প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২২:০৫
ফরিদগঞ্জে গণপিটুনির ১৯দিন পর মারা গেলো ১৮ মামলার আসামী
এলাকায় চিহ্নিত চোর হিসেবে পরিচিত এবং কমপক্ষে ১৮ মামলার আসামী গণপিটুনির শিকার হয়ে ১৯দিন পর ঢাকায় হাসপাতালে মারা গেছেন। বাবু গাজী নামে এই ব্যক্তির বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের চররাঘবরায় গ্রামের গাজী বাড়িতে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে গত ৯ নভেম্বর রাতে। এরপর ১৯দিনের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মৃত্যুবরণ করার পর বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) তার লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পোস্টমর্টেমের জন্যে চাঁদপুর প্রেরণ করা হয়।
এদিকে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকায় বাবু গাজী একজন চিহ্নিত চোর হিসেবে পরিচিত। থানা পুলিশের হিসেবে তার নামে কমপক্ষে ১৮টি মামলা রয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর বাবু গাজীকে এলাকার জনগণ বেদম পিটুনি দেয়। এতে সে মারাত্মক আহত হয়। খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরে একটি প্রাইভেট হাসাপাতলে তিনি ২৭ নভেম্বর বুধবার বিকেলে মারা যান। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) চাঁদপুরে ময়না তদন্ত শেষে তাকে বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত ৫ নভেম্বর বাবু গাজী সাবেক ইউপি সদস্য আমানুল্লাহর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে নিজেই এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছে গোয়ালভাওর বাজারে।
এলাকার শফিউল্লাহ গাজীর ছেলে মনসুরের ঘরের কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।
ভাটিয়ালপুর এলাকায় আরিফ নামে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। ভাটিয়ালপুর এলাকার লোকজন জানান, বাবু চোরের জন্যে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে এলাকাবাসী। তার মৃত্যুর খবর শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে এলাকার অনেকেই।
এদিকে নিহত বাবু গাজীর মা শাহিদা (৫৫) জানান, ঘটনার দিন রাতে বেশ কিছু সংখ্যক লোকের সাথে বাবুর বোন পাখির বাড়িতে জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঝগড়া বাঁধে। সেখানে বাবুকে বেদম মারা হয়। মার খেয়ে বাবু নিজ বসতঘরে আশ্রয় নেয়। সেখানেও লোকজন বসতঘরের ভেতরে প্রবেশ করে বাবুকে পেটায়। পরে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় বাইরে। এক পর্যায়ে বাবু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হারুনের দোকানের অদূরে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে হামলাকারীরা।
বাবুর স্বজনদের দাবি, ওইদিন বাবুকে বিনা অপরাধে মারা হয়েছে। হাছান (৫) ও হোসেন (১ বছর) নামে দুজন ছেলে সন্তান রয়েছে বাবু গাজীর।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম জানান, বাবু গাজীর বিরুদ্ধে থানায় অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। সে এলাকার চিহ্নিত চোর বলে জানা গেছে। তাকে গণপিটুনি দিয়ে আহত করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। থানায় লাশ নিয়ে আসার পর আমরা পোস্টমর্টেমের জন্য চাঁদপুর পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।