বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

কুমিল্লার দেবিদ্বারে বাবার হাতে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা খুন ॥ হত্যাকারী পিতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব
অনলাইন ডেস্ক

গত ৭ নভেম্বর কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শিশু ফাহিমার পিতা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নম্বর-৪৬৪ তারিখ ১১ নভেম্বর ২০২১। নিখোঁজের পর ভিকটিমের পিতা আমির হোসেন ৭ ও ৮ নভেম্বর আশ্বপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেন। এমনকি গত ৮ নভেম্বর ২০২১ তারিখ ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন কবিরাজকেও খবর দেয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১৪ নভেম্বর পুলিশ্ব কর্তৃক কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর জনৈক নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে সরকারি খালের ডোবা থেকে নিহত ভিকটিমের বস্তাবন্দী লাশ্ব উদ্ধার করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে মোঃ আমির হোসেন ভিকটিমের লাশ্বটি তার মেয়ে ফাহিমা আক্তারের বলে সনাক্ত করে।

উক্ত বিষয়ে ভিকটিমের বাবা ঘাতক আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে, যার মামলা নং-১১, তারিখ- ১৪ নভেম্বর ২০২১, ধারা- পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২/২০১/৩৪। উক্ত নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। র‌্যাব বর্ণিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের জন্যে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১১-এর অভিযানে গত ১৬ নভেম্বর রাতে কুমিল্লার দেবিদ্ধার ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ভিকটিমের পিতা ঘাতক মোঃ আমির হোসেন (২৫), মোঃ রবিউল আউয়াল (১৯), মোঃ রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসাঃ লাইলি আক্তার (৩০), এবং (৫) মোঃ সোহেল রানা (২৭)কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এই নির্মম হত্যাকা-ের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ভিকটিমের বাবা মোঃ আমির হোসেনের সাথে গ্রেফতারকৃত মোসাঃ লাইলি আক্তারের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো। গত ৫ নভেম্বর মোসাঃ লাইলি আক্তার ও আমির হোসেনকে মেয়ে ভিকটিম ফাহিমা আক্তার আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। এতে লাইলি আক্তার ও আমির হোসেন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং লাইলি আক্তার এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমির হোসেনকে চাপ দিতে থাকে। লাইলি আক্তারের প্ররোচনায় গত ৬ নভেম্বর ভিকটিমের পিতা ঘাতক আমির হোসেন গ্রেফতারকৃত অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ভিকটিম শিশু ফাহিমা আক্তারকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে এবং আমির হোসেন লাইলি আক্তারকে পরিকল্পনা বাস্তাবায়নের বিষয়টি জানায়।

গ্রেফতারকৃত ঘাতক আমির হোসেন লাইলি আক্তারকে নিয়ে আরো পরিকল্পনা করে মেয়েকে হত্যা করার পর সে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স অথবা প্রয়োজনে হত্যা করে হলেও লাইলি আক্তারকে বিয়ে করবে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর রাতে মোঃ রেজাউল ইসলাম ইমনের ফার্নিচার দোকানে ভিকটিমের পিতা মোঃ আমির হোসেন টাকার বিনিময়ে মোঃ রবিউল আউয়াল, মোঃ রেজাউল ইসলাম ইমন ও মোঃ সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে ভিকটিম ফাহিমা আক্তারকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা করার জন্যে ধারালো ছুরি ও হত্যার পর লাশ্ব লুকানোর জন্য দুইটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তারা ফাহিমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গত ৭ নভেম্বর বিকেল ৩টায় কৌশ্বলে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিমকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় ও চাঁপানগর রাস্তার মোড়ে সোহেল রানার সিএনজিতে করে ঘাতক মোঃ আমির হোসেন ও তার অন্যান্য সহযোগীরা ভিকটিমকে নিয়ে রওনা করে। তারা সিএনজিতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাফেরা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় দেবিদ্বার পুরাণবাজারের দক্ষিণে নদীর তীরবর্তী নির্জন স্থানে ভিকটিম ফাহিমাকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর লাইলি আক্তারের উপস্থিতিতে আমির হোসেন তার মেয়ে ফাহিমার মুখে চেপে ধরে রাখে ও সর্বপ্রথম নিজে নিজ মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। রবিউল ভিকটিমের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, রেজাউল ইসলাম ইমন ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পায়ে ও শ্বরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, সোহেল ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পিছনে ও শ্বরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। পরবর্তীতে সহযোগীরা ভিকটিমের হাত-পায়ে চেপে ধরে রাখে এবং পিতা আমির হোসেন তার মেয়ে ভিকটিম ফাহিমা আক্তারের গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হঠাৎ করে ঘটনাস্থলের আশেপাশে সম্ভাব্য লোকজনের চলাচল আচ করে অতিদ্রুত ভিকটিমের লাশ্বটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে রওনা করে। পথিমধ্যে সুবিধাজনক স্থান না পেয়ে তারা লাশ্বটি রেজাউল ইসলাম ইমনদের গরুর ঘরে একটি ড্রামের ভিতরে লুকিয়ে রাখে।

গত ৯ নভেম্বর রাত ৯টায় সোহেল রানার সিএনজিতে করে মোঃ আমির হোসেন, মোঃ রবিউল আউয়াল, মোঃ রেজাউল ইসলাম ইমন ভিকটিমের বস্তাবন্দি লাশ্বটি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর জনৈক নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে সরকারি খালে ডোবার পানিতে ফেলে আসে। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কোম্পানীগঞ্জে একটি শিশুর লাশ্ব পাওয়া গেছে এমন সংবাদ পেয়ে আমির হোসেন তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে তাদের মনে বিশ্বাস স্থাপন করার উদ্দেশ্যে সেখানে যায় এবং বিষয়টি গুজব বলে পরিবারের সদস্যদের জানায়। পরবর্তীতে গত ১৪ নভেম্বর ভিকটিমের লাশ্ব পাওয়ার পর ভিকটিমের বাবা ও হত্যাকারী মোঃ আমির হোসেন (২৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ার পর সন্ধানের উদ্দেশ্যে এবং লাশ্ব পাওয়ার পর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য প্রকৃত হত্যাকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পোস্ট করে, যাতে তাদের উপর কারো সন্দেহ না হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়