প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
ম্যাফের আয়োজনে চাঁদপুরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মানোন্নয়নে গোলটেবিল বৈঠক
চাঁদপুর জেলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এমএএফ) ও নাগরকি সমাজের প্রতিনিধিরা।
গতকাল ৬মে সোমবার চাঁদপুর প্রেসক্লাব কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ‘সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়নের দাবিতে গোল-টেবিল বৈঠক’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
এতে চাঁদপুর জেলার সিভিল সার্জন প্রতিনিধি, চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, বিএমএ, ড্যাব, চাঁদপুর বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়শন প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, যুব সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এই গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এমএএফ।
মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের (ম্যাফ) চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মুনির চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের বাচ্চু পাটওয়ারীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম ও সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মাওলানা জাকির হোসেন হিরু।
সভায় বক্তারা বলেন, চাঁদপুর একটি প্রাচীন জেলার অন্তর্গত। বিভিন্ন উপজেলা হতে প্রতিনিয়ত মানুষকে চাঁদপুর শহরে সেবা গ্রহণ করতে আসতে হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো চিকিৎসা সেবা। কিন্তু চাঁদপুর জেলা শহরে সরকারি হাসপাতালসহ সকল বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে জনগণের অসন্তুষ্টি মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এমএএফ)-এর কাছে দৃশ্যমান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জনভোগান্তি নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে ইউকেএইড-এর অর্থায়নে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশন্যাল পরিচালিত বাংলাদেশ স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল একাউন্টিবিলিটি ফর সিটিজেন এমপাওয়ারমেন্ট (বিস্পেস) প্রকল্প এই উদ্যোগে সহায়তা করছে।
সভায় বক্তারা যে সকল সমস্যা তুল ধরেন--সরকারি হাসপাতালে বেড না পাওয়া, হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়মিত না থাকা, রোগীকে যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা নিম্নমানের, হাসপাতালের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা, এক্স-রে ও আল্ট্রাসনো মেশিন কাজ করে না। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও টেস্ট মানম্মত নয়, কিন্তু ব্যয় বেশি। সামগ্রিকভাবে মানুষকে এই খাতে চরম ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হতে হয়।
এরই প্রেক্ষিতে কিছু সুপারিশও বক্তারা তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে : (১) হাসপাতালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে ব্যবস্থাপনা কমিটির কাজকে দৃশ্যমান করা, যাতে প্রশাসনিক সেবা ও স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা সেবা ২টি ভিন্ন কাঠামো প্রতিষ্ঠা পায়। (২) সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে রোগী দেখার জন্যে ২টি শিফট চালু রাখা। (৩) রোগীর ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ ও টেস্ট হাসপাতালে যাতে করা যায় তা নিশ্চিত করা। (৪) রোগীর জন্যে বরাদ্দকৃত খাবার ও অন্যান্য সুবিধা সঠিকভাবে প্রদান করা। (৫) হাসপাতালে ন্যূনতম ১০টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা। (৬) বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরকার ঘোষিত সনদ টাঙানো ও একজন তথ্য কর্মকর্তার নিয়োগ ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করা। (৭) নিয়মতিভাবে বেসরকারি হাসপাতালে সরকারি টিম দ্বারা পরিদর্শন নিশ্চিত করা। (৮) জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, সংকট ও তার সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়মিতভাবে মিডিয়াতে প্রচার করা, যাতে করে মানুষ সরকারি পদক্ষেপের ওপর আস্থা রাখতে পারে।
আরো বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা মাসুদা নূর, জেলা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডঃ মুনিরা চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হযরত আলী, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন হিরু, ফেরদৌস খান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেবেকা সুলতানা, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার, জেলা ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাওন পাটওয়ারী ও ভিভিয়ান ঘোষ। এ সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও যুব সংগঠন প্রতিনিধি, নারী উদ্যোক্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম কুমিল্লা বিভাগীয় রিজিউনাল অফিসার আবুল বাশার।