বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৮

করোনায় চাকরি হারানো সবুজের ভাগ্য ফিরেছে ফুচকা-চটপটির দোকানে

শামীম হাসান।।
করোনায় চাকরি হারানো সবুজের ভাগ্য ফিরেছে ফুচকা-চটপটির দোকানে

মো. সবুজ আহমেদ চাকরি করতেন ঢাকার একটি ফুচকা কারখানায়। ২০১৯ সালে করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায় তার কর্মরত ফুচকার কারখানাটি। চাকরি হারিয়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামে। কিছুদিন অবসর সময় কাটানোর পর মাথায় আসে নিজ থেকে কিছু করার চিন্তা। এরপর শুরু হয় তার জীবন সংগ্রামের নতুন অধ্যায়।

ভালো টাকা বেতনের চাকরি করা একজন মানুষের ফুচকার দোকান দেওয়ার বিষয়টিতে তার নিজ পরিবারের সদস্যদের সম্মতি ছিলো না। খানিক মনোমালিন্যও হয়েছিলো। তবু নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে শুরু করেছেন ফুচকা-চটপটির দোকান চালু করে। নিজের দোকান শুরু করার আগে নিজ এলাকা ও আশপাশের বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরে ঘুরে স্বাদ নেন চটপটি ও ফুচকার, খুঁজে বের করেন ফুচকা-চটপটিতে এমন কী যোগ করা যায়, যাতে স্থানীয় মানুষরা পায় চটপটি-ফুচকার সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদ।

সবুজের নিজের হাতে বানানো ফুচকা-চটপটি এখন শুধু নিজ এলাকা নয়, বরং আশপাশের অঞ্চলেও পরিচিতি পেয়েছে। পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা ও জেলা শহর চাঁদপুর থেকেও নারী-পুরুষরা ছুটে আসেন তার ফুচকার স্বাদ নিতে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী চটপটি-ফুচকার সাথে বিক্রি করেন বেলপুরি ও বিশেষ মশলা মিশ্রিত ঝালমুড়ি এবং দই ফুচকা। তবে তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হয় মন ভোলানো ভিন্ন স্বাদের টক-মিশ্রিত ফুচকা।

অদম্য সবুজের নিজের সন্তানের নামে নামকরণ করা সাইফ-আব্দুল্লাহ্ ফুচকা হাউজে এখন প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয় ১৮০ প্লেট থেকে ২০০ প্লেটেরও বেশি ফুচকা, যার প্রতি প্লেটের দাম ৫০ টাকা। মাস শেষে বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় তিন লাখ টাকারও বেশি। এতে তার দোকানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে আরও তিনজনের।

নিজের সহধর্মিণী ও তিন কর্মচারীসহ প্রতিদিন সকালে ফুচকা ও বেলপুরি তৈরির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবুজের চটপটি-ফুচকার স্বাদ নিতে হলে দোকানে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। দাঁড়িয়ে কিংবা বসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর পাওয়া যায় প্রত্যাশিত এক প্লেট খাবার।

স্বাভাবিক সময়ে এই দোকানটিতে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও ঈদ কিংবা বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে তা হয়ে যায় তিনগুণেরও বেশি। উৎসবকেন্দ্রিক সময়গুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এক প্লেট ফুচকার জন্যে। তখন দোকানটিতে যেন তিল ধারণের জায়গা থাকে না।

জেলা কিংবা উপজেলা শহর নয়, একেবারে অজপাড়াগাঁ থেকেও খাবারের যথাযথ মান বজায় রেখে মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে সবুজের ফুচকা-চটপটির দোকান। সবুজের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার দোকানের আশেপাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্ট্রিটফুডের দোকান। উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামের স্থানীয়দের কাছে পুলের গোড়া নামে পরিচিত এই স্থানটির পুরো চিত্র পাল্টে গেছে সবুজের ফুচকা-চটপটির দোকানকে কেন্দ্র করে।

এই দোকান থেকে আয়ের অর্থেই সবুজ তার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ইট-বালুর দালান। সফলতম এই উদ্যোক্তা সবুজ মনে করেন, হাতের কাজ জানা থাকলে যে কোনো কাজেই সফল হওয়া সম্ভব। এ ব্যবসা করতে হলে কারখানা থেকে ফুচকা কিনে নয়, বরং নিজের হাতে সকল কিছু তৈরি করে স্বাদে খানিকটা বৈচিত্র্য আনতে পারলে সফলতার মুখ দেখা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়