বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বাংলাদেশের চাপে হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত? কী বলছেন বিশ্লেষকরা

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের চাপে হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত? কী বলছেন বিশ্লেষকরা

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও গণবিপ্লবের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তবে পালানোর আগে ছাত্র ও জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ঠেকাতে হাসিনা সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন।

সীমাহীন সেই নৃশংসতায় নিহত হন শত শত মানুষ। আহত হন হাজারো ছাত্র-জনতা। এমন অবস্থায় শেখ হাসিনাকে তার শাসনামলে হওয়া ‘নৃশংসতার’ অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্যে তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে।

আর এতে করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেমে যাচ্ছে তলানিতে। ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে হংকং-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট আকাশপথে ভারতে পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। হাসিনার দেড় দশকের এই শাসনামলকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে নির্বাচনী কারচুপি এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিচারের মুখোমুখি করার জন্যে হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবি করছে দেশের জনগণ। ভারতীয় সংবাদসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘তাকে (হাসিনাকে) ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। তিনি যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ বিচার করার জন্যে আমরা তাকে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে রয়েছেন এবং সেখান থেকেই মাঝে মাঝে কথা বলছেন। এটা সমস্যা তৈরি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা ভুলে যেতাম। মানুষও এটা ভুলে যেত, যদি তিনি নিজের জগতেই থাকতেন। কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন এবং দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, কেউই এটা পছন্দ করছে না।’

এই মন্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস স্পষ্টতই গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার বক্তব্যের কথাই উল্লেখ করেছেন। ওই সময় শেখ হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাংচুরের সাথে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত, চিহ্নিত এবং শাস্তি দিতে হবে।

ড. ইউনূস পিটিআইকে বলেন, ‘‘এটা আমাদের বা ভারতের জন্য ভালো নয়। এটি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।’’

এছাড়া বাংলাদেশের বিরোধী দল এবং কর্মীরা এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, গত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সময় পুলিশ এবং হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের সশস্ত্র সমর্থকরা অনেক বিক্ষোভকারীকে গুলি করেছে। তাদের গুলিতে শত শত মানুষ নিহত এবং আরও হাজার হাজার লোক আহত হয়েছেন।

হাসিনাকে বাংলাদেশিদের বিচলিত করে এমন রাজনৈতিক বক্তব্য না দিতেও আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘হাসিনা চুপ থাকলে আমরা ভুলে যেতাম... কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথা বলছেন এবং দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করে না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিবৃতিটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরই আলোকপাত করছে। কিন্তু তার দাবিতে রাজি হয়ে হাসিনাকে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে এমন সম্ভাবনা কম।

হরিয়ানার জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘ভারত হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। যা হয়েছে তা হলো- এখন বাংলাদেশের প্রতিটি কর্মকর্তা এবং স্টেকহোল্ডার শেখ হাসিনা-বিরোধী এবং ভারত-বিরোধী অবস্থান নিতে চায়।’

অবশ্য বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হলে তেমন ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা সম্পর্কে গত শুক্রবার দিল্লিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সে সময় বলেন, হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি এখনও “অনুমান-নির্ভর প্রশ্ন”।

সে সময় তিনি আরও বলেন, “আমরা আগেই বলেছি, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার কারণে খুব অল্প সময়ের নোটিসে ভারতে এসেছিলেন। এই বিষয়ে আমাদের আর কিছু বলার নেই”।

এছাড়া গত মাসে সংসদীয় অধিবেশন চলাকালীন ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো দ্ব্যর্থহীনভাবে হাসিনার নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং ভারতে তার আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করেছিল। তবে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ড. ইউনূসের সর্বশেষ মন্তব্যের জবাব এখনও দেয়নি দিল্লি।

হাসিনার পতনের পর থেকে পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি হাসিনার স্বৈরশাসনকে সমর্থন করার অভিযোগে অভিযুক্ত তার দলের শত শত নেতা-কর্মী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে বা ভারত ও অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে, হাসিনার বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তার সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গত ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ঢাকার একটি নদীবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়।

অতীতে বাংলাদেশি বিভিন্ন ইস্যুতে লেখালেখি করা লন্ডন-ভিত্তিক লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ভারত।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা ও পরিবারের মঙ্গলের জন্য এর আগেও ভারতে থেকেছেন। ভারতীয় আমলাতন্ত্র স্বল্প এবং মাঝারি মেয়াদে হাসিনার প্রতি তাদের এই আতিথেয়তার বিপরীত কিছু করবে, তেমন সম্ভাবনা খুব কম।’

শ্রীরাধা দত্তের দাবি, ভারতে হাসিনার উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতারা ভারতের সঙ্গে সম্ভবত দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ উভয় দেশই অন্যথায় তাদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলতে পারে।

তিনি আরও দাবি করেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে, (বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে) সম্পর্ক ছিল এবং আমরা যুক্ত থাকতে চাই। কারণ এটি উভয় দেশের জন্যে সুবিধাজনক।’

হাসিনার শাসনামলে অবশ্য ভারতের সাথে দৃঢ় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল বাংলাদেশ, বিশেষ করে বাণিজ্যখাতে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উভয় দেশের দ্বি-মুখী বাণিজ্যের আকার বেড়ে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ভারতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি ছিল তৈরি পোশাক। এই সময়ের মধ্যে ভারতে মোট ৩৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে দিল্লির উদ্বেগের কারণেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।

ড. ইউনূস বলেছেন, সংখ্যালঘুদের অবস্থাকে এতো বড়ো আকারে চিত্রিত করার চেষ্টা করার বিষয়টি আসলে অজুহাত মাত্র।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দিল্লির অপ্রমাণিত এসব অভিযোগ ভারতের অভ্যন্তরে ইসলামোফোবিয়াকে উসকে দিতে পারে।

এছাড়া গত মাসে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণেও বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দুম্বার বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার কারণে এই বন্যা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়