বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষানেতাদের অন্যতম শীর্ষ সংস্থা এসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটিজ অফ এশিয়া প্যাসিফিক (এইউএপি) আগামী ১৪-১৬ নভেম্বর ২০২২ ঢাকায় ১৫তম সাধারণ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্বাগতিকতায় ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব যুগে তথ্যপ্রযুক্তি এবং গুণগত শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এইউএপির এ সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের শিক্ষানেতাদের সর্ববৃহৎ সমাগম ঘটবে ঢাকায়।

সম্মেলনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ বিশ্বের ৫০টি দেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, উপাচার্য, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অফিসারবৃন্দ ও শিক্ষাবিদরাসহ ৪০০-এর বেশি প্রতিনধি অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। এইউএপি ১৯৯৫ সালে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের ৫১ বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করে যাত্রা শুরু করে এবং কালক্রমে এটির সদস্য সংখ্যা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়ে সারা বিশ্বব্যাপি এর প্রসার ঘটেছে। করোনা মহামারির পর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্বাগতিকতায় এসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটিজ অফ এশিয়া প্যাসিফিক (এইউএপি) আগামী ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সংস্থাটির ১৫তম সাধারণ অধিবেশনের জন্য ঢাকায় সর্ব প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ২০২০ সালে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ১৪তম সাধারণ অধিবেশনের পর এই বছর ঢাকায় শারীরিক উপস্থিতির ভিত্তিতে অনুষ্ঠিতব্য এতো বড় সম্মেলন ইতিহাসের পাতায় স্থানপ্রাপ্তির উপযোগিতা অর্জন করতে যাচ্ছে।

এইউএপি-এর লক্ষ্য হলো, সংস্থাটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ও সহযোগিতার সুহৃদ সম্পর্ক বৃদ্ধি করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সর্বোপরি উন্নয়নের জন্য একটি আধুনিক ও কার্যকর মঞ্চ তৈরি করা। এই লক্ষ্যে এটি একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এইউএপি-এর প্রতিষ্ঠাতা দেশ থাইল্যান্ডের সুরনারি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি-এর চেয়ারম্যান ড. উইচিট শ্রীসানের নেতৃত্বে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আরও ২০জন বিশিষ্ট শিক্ষানেতার সমন্বয়ে এর উপদেষ্টা পরিষদ গঠন হয়। সভাপতি হিসেবে ফিলিপাইনের ড. পিটার পি লরেলের নেতৃত্বে ১০জন সদস্যের একটি কার্যকরী কমিটি গঠন হয়, যেখানে বাংলাদেশের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান প্রথম সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এইউএপি তিন সদস্যের সচিবালয় ও ৫টি সাব কমিটি গঠনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা বর্তমান উচ্চ শিক্ষায় ৫টি বিশেষ দিকের উপর দৃষ্টিপাত করে। যেমন : ডিজিটাল রূপান্তর, গবেষণা ও উদ্ভাবন, গুণমান নিশ্চিতকরণ, যোগাযোগ ও দেশ অধ্যায়। এই সংস্থার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অলিম্পিয়াড, গবেষণা তহবিল ও বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

মহামারি পরবর্তী সময়ে ঢাকায় আয়োজিত এই ১৫তম সম্মেলনে শিক্ষানেতারা তথ্য প্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে আলোচনা করবেন। এছাড়া অন্যান্য আরো ৬টি নি¤েœাক্ত বিষয়ের ওপর এই আলোচনা দৃষ্টিপাত করবে :- ১. করোনা পরবর্তীতে কর্মসংস্থানের জন্য অনলাইন থেকে মিশ্র শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্ভাবন, ২. কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে ফলাফল নির্ভর শিক্ষার জন্য পরীক্ষামূলক ও ব্যবহারিক শিক্ষার প্রচলন, ৩. প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা প্রদান, ৪. উদ্ভাবন- ইনকিউবেশন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও গতিশীলতা এবং ৬. অনুষদের উন্নয়ন ও গবেষণা। এই আলোচনার বিষয় সমূহ দুই বছর করোনা মহামারির পরবর্তী সময়ে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে উদ্বেগের এবং সমাধানের ক্ষেত্রে পূর্ণতা আনবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এইউএপি’র বর্তমান সভাপতি ড. পিটার পি লরেল আলোচনা বিষয়বস্তুসমূহের ওপর আলোকপাত করতে এইউএপি-এর সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নেতাদের এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এইউএপি-এর বর্তমান কার্যকরী কমিটির ১ম সহ-সভাপতি ড. মো. সবুর খান ব্যক্তিগতভাবে ২০০টিরও বেশি সদস্য ও অসদস্য রাষ্ট্রসমূহে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এই সম্মেলনে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তর, মিশ্র শিক্ষা ব্যবস্থা, উদ্ভাবনী মূলায়ন, আন্তর্জাতিক গতিশীলতা ইত্যাদি বিষয়সমূহে আলোকপাতের মাধ্যমে বিশ্ব শিক্ষায় আধুনিক শিক্ষার ব্যাপক প্রভাব পড়বে এই আশাবাদে ঢাকার ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি এইউএপি-এর ১৫তম অধিবেশনকে আমন্ত্রণ জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

এছাড়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত এই বৃহৎ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষানেতারা ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষানেতাদেরও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব রক্ষার আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্বায়নের এ যুগে ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১১৫টি মেডিকেল কলেজ এবং ২,৫০০টিরও বেশি সাধারণ ও বিশেষায়িত কলেজের সমন্বয়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে এবং মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল মানের সাশ্রয়ী শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।

দেশের শিক্ষা খাতে প্রতি বছর ৩০ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী এদেশে তৈরি হয়, যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম শিক্ষা পরিষেবা শিল্পগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে। এ ইউএপি’র ১৫তম সাধারণ সম্মেলন ভাল মানের এবং সাশ্রয়ী শিক্ষার বিকল্প গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের সুনামকে শক্তিশালী ও দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক শিক্ষা মানচিত্রে বাংলাদেশকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং শিক্ষা পর্যটনকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।