প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১১
রায়পুর উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন
খুনের মামলার আসামিরা পেলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক পদ

কর্মী খুনের মামলার তিন আসামিকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক পদে রেখে গঠন করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
|আরো খবর
নিজ দলের কর্মীকে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি তিনি। তাকেই দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদ। একই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া দুজনের বিরুদ্ধেও রয়েছে দলীয় কর্মীকে হত্যার মামলা। খুনের মামলার তিন আসামিকে শীর্ষ পদে রেখে গঠন করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের ২৬ আগস্ট এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মো. ফারুক কবিরাজকে। এ ছাড়া ইমাম হোসেন গাজীকে সাধারণ সম্পাদক ও আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
চলতি বছরের গত ৭ এপ্রিল চরবংশীর খাসেরহাট বাজার এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ঘটনায় ওই দিন মো. সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪৪) নামের প্রবাসফেরত এক কর্মী নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ দিন পর মারা যান জসিম উদ্দিন ব্যাপারী (৩৭) নামে আরও একজন কর্মী।
সাইজুদ্দিন দেওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বড় ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৬০জনকে আসামি করে রায়পুর থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ওই এলাকার মো. ফারুক কবিরাজকে, যিনি সদ্য গঠিত কমিটিতে সভাপতির পদ পেয়েছেন। মামলাটিতে আসামির তালিকায় ৯ নম্বরে রয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বরের নাম।
জসিম উদ্দিন ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনায় রায়পুর থানায় মামলা করেন তাঁর বাবা হজল করিম বেপারী। মামলাটিতে ইমাম হোসেন গাজীকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়, যিনি নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানাযায়, নির্বাচনের মাধ্যমে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করার উদ্দেশ্যে তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে এসে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছালেহ আহাম্মদ তিন জনের পদ ঘোষণা করা হয়।
রায়পুর উপজেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ছালেহ আহাম্মদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচনে অংশ নিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তবে ভোট গ্রহণের আগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে পদ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
খুনের মামলার আসামিরা শীর্ষ পদে থাকার বিষয়ে বলেন, ‘দলের একজন নেতার নির্দেশে খুনের মামলার আসামিদের দিয়ে কমিটি করতে বাধ্য হয়েছি। মামলার আসামিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখাটা দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।একারণে সাধারণ মানুষ বিএনপিকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে।’
দলের স্থানীয় পাঁচজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হত্যা মামলার আসামিদের নেতৃত্বে আনায় স্থানীয় রাজনীতিতে (চরবংশী তথা রায়পুর উপজেলায়) দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভোটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শেষ মুহূর্তে সমঝোতা করার বিষয়টিও দলের তৃণমূলের কর্মীরা স্বাভাবিকভাবে নেননি। দুটি ঘটনায় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের নতুন কমিটির সভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ বলেন, ‘আমি খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তা ছাড়া খুনের ঘটনায় উভয় পক্ষ সমঝোতা হয়ে গেছে।’
ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন গাজী বলেন, ‘বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না।’ একই কথা বলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বর। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার রাজনৈতিক অবস্থান ধ্বংস করতে মিথ্যা মামলায় জড়ায়। খুনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এবিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জে এম নাজমুল ইসলাম মিঠু প্রতিবেদককে বলেন, ‘ চরবংশী ইউপিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, দুই জন নিহত ও পৃথক দুটি খুনের মামলাটিতে দুই পক্ষের সমঝোতা হয় বলে জেনতে পেরেছি। এ নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।’
হত্যা মামলা দুটি প্রসঙ্গে রায়পুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খুনের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। অচিরেই দুটি মামলার চার্জশীট দেয়া হবে।’ ‘খুনের মামলা স্থানীয়ভাবে আপস-মীমাংসা করার কোনো সুযোগ নেই।’ আদালতেই সিদ্ধান্ত দেবেন।