প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০
আওলাদে রাসুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ)’র আজ ওফাত দিবস
সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ ‘ যার উপাধি গাউসে জামান। তিনি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হরিপুরের সিরিকোটের শেতালু শরীফে ১৯১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ) একজন বিখ্যাত সুফিসাধক ছিলেন। যিনি আফ্রিকা, বার্মা, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় কার্যক্রম বিশেষ করে শরীয়ত ও তরিকতের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাপক খেদমত আঞ্জাম দেন। এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা ১৯৫৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। সৈয়দ মুহাম্মদ গীসুদারাজ প্রথম ও সৈয়দ মুহাম্মদ মাসুদ মাশওয়ানির মাধ্যমে সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ)’র বংশ ৪০টি ধারায় ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছায়।
শিক্ষা জীবনে তিনি তাঁর পিতার তত্ত্বাবধানে ১১ বছর বয়সে কোরআন হিফজ করেন এবং তাফসীর, ফিক্বহ, নাহু, সরফ, উসুল, মানতিক, আক্বাইদ, মা’রিফাত, হিকমাত, ত্বরিকতের শিক্ষা তাঁর পিতা থেকে নেন। তিনি হরিপুরের দারুল উলুম ইসলামিয়া রহমানিয়াতে পড়াশোনা করেন। তিনি তাফসীর ও হাদিসের বিশেষ শিক্ষা নেন সরদার আহমেদ লাইলপুরী এবং আব্দুর রহমান ও আব্দুল হামিদ থেকে।
তরিকত প্রচারেও তাঁর অবদান ছিল ব্যাপক। ১৯৪২ সালে ২৬ বছর বয়সে তরিকত প্রচারে তৈয়্যব শাহ (রহঃ) বাংলাদেশে আসেন।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে তৈয়্যব শাহ (রহঃ) সুন্নিয়তের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের শহর এবং দূরস্থিত অঞ্চলগুলোতে অবদান রাখেন। তিনি সুন্নিয়ত এবং ত্বরিকাণ্ডএ-আলিয়া কাদেরিয়ার বিস্তার করেন মধ্যপ্রাচ্যে, বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) রেঙ্গুনে। তিনি বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) রেঙ্গুনে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যেমন- বাংলাদেশে কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া, (মুহাম্মদপুর, ঢাকা), মাদরাসা-এ-তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া (হালিশহর, চট্টগ্রাম), মাদরাসা-এ-তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া ও মসজিদ কমপ্লেক্স (কালুরঘাট, চট্টগ্রাম), মাদরাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া (চন্দ্রঘোনা, চট্টগ্রাম) ইত্যাদি। পাকিস্তানের করাচির আওরঙ্গী টাউনে মাদ্রাসা-এ- তৈয়্যবিয়া ও মায়ানমারে মাদ্রাসা-এ-আহলে সুন্নাত।
এছাড়াও তিনি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)’র শুভাগমনের দিন উপলক্ষে বাংলাদেশে আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী’র পথিকৃৎ।
ধর্মীয়, মানবিক ও সামাজিক কাজে তৈয়্যব শাহ (রহঃ) ১৯৮৬ সালে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন এবং আরো মজলিশে গাউসিয়া সিরিকোটিয়া পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর মতাদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা’র এবং আরো অনেক ধর্মীয় সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
১৯৭৬ সালের ১৬ ডিসেম্বরে তিনি বাংলা ভাষায় সুন্নিয়ত ভিত্তিক সাহিত্য প্রকাশনার উপর গুরুত্বারোপ করে মাসিক তরজুমান-এ-আহলে সুন্নাত প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং জানুয়ারি ১৯৭৭ সাল থেকে আনজুমান থেকে এ প্রকাশনার যাত্রা শুরু হয় এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন লাভের পর অদ্যাবধি সুন্নিয়তের শীর্ষস্থানীয় মাসিক প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখনো প্রধান এবং প্রাচীনতম এই মাসিক তরজুমান প্রকাশ হয়ে আসছে।
আওলাদে রাসুল, সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ) ১৪১৩ হিজরীর ১৫ জ্বিলহজ্জ, ১৯৯৩ সালের ৭ জুন সোমবার সকাল ৯টার দিকে শেতালু শরীফে ইন্তেকাল করেন এবং জামে মসজিদ, শেতালু শরীফ, সিরিকোট, হরিপুর, পাকিস্তানে তাঁর মাজার স্থাপন করা হয়।
তাঁর বড় শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ ও ছোট শাহজাদা পীর সাবির শাহ (তিনি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন)।
লেখক : মোঃ গিয়াসউদ্দিন, শিক্ষার্থী, জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা।