প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২২, ২০:০০
হাজীগঞ্জ পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ পৌর পরিষদের
হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত-৩ (ওয়ার্ড নং-৭, ৮ ও ৯)-এর নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার কর্তৃক অপপ্রচার করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পৌর পরিষদ। পৌর পরিষদের পক্ষে ১ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে পৌরসভা কক্ষে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পৌর পরিষদ। সকলের পক্ষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ জাহিদুল আজহার।
|আরো খবর
জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর সোমবার বিকেলে ওই সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি সম্বলিত একটি লেখা পোস্ট করেন। ঠিক তার একদিন পর ১ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে একই ফেসবুক আইডিতে লাইভ বক্তব্যের মাধ্যমে পৌর মেয়র ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। এছাড়া ওই পোস্টে তিনি ও তার স্বামীকে হুমকি প্রদান করায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করেন।
ফেসবুকে দেয়া মিনু আক্তারের অভিযোগের বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে পৌর পরিষদ লিখিতভাবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। যা উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
প্যানেল মেয়র-১ জাহিদুল আজহার বলেন, মিনু আক্তার তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পৌর মেয়র ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। যা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে শৃঙ্খলা পরিপন্থী। একটি মহল হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পৌরসভা ও মেয়রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তাকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রকৃত ঘটনার সূত্রপাত উল্লেখ করে জাহিদুল আজহার বলেন, সম্পত্তিগত বিরোধের জেরে আমান উল্যাহ্ মৃধাসহ ৫ ব্যক্তি বাদী হয়ে গত ৩১ জুলাই পৌরসভায় একটি অভিযোগ (নং-১৯৫/২০২২) করেন। ওই অভিযোগের ২নং বিবাদী হলেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের পিতা আনোয়ার হোসেন ছিডা। পরে অভিযোগটি নিরসনকল্পে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেন ও ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মোঃ কবির হোসেনকে দায়িত্ব প্রদান করেন পৌর মেয়র।
দায়িত্ব পেয়ে কাউন্সিলরগণ অভিযোগের বাদী ও বিবাদীকে পরপর ৩টি লিখিত নোটিস জারি করেন। উক্ত নোটিসের প্রেক্ষিতে বাদী পক্ষ উপস্থিত থাকলেও বিবাদী পক্ষ অনুপস্থিত থাকেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলরগণ বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি মর্মে মেয়রের কাছে একটি লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২নং বিবাদী আনোয়ার হোসেন ছিডার মেয়ে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার উপরোক্ত ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়। সর্বশেষ গত ৩১ তারিখে পৌর পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় মিনু আক্তার উপস্থিত হলেও উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তিনি হাজিরা শীটে স্বাক্ষর না করে চলে যান বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ জাহিদুল আজহার।
মোহাম্মদ জাহিদুল আজহার আরো বলেন, মিনু আক্তারের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। যার উদ্বেগ প্রকাশ করছি আমরা এবং এসব ঘটনার ইন্ধনকারীদের শাস্তি দাবিসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
একই সময়ে প্যানেল মেয়র-৩ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর-১ (ওয়ার্ড নং-১, ২ ও ৩) রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা চারজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রয়েছি। পৌর মেয়র আমাদেরকে সন্তানের মতো দেখছেন। তিনি সকল বিষয়ে স্ব-স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করে আমাদেরকে দায়িত্ব প্রদান করতেন। অথচ মিনু আক্তার উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করছেন। তার কারণে আমরা অন্য তিন নারী কাউন্সিলর লজ্জিত।
৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাসীন ফারুক বাদল বলেন, মিথ্যা কথা ছড়ানো গেলেও তা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। মিনু আক্তার উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে পৌর মেয়র ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে যে অশোভন ও অসলগ্ন কথাবার্তা বলছেন পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যদি তার (মিনু আক্তার) লাইভ বক্তব্যটি দেখে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছেন পাশ থেকে তাকে কে বা কারা তাকে কথাগুলো শিখিয়ে দিচ্ছে। এতেই প্রতীয়মান হয় এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
মিনু আক্তার মানসিকভাবে সুস্থ আছে কি-না এমন প্রশ্ন করে সংরক্ষিত-২ (ওয়ার্ড নং-৪, ৫ ও ৬)-এর নারী কাউন্সিলর মমতাজ বেগম মুক্তা বলেন, অফিস চলাকালে আমরা চারজন নারী কাউন্সিলর থেকেছি। সুখে-দুঃখে পরিবারের কথা একজন অন্যজনের কাছে শেয়ার করেছি। অথচ পরিবারের কথা জানলাম, কিন্তু মেয়রের বিরুদ্ধে তার অভিযোগের কথা জানলাম না। মূলত উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সে এই অভিযোগ করছে।
সংরক্ষিত-৪ (ওয়ার্ড নং-১০, ১১ ও ১২)-এর নারী কাউন্সিলর নাজমুন নাহার ঝুমু বলেন, মিনুর কথা (অভিযোগ) অবান্তর ও অবাস্তব। আমার মনে হয়, তার সমস্যা আছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাইনুদ্দিন মিয়াজী, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলাউদ্দিন মুন্সী, ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন তপদার, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহআলম, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেন, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মোঃ কবির হোসেন, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ আজাদ হোসেন, ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ বিল্লাল হোসেন, ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাদেকুজ্জামান মুন্সী, ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ শাহআলমসহ পৌরসভার কর্মকর্তাবৃন্দ।