। কাজটি বন্ধ থাকায় সড়কটি গর্তে আর ধুলাবালিতে থাকে ভরপুর। বৃষ্টির দিনে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী, শিক্ষার্থী, রোগী ও যানবাহন চালকরা।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তায় এতো ধুলা যে, জানালা খুলে বসা যায় না। শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়। আর একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা দিয়ে চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকাবাসী বলেন, এ সড়ক শুধু মতলববাসীর ব্যবহারের জন্যে নয়, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা জরুরি।
গাড়ি চালক ইয়াসিন বলেন, এই রাস্তায় ধুলায় চোখে কিছু দেখা যায় না। বৃষ্টি হলে রাস্তায় জিনিসপত্র নিয়ে গেলে কাদায় গাড়ি আটকে যায়। কখনো পিছলে পড়ে দুর্ঘটনাও ঘটে।
হানির পাড় গ্রামের রোগী মরিয়ম জানান, চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে যেতে রাস্তায় এতো কাঁপুনি লাগে যে, শরীর ব্যথায় ভরে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীর জন্যে এ যাত্রা খুব কষ্টদায়ক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, একমাত্র এ সড়কটি ব্যবহার করে রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হয়। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়াতে রোগীরা অনেক সমস্যায় পড়ছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঠিকাদার ও তার লোকজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দু মাস আগে কাজটি বাতিলের জন্যে হেড অফিসে চিঠি দিয়েছি। সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় আছি। আগে যে কাজ হয়েছে তাও কিছু নষ্ট হয়ে গেছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা ঠিকাদার ও তার প্রতিনিধিকে খুঁজে পাচ্ছি না। কাজের চুক্তি বাতিল করার জন্যে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি দিয়েছি। তারা চুক্তি বাতিল করলে নতুন প্যাকেজ তৈরি করে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করতে পারবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এটির সাথে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংযুক্ত। সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। আমি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছি। জনস্বার্থে দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করা প্রয়োজন।