ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে বিশ্ব শান্তিকল্পে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)-এর আয়োজনে চাঁদপুর পুরাণবাজার ঘোষপাড়াস্থ শ্রী শ্রী গোবিন্দ মন্দিরে (ইসকন) গীতা জয়ন্তী মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উপলক্ষে গতকাল ৪ ডিসেম্বর রোববার সকাল থেকে মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, যজ্ঞ, গীতা দান, ভজন কীর্তন মেলা, প্রবচন ও অনুকল্প প্রসাদ বিতরণ। হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে উৎসবস্থল পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। শতাধিক ভক্তের মাঝে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী সম্মলিত পবিত্র গীতা গ্রন্থ দান করা হয়। ভক্তদের হাতে পবিত্র গীতা গ্রন্থ তুলে দেন অনুষ্ঠানের মধ্যমনি ইসকন বাংলদেশ সহ- সভাপতি পরমপূজ্যপাদ শ্রীমৎ ভক্তি বিনয় স্বামী মহারাজ।

তিনি জগতের মঙ্গল কামনা করে বলেন, আমরা সকলেই পারমার্থিক সুখ খুঁজি। আর যখন তা না পাই, তখন ঈশ্বরকে দোষারোপ করি। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করি না ঈশ্বর সন্তুষ্টি কামনায় আমরা কতটুকু সাধন ভজন করেছি। প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হলেই মানসিক সুখ শান্তি লাভ করা যায় না, মনে রাখতে হবে ঈশ্বর সাধনা ছাড়া, মানুষের কল্যাণকর কাজ ছাড়া মানসিক শান্তি লাভ করা যায় না। পারমার্থিক সুখ লাভ করতে হলে নিষ্কাম কর্ম করতে হবে। অহঙ্কার ত্যাগ করে ঈশ্বর চিন্তা করতে হবে। ঈশ্বরের সাধন ভজনেই মুক্তি লাভ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, আজ হরিবাসর, একাদশী ব্রত, আজকের দিনে গীতা দান করা, গীতা পাঠ করা, গীতা শ্রবণ করা খুবই ভাগ্যের ব্যাপার, ভগবৎ কৃপা ছাড়া এমন ভালো কাজ করা দুরূহ ব্যাপার, শুধু দান করলেই হবে না, সে দান হতে হবে সার্ত্বিক দান। ধর্মকে না জানলে সে জ্ঞান নিজের মধ্যে জাগ্রত হবে না। আজ সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ধর্ম প্রচার করে যাচ্ছেন জগতের মঙ্গল সাধনায়, আজ পবিত্র গীতা পাঠের মধ্যে দিয়ে আপনারা এ স্থানকে বৃন্দাবনধামে পরিণত করেছেন। আপনাদের এমন সুন্দর আয়োজনের মধ্যে দিয়েই আমরা সকল স্থানকে বৃন্দাবন ধামের মত পুণ্যস্থানে পরিণত করতে পারবো। জগতের মানুষের মঙ্গলসাধন করতে পারবো। তিনি সকলকে ঈশ্বর সাধনায় ব্রতী হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইসকন চাঁদপুর জেলা সভাপতি ও পুরাণবাজার ঘোষপাড়াস্থ গোবিন্দ মন্দিরের (ইসকন) অধ্যক্ষ জগদানন্দ পন্ডিত দাস।

অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ইসকন ভক্ত অনুরাগীসহ ভক্তসাধারণ উৎসবস্থলে উপস্থিত হতে থাকেন। তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত হয়ে উঠে। অনুষ্ঠানে ভক্তি শ্রদ্ধাসহকারে শতাধিক ভক্ত শ্রীমদ্ভাগবত গীতা থেকে ১৮ অধ্যায় পাঠ করেন। এরা হলেন জীবন দেবনাথ, অনাদি নিতাই কৃপা দাস, সূবর্ণ অবতার দাস, নিতাই ভগবান, সিদ্ধ গৌর কিশোর দাস, নিরঞ্জন কিশোর দাস, ভক্ত রুহিদাস, গৌর নিতাই ঘোষ প্রমুখ। বৈশ্বিক মহামারী করোনা থেকে মুক্তি ও বিশ্ব শান্তিকল্পে গতবছরও গীতা জয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করেন ইসকন গোবিন্দ মন্দির। তবে পরিস্থিতির কারণে ব্যাপক ভক্ত সমাবেশ না হলেও এ বছর অনুষ্ঠিত শ্রী শ্রী গীতা জয়ন্তী মহোৎসবে ব্যাপক ভক্ত উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।