সোমবার, ০৩ মার্চ, ২০২৫  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫, ১৪:১২

শুনে শুনেই হাফেজ হলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই সহোদর

শুনে শুনেই হাফেজ হলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই সহোদর
প্রবীর চক্রবর্তী

অল্প বয়সে বাবাকে হারানো, জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু আলআমিন (১৪) ও ফয়সাল (১২)কে এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে যান মা। মাদ্রাসায় অবস্থান করার পর শিক্ষকরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সহোদেরের প্রতিভা বুঝতে পারেন। ফলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় হুজুরদের মুখ থেকে শুনে শুনেই পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন তারা। এই দুই সহোদর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, শাহরাস্তি উপজেলার কেশরাঙ্গা গ্রামের প্রয়াত মোখলেছুর রহমান ও মা রূপবান বেগমের পুত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সহোদর আলআমিন (১৪) ও ফয়সাল (১২)। পিতার মৃত্যুর পর গত পাঁচ বছর আগে আলআমিন ও ফয়সালকে তাদের মা ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে যান। এরপর মাদ্রাসার কর্ণধার ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক এই এতিম শিশুদের তাঁর সন্তানের মতো আদর-যত্ন করেন, শিক্ষাদান ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তারা দুজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তাদের অসম্ভব মেধা দেখে হুজুর তাদেরকে বিশেষভাবে গড়ে তোলার ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগান এবং সফলতাও পান।

হাফেজ মাওলানা জাকির জানান, দুই এতিম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজ আল আমিন ও ফয়সাল পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা হুজুরদের মুখে শুনে শুনেই মুখস্থ করেছেন। পৃথিবীর আলো দেখতে না পারলেও পবিত্র কোরআনের আলোয় আলোকিত তারা। তাদের সুরেলা কণ্ঠের কোরআন তেলাওয়াত মুগ্ধ করেছে পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে। হাফেজ আলআমিন গত বছর জাতীয় পর্যায়ে অন্ধ হাফেজদের কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এছাড়াও এই বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাতীয় কোরআন প্রতিযোগিতায় তারা দুই ভাই উপজেলা ও জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে বিভাগীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে হাফেজ আল আমিন ও ফয়সালের মতো আরো প্রায় ১শ' জন এতিম শিক্ষার্থীসহ ৩শ' জন শিক্ষার্থী এই এতিমখানায় লেখাপড়া করছেন। এ বছর এই মাদ্রাসার আলআমিন ও ফয়সালসহ ৪০জন শিক্ষার্থী হিফজ শেষ করায় তাদের পাগড়ি প্রদান করা হয়।

মাদ্রাসা ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক জানান, হাফেজ আলআমিন ও ফয়সালকে মহান আল্লাহপাক বিশেষ রহমত ও মেধাশক্তি দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দেশের অন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজদের বিশেষ প্রযুক্তি বা বিশেষ কৌশলে পড়াশোনা করানো হলেও আমাদের সেই প্রযুক্তি নেই। তারপরও এই দুই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পবিত্র কোরআন না দেখে হুজুরদের মুখে শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছে। এক পারা দু পারা নয়, মহান আল্লাহপাকের পুরো ৩০পারা কোরআন শরীফই মুখস্থ করে ফেলেছে। হাফেজ আলআমিন ও ফয়সাল আমাদের ৩শ' শিক্ষার্থীর মধ্যে মাশাআল্লাহ অসম্ভব মেধাবী। তাদের কোরআন তেলাওয়াত উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে তোলে। এখন পবিত্র কুরআনকে এক নজর দেখতে প্রবল ইচ্ছা তাদের।

তাদের শিক্ষক মাওলানা বজলুল হক আজহারী বলেন, শিক্ষকরা একটি আয়াত করে বলে দেওয়ার পর সেটি শুনে শুনে ৩০পারা পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে তারা। তারা দুজন আমাদের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা করায় বাইরের অনেকে বুঝতোও না তারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মহান আল্লাহ যেনো বিশেষ রহমতে পবিত্র কোরআনকে তাদের অন্তরে গেঁথে দিয়েছেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সহোদর হাফেজের মা রূপবান বেগম জানান, স্বামী হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা, তখন দুই সন্তানকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে যাই। হুজুররা আমার সন্তানদের কোরআনে হাফেজ বানিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়