শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩, ০০:০০

উন্নয়ন সমান্তরাল দুর্নীতি
বিমল কান্তি দাশ

দেশ আজ মুক্ত-স্বাধীন। লাল-সবুজের একখানা পতাকা পৎ পৎ করে উড়ছে আর নিরবধি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। পাক হানাদার বাহিনী এমন কোনো স্তর বাকি রাখেনি, যেখানে তাদের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ এবং নির্যাতন চালায়নি। ভাগ্য ভালো তাদের নাম ‘পাক-পবিত্র’ শব্দ দ্বৈততা ব্যবহৃত হয়নি। তারা আকৃতিতে মানবতা বিবর্জিত এবং হিংস্রতায় প্রতিপালিত মানুষ। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাক-হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরসহ যে সমস্ত পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিল, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তা জার্মানীর নাৎসী বাহিনীর পৈশাচিক অত্যাচারকেও হার মানিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত বাঙালিদের বিষাদণ্ডসিন্ধুতে পাক-বাহিনীকে আবগাহন করতেই হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ঢাকা সেনানিবাসে অস্ত্রশস্ত্রসহ ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করেন, আর আত্মসমর্পণ দলিলে দস্তখত করেন লেঃ জেনারেল এ.কে. মিয়াজি। একটা সুসংগঠিত সেনা বাহিনীর আত্মহনন সদৃশ আত্মসমর্পণ দৃশ্যের মতো করুণ পরিণতি সমগ্র বিশ্ব সেদিন তাকিয়ে দেখেছে। সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রায় ৯৩ হাজার সৈন্য ছিলো। এ লজ্জা পৃথিবীর ইতিহাসে অতিশয় নির্মম। যাবার বেলায় এমন একটা কিছু রেখে গেলো, যা তাদের প্রেতাত্মা রূপে বাংলাদেশের সর্বভূতে বিরাজমান। আর তাই বাংলাদেশের জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে সর্বত্রই পাক-প্রেতাত্মার বিক্ষিপ্ত ঘোরাঘুরি এবং একটা অস্থির পরিবেশ বিরাজমান। দ্রব্যমূল্যে মানুষের নাভিশ্বাস। শিক্ষা ক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ের আকাল। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি। উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব। শিক্ষা খাতের ব্যয় অধিকাংশই কাঠামোগত। দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। আর আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন যন্ত্র। চিকিৎসক রোগীর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ বলেই প্রতিনিয়ত মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে।

বাল্যকালে বাল্যশিক্ষার পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে শিশুরা টাচ মোবাইলে আসক্ত হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি শিক্ষার ওপর যথাযথ গুরুত্বারোপ করে ইংরেজি শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে শিক্ষার মৌলিকত্ব আনয়নের পর পেশাগত শিক্ষায় পূর্ণাঙ্গ সফলতা আসবে। মৌলিক শিক্ষা যদি পেশাগত শিক্ষার ভিত্তি না হয় তবে তা হবে অপরিপক্ক কারিগরি। আর সেটি হবে উন্নয়নের পরিপন্থী। বাংলার রাজনীতি আজ কূটনীতির বেড়াজালের ফাঁদে তিলে তিলে বাড়ছে। এখানেও পাক-প্রেতাত্মারা পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের পাগলা-ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই। এখানে কারসাজি তো অবশ্যই রয়েছে। যদি বাস্তবতা থাকতো, তবে জিনিসপত্রের সরবরাহ কমে যেত। এ কুকাজে ক্রিয়াশীলরা কেউ বা মজুতদার, কেউবা ধান্দাবাজ, কেউবা মধ্যস্বত্বভোগী, কেউবা পরোক্ষভাবে রাজনীতিবিদ ইত্যাদি। তবে শেষ কথা হলো, পাটায়-পুতায় ঘষাঘষিতে মরিচের দফা শেষ।

একটা কথা স্মৃতিতে রাখা ভালো যে, এই সোনার বাংলায় ১৯৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০ এবং ৭১-এর মানুষের বংশগতির ধারায় উত্তর-পুরুষগুলোই চলমান আছে। এখানে ভিনদেশী কোনো বসতি গড়ে নাই। তবে বসন্তের কোকিলের প্রাচুর্যে দল আজি টইটম্বুুর। এরা কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতের বন্ধু হবে না। শীতে আসা অতিথিগুলো শীতে আসে এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে যথা সময়ে আবার সাইবেরিয়াতে চলে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল অন্তত ২০ বার। দৈবক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও বারবারই হতাহতের ঘটনা, কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায়।

একসময় ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতবর্ষকে শৃঙ্খলমুক্ত করার জন্যে মুক্তিকামী ভারতীয়রা যেসব কলা কৌশল অবলম্বন করতো, তাতেই ব্রিটিশরা সরাসরি সর্বোচ্চ শাস্তি বিধান প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করতো। যেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের দীর্ঘ সুযোগ বা বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা কোনোক্রমেই হতো না।

স্বাধীন বাংলাদেশে অপরাধের ধরণ পাল্টে গেছে। যেটি মানবতা বিরোধী-সমাজ বিরোধী-আইন বিরোধী-রাষ্ট্র বিরোধী এবং সংস্কৃতি বিরোধী। এগুলো বাংলাদেশে প্রণীত নতুন আইনে পদদলিত হওয়াই শ্রেয়। একদিকে যেমন দেশ যোগাযোগের ডিজিটাল উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে, অন্যদিকে সমান্তরাল ভাবে দেশের সর্বস্তরে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে দুর্নীতির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। একমাত্র সরকারের মাধ্যমেই সরকারি প্রত্যেক অফিসে অন্য একজন পরিচালক নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি দমন করা যেতে পারে। যেখানে অভিযোগ বাক্সের চাবি একমাত্র পরিচালকের দায়িত্বে থাকতে হবে। তাহলেই স্বচ্ছতা আসতে পারে।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়