প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ২১:৫০
চাঁদপুর রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির স্বঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি
আনু ও জাকির মৃধার কমিটির উন্নয়নের নামে উত্তোলনকৃত কোটি কোটি টাকা লোপাটের বিচার চান ব্যবসায়ীরা

চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ জাকির হোসেন মৃধার নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের নামসহ বিভিন্ন খাতের নামে উত্তোলনকৃত কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, বিগত সরকারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর স্বঘোষিত কমিটি গঠন করে আনোয়ার হোসেন আনু ও হাফেজ জাকির হোসেন মৃধা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। তারা সংগঠনের নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে ১৭ বছর যাবত মার্কেটের উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের নামে প্রায়ই বিভিন্ন খাত সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করতেন। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে আনু ও জাকির মৃধার কাছে ব্যবসায়ীরা ছিলেন জিম্মি ও অসহায়। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেনি কোনো ব্যবসায়ী। বিগত সরকারের সময়ে তাল মিলিয়ে চলা জাকির মৃধা গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর হয়ে যান বিএনপির ক্ষমতাধর নেতা। তিনি জেলা ওলামা দলের নেতা। অথচ এই জাকির মৃধার নেতৃত্বে স্বঘোষিত কমিটির সদস্য ওয়ার্কশপ দোকানদার আলী হোসেন গত ৫ আগস্টের পর মার্কেটের ১টি বিদ্যুতের মেশিন চুরি করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তা জানাজানি হলে মালিক সমিতির অফিসে ওয়ার্কশপ দোকানদার আলী এ ঘটনায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে দ্রুত মেশিনটি ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও ৫ লাখ টাকা মূল্যের মেশিনটি ওয়ার্কশপ দোকানদার আলী ফেরত দেননি। লজ্জার বিষয় হলো, জাকির মৃধা সেই আলীকে রাতের আঁধারে গঠিত তার কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে স্থান দিয়েছেন।
জানা গেছে, জাকির মৃধার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট হকার্স মার্কেটে সবসময় সক্রিয় থাকে। সেই সিন্ডিকেট দোকান ভাড়া, দোকান বিক্রি, বিভিন্ন কার্যক্রম করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। আত্মসাৎকৃত টাকার অংশ জাকির মৃধা আনোয়ার হোসেন আনুর সাবেক পিএস আল আমিনের মাধ্যমে আনুর ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
এ সকল অনিয়মের বিষয়ে জাকির মৃধার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বিএনপির একজন ত্যাগী নেতা। যা জেলা বিএনপির সভাপতি থেকে দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীর জানা রয়েছে। আমাকে নিয়ে মার্কেট ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে মার্কেটের কতিপয় ব্যক্তির। যারা এটিকে পুঁজি করে নিজেদের আখের গোছানোর চিন্তা করছেন। বিগত সরকারের সময়ে ইউপি নির্বাচনে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম খানের নির্বাচনী প্রচারণা ও সভা, সমাবেশে উপস্থিতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা। যারা বলছে তাদের কাছেও কোনো প্রমাণ নেই।
এদিকে দীর্ঘ ৮ বছরে মার্কেটের উন্নয়নের নামে উত্তোলনকৃত যেসব খাতে টাকার হিসাব আজও মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কমিটিকে দেয়া হয়নি, সেই খাতগুলোর কিছু হলো : মার্কেটের গলির চাল লাগানোর নামে ২৬ লাখ টাকা, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারের জন্যে মার্কেটের ৩৭০টি দোকান থেকে ৮ হাজার টাকা হারে উত্তোলনকৃত প্রায় ৩০ লাখ টাকা, গভীর রাতে ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনে লাগানো লোহার হেঙ্গার, রড, উপরের সানশেড ওয়ার্কশপ দোকানি আলীর মাধ্যমে কেটে বিক্রি করে ২ লক্ষ টাকা, হাকার্স মার্কেটের পূর্বদিকে কাঁচা বাজার তৈরির নামে লাইসেন্স নবায়ন করার বাহানায় উত্তোলনকৃত প্রায় ২০ লাখ টাকা, মার্কেটের ‘বি’ ব্লকের দোকান বড়ো করার নামে ২৫ লাখ টাকা, দীর্ঘ ৮ বছরে সমিতি পরিচালনার নামে মার্কেটের ৩৭০ দোকান থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা হারে উত্তোলনকৃত টাকা। হাকার্স মার্কেটের শেষ মাথায় (পূর্বদিকে) মসজিদের নাম করে দোতলা নির্মাণ করে দোকান আনু-জাকিরের কমিটি কোটি কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে। যার হিসাব আজও কেউ সুনিদির্ষ্টভাবে পায়নি। অপরদিকে দোতলা মসজিদের মার্কেট নিয়ে দুদক/সিআরবি চট্টগ্রাম এবং হাইকোর্টে মামলা তদন্তনাধীন ও চলমান রয়েছে। এসব উত্তোলনকৃত টাকার হিসাব আনু ও জাকির মৃধার কাছে চাইলে সেই ব্যবসায়ীর জীবনে নেমে আসে হুমকি-ধমকি, হামলা ও বিভিন্ন অজুহাতে মার্কেট থেকে উৎখাত করার নজির। এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
আনু ও জাকির মৃধার দীর্ঘ দিনের অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে মার্কেটে একটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল, জবাবদিহি কমিটি গঠন করার জন্যে প্রশাসন ও রাজনৈতিক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান চাঁদপুরের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ীরা।