প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৫
ধীরগতিতে চলছে চাঁদপুর নৌ-বন্দরের নির্মাণ কাজ, বাড়ছে দুর্ভোগ
আরামদায়ক ভ্রমণের কারণে চাঁদপুর-ঢাকা নৌ রুট এই অঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিলাসবহুল লঞ্চে যাত্রীসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
|আরো খবর
স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এক বছর ৪ মাস আগে এই বন্দরে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এখনও খুব ধীরগতি। যার ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে এই বন্দর দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের।
তবে নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।
চাঁদপুর শহরের মাদরাসা রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনা নদীর পাড়ে চলছে চাঁদপুর আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণ কাজের তোড়জোড়। যেখানে ১৫০০ স্কয়ার মিটার এলাকায় ৪তলা বিশিষ্ট তিনটি ভবন নির্মাণসহ স্থাপন করার কথা রয়েছে পন্টুন, গ্যাংওয়ে, পার্কিং ইয়ার্ড, এক্সটার্নাল ব্রিজ। একই সঙ্গে চলছে বন্দরে যাতায়াতের রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ। ভবন নির্মাণের জন্যে করতে হবে ৩১০টি পাইলিং। ইতোমধ্যে ১৫০টি পাইলিং-এর আংশিক ও ৮৬টির কাজ সম্পন্ন হলেও এরই মধ্যে কেটে গেছে ১৬ মাস। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ ২৪ মাস। ২০২৩ সালের আগস্টে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের মে মাসে। অথচ এখনও বাকি পড়ে আছে প্রকল্পের ৮০ ভাগেরও বেশি কাজ।
ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরটি আধুনিকায়নে ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এর পর থেকে উন্নত সেবার আশায় বুক বাঁধে এই বন্দর ব্যবহারকারী চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, শরীয়তপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার হাজারো যাত্রী।
বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্টর জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২ দশমিক ২ একর জমিতে নির্মিত আধুনিক নৌ-বন্দর প্রকল্পের ব্যয় প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ধরা হলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ কোটিতে। যার নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘তমা কনস্ট্রাকশন’।
লঞ্চযাত্রী মামুন মাল বলেন, আধুনিক নৌ-টার্মিনালের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। এখনও দৃশ্যমান কোনো কিছুই করেনি। কবে এই কাজ শেষ হবে হিসাব নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনায় এমন ধীরগতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। এতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ থেকে আসা ঢাকাগামী আরেক যাত্রী গিয়াস উদ্দিন বলেন, অস্থায়ী এই নৌ টার্মিনালে নেই কোনো বসার স্থান, টয়লেট কিংবা যাত্রী ছাউনি। পরিবার পরিজন নিয়ে যাতায়াতের সময় বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে অসুস্থ ও নারীদের ভোগান্তি বেশি হয়। ভেবেছিলাম নৌ-টার্মিনালের কাজ দ্রুতই শেষ হবে এবং আমরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবো। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হোক।
বিআইডব্লিউটিএ’র জেলা বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. বছির আলী খান বলেন, চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন ছোট-বড় অর্ধশতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করলেও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। বন্দরের কাজ শেষ না হওয়ায় যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সময়ই তারা আমাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করে। কিন্তু কাজের যেই গতি তাতে কবে নির্মাণ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। আমরা চাই কাজ দ্রুত শেষ হোক, যেন যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, আমাদের এই কাজের জন্য মেয়াদ ছিল ২৪ মাস। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস পার হলেও কাজ শেষ হয়েছে ১৬ শতাংশের মতো। পাইলিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় মাটির নিচে ১০ মিটার পর্যন্ত বোল্ডার রয়েছে। এসব কারণে পাইলিং কাজ শেষ করতে সমস্যায় পড়তে হয়। পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও বিআইডব্লিউটিএ-এর টেকনিকাল টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজেল হ্যামার দিয়ে পাইলিং-এর কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৬টি পাইলিংয়ের কাজ পুরোপুরি ও ১৫০টির আংশিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, নভেম্বর মাসের মধ্যে পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ভবনের কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম