প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
জেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্য
চাঁদপুরে বন্যা ও অতিবৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে ১৬ কোটি টাকার মাছ
অবিরাম ভারী বর্ষণ ও বন্যায় চাঁদপুর জেলার পুকুর, জলাশয় ও ঘের তলিয়ে ১৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। গতকাল ২৮ আগস্ট বুধবার দুপুরে জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, চাঁদপুরে উজানের ও বৃষ্টির পানির কারণে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় সবধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে আর বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন পুকুর, দিঘি ও ঘের প্লাবিত হয়ে ১৬ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার চাষ করা বিভিন্ন ধরনের মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান।
জেলা মৎস্য কার্যালয় জানিয়েছে, ১০ থেকে ১২ দিনের ভারী বৃষ্টিতে চাঁদপুর জেলার ৬২টি ইউনিয়নের ১০ হাজার ৮০১টি পুকুর-দিঘি ও ৫৫টি ঘের থেকে ১৬ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রকারের চাষ করা মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে। সেখানে ৬ হাজার ৫০০ পুকুর-দিঘি ও ৫০টি ঘেরের ১৪ কোটি ৯৭ হাজার টাকার মাছ ভেসে যায়। হাজীগঞ্জের ৩৭৪টি পুকুর-দিঘি, ফরিদগঞ্জের ১ হাজার ২৫০টি পুকুর-দিঘি, চাঁদপুর সদরের ৪৫০টি পুকুর-দিঘি, মতলব দক্ষিণের ১২০টি পুকুর-দিঘি, কচুয়ার ৭২টি পুকুর-দিঘি, হাইমচরের ৩২টি পুকুর-দিঘি ও মতলব উত্তরের তিনটি পুকুর-দিঘির মাছ ভেসে গেছে। এখনো এসব এলাকা জলাবদ্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন মৎস্য খামারি ও চাষিরা।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের বলেন, ‘পানিনিষ্কাশনের জন্য আমরা আমাদের দুটি পাম্প চালু রেখেছি। তবে পানি আস্তে আস্তে নামছে। কারণ, নদীতে পানি বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে মানুষ ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট করে নানাভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নষ্ট করে রেখেছেন। এ জন্যে পানি নামতেও সময় নিচ্ছে।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলার মাছচাষি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ১৫ থেকে ২০ জন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ঘেরে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার মাছ চাষ করেছি। কিন্তু টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে আমাদের কোটি কোটি টাকার মাছ বের হয়ে গেছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের কোনো সহযোগিতা করা তো দূরের কথা, কোনো খবরও নেননি।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলার কেরোয়া গ্রামের মাছচাষি মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, তারা কয়েকজন যৌথ পুঁজি বিনিয়োগ করে শতাধিক চর, পুকুর ও মরা ডাকাতিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে অনেক মাছ ভেসে গেছে। এতে তাঁদের অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলার মৎস্য প্রকল্পগুলোর ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টরের মধ্যে ৬৭৫ হেক্টর এলাকায় ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মাছচাষি আছেন। এর মধ্যে সাড়ে সাত হাজার মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
চাঁদপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ হেদায়েত উল্লাহ বলেন, আজ পর্যন্ত জেলার ৬৪টি ইউনিয়নের ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৬ হাজার ৭২৬ মানুষ। এখন পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন ৯ জন।