বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০

মাননীয় অধ্যক্ষের উদ্দেশ্যে সিনিয়র এক নাগরিকের বুকফাটা হাহাকার

মুনির আহমদ
মাননীয় অধ্যক্ষের উদ্দেশ্যে সিনিয়র এক নাগরিকের বুকফাটা হাহাকার

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিনয়ের সাথে জানাতে চাই, বিব্রত বোধ করার পরেও আমার এ বুকফাটা আর্তনাদ। জাতির পিতার জন্মদিনে ১৭ মার্চ সকালে আমার বেড়ে ওঠার পরম ভালোবাসার জায়গা আমার কলেজে এবং এর সাথে ‘আজিজ আহম্মদ ময়দানে’ গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কোথায় আমার এবং লক্ষ লক্ষ চাঁদপুরবাসীর স্মৃতি বিজড়িত মাঠ? কীভাবে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী, শত শত ঘটনার সাক্ষী ‘আজিজ আহম্মদ ময়দান/কলেজ মাঠ’/‘বড় মাঠ’ নাই হয়ে গেল? এই অতীতের প্রতি আমাদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই স্যার? কী করে এই ভয়ানক ধ্বংসের কাজটি করতে পারলেন? শত বৎসরের ঐতিহ্যবাহী শত শত ঘটনার সাক্ষী এই স্থাপনার খোল-নলচে পাল্টানোর আগে একবারও কি মনে হয়নি এটা অক্ষুণ্ণ রেখে করা কাজগুলি ভিন্নভাবে করা যায় কি-না একটু নিরীক্ষা করার? মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়! এ মাঠ কিন্তু কলেজের জায়গায় করা না। কলেজ প্রতিষ্ঠার বহু আগেই এ মাঠ বানানো হয়েছিল চাঁদপুরের দক্ষিণের বাখরপুর জমিদার মজুমদার বাড়ির বদান্যতায়। এর অনেক পরে চাঁদপুর কলেজের গোড়াপত্তন।

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই ইতিহাসের সাথে আপনি পরিচিত নন। তাই অবলীলায় এই ঐতিহ্যবাহী মাঠটাকে নাই করে দিলেন। বিনয়ের সাথে আপনাকে জানাতে চাই, কোনো কারণেই কোনো খেলার মাঠের অবয়ব পরিবর্তন করা যায় না। শতকরা একশত ভাগ নিরঙ্কুশ মালিকানা থাকলেও। এই মাঠ তো কোনো সময়েই কলেজের ছিল না। এটা তৎকালীন মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার একটি স্থাপনা। এই মাঠের পশ্চিমণ্ডউত্তর কোণে তখনকার মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার অফিস দালান জীর্ণ-শীর্ণভাবে এখনো দাঁড়িয়ে। ষাটের দশকের পর সত্তরের দশকে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকাণ্ড পরিচালনা একটু একটু করে সমস্যা সঙ্কুল হয়ে উঠছিলো। এটা বিবেচনায় ১৯৬৮/৬৯ সালে এসে এই মাঠটিকে খেলাধুলার অধিকার সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ণ রেখে চাঁদপুর কলেজকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সম্পূর্ণ আইনানুগ পদ্ধতিতে ‘আজিজ আহম্মদ ময়দান’ হস্তান্তরিত হয়েছিল। কোনো খালি ভূমি নয়। ৪/৫ একর খালি ভূমি নয় ‘আজিজ আহমদ ময়দান’ হস্তান্তরিত হয়েছিল কোনো মূল্যমান ছাড়াই। আবারও দৃঢ়ভাবে বলছি, এই মাঠের অবয়ব পরিবর্তনের অধিকার নীতিগতভাবেও হস্তান্তরের সময় দেয়া হয়নি। নিরবচ্ছিন্ন খেলাধুলার অধিকার নিশ্চিত করেই হস্তান্তর করা হয়েছিল।

তবে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, মনে হয় আমাদের চাঁদপুরের ইদানীংকালের কিছু কাজের ধারাবাহিকতাতেই আপনারা এ কাজটি অবলীলায় করেছেন। চাঁদপুরবাসীর ঐতিহ্যবাহী অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে এতোটুকু বুক কাঁপেনি। কোনো প্রতিবাদ হয়নি, এতোটুকু মৃদু ভূকম্পনও হয়নি। চাঁদপুর টাউন হল হারিয়ে গেল। চাঁদপুরের মহকুমা প্রতিষ্ঠালগ্নে নির্মিত ১২৫ বছর পূর্বের আদালত ভবন যখন ভেঙে ফেলা হলো, মহকুমা প্রতিষ্ঠার শুভদিনের সাক্ষী ওইদিন রোপিত শতবর্ষী বটগাছটি রাতের অন্ধকারে কেটে ফেলা হলো। কোনো প্রতিবাদ হলো না। কবিগুরু ও মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত চাঁদপুর কালীবাড়ি সংলগ্ন নিরোদ পার্ক নাই হয়ে গেলো। ১৯৪৭ পূর্ব আমলের সর্বভারতীয় নেতা চাঁদপুরের কৃতী সন্তান হরদয়াল নাগের পুকুরটিও নাই হয়ে গেলো। এর সাথে সাথে চাঁদপুরের সঙ্গে তাঁর নাড়ির বন্ধনও কাটা পড়ে গেলো। আপনি এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন। কিন্তু স্যার, আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর। পরম শ্রদ্ধেয়। পিতাসম। বিশ্বাস হয় না কী করে সম্ভব হলো। এই এলাকার ছেলেমেয়েরা/বাচ্চারা কোথায় মনের আনন্দে ছোটাছুটি করবে? চাঁদপুরবাসী সকলের এই মাঠে খেলাধুলা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন। মুক্ত বাতাসে হাঁটাচলার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন। স্যার! আমরা চাঁদপুরবাসী অন্যান্য জেলার মানুষজনের চাইতে অনেক শান্ত। প্রতিবাদে গর্জে ওঠার ইতিহাস নেই আমাদের। না হলে কোনো অবস্থাতেই এ কাজ করতে পারতেন না। স্যার, আপনার মনে আছে হয়তো, কয়েকবছর আগে আপনারা যখন মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে দালান নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ মিহির বাবুর সময়ে, আমি জোরালো প্রতিবাদ করেছিলাম মাঠে কোনো স্থাপনা না করার জন্যে। কিছুদিন বন্ধ ছিল কাজ। পরে ঠিকই হয়ে গেলো।

খুব কাছে থেকে দেখা ও জানার সুবাদে আবারও বলছি, বঙ্গবন্ধু খেলার মাঠের মানুষ ছিলেন। খেলোয়াড় ছিলেন সক্রিয়ভাবে। ঢাকার মাঠ দাপিয়েছেন আজাদ স্পোর্টিংয়ের হয়ে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর আত্মা কষ্ট পাচ্ছে চাঁদপুরবাসীর মাঠের এই অবস্থা দেখে। অবিনাশ মাস্টারের হাতে তিল তিল করে গড়ে ওঠা এই মাঠ আপনারা সবাই মিলে শেষ করে দিলেন। সকাল-বিকেল দুবেলা প্রতিদিন হাজারো ছেলে, বড়দের পদচারণা/খেলাধুলায় দপদপ করা এই মাঠ কোথায় হারিয়ে গেল? জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে কোনো কিছু বলার অধিকার বা ধৃষ্টতা আমার নেই। তবু বিবেকের দংশনে বলছি। করণীয় কোনো কিছুই কি ছিল না আপনাদের? এ যেন ‘শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি’। ভবিষ্যৎ আপনাদের ক্ষমা করবে না।

ঢাকার কলাবাগানে ১শ’ ফুট বাই ৩০ ফুট খালি জায়গা রক্ষার জন্যে আমার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। সেটা কি সত্যি? তা না হলে এতো বড়ো একটা পরিবর্তন বিনা প্রতিবাদে একটু বুদবুদও সৃষ্টি হলো না। ভাবলেই মনটা ব্যথা বেদনায় ভরে যায়।

আপনাকে কিছু বলার যোগ্যতা আমার নেই, সে ধৃষ্টতাও নেই। তবু বলছি, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নান্দনিক অবয়বে গড়ে তুলে আকর্ষণীয় করার চাইতে লেখাপড়ায় সম্মানীয় অবস্থানে নেয়াই মূল কাজ। চাঁদপুর কলেজের লেখাপড়ার ঐতিহ্যকে আরো শান দেয়া এবং উন্নত স্তরে পৌঁছানোর চেষ্টাই যুক্তিযুক্ত প্রশংসনীয় হতে পারে।

স্যার! আবারও বলছি, আমার প্রথম ভালোবাসার জায়গা চাঁদপুর কলেজের প্রত্যেকটা ইটের সাথে মিশে আছে আমার কৈশোর-ছোটবেলার দিনগুলো। এর উন্নতি আমাকে বিরাটভাবে নাড়া দেয়। আমি গৌরবান্বিত বোধ করি। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের সামনে এগিয়ে যাওয়া আরেকটি স্থাপনাকে ক্ষতি করে নয়। যে কোনো যৌক্তিক ভাবনায় আপনার/আপনাদের এ কাজটা খুব খারাপ হয়েছে। অতীতকে ধ্বংস করে যে বর্তমান সে বর্তমান কোনো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা জাগায় না।

মাননীয় স্যার, খেলার মাঠের কোনো পরিবর্তন কোনো অবস্থাতেই করা যায় না। উন্নততর সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা যায়। খেলার প্রয়োজনে। অন্য কোনো বিবেচনায় করা যায় না। তা বেআইনি। এমনিতেই চাঁদপুরে খেলার মাঠ বা খোলা জায়গা নেই বললেই চলে। সবেধন নীলমণির চাঁদপুরবাসীর ‘বড় মাঠ’ও হারিয়ে ফেললাম।

আমি আমাদের চাঁদপুরবাসীর গৌরবময় অতীত এবং এর ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার এবং তা ভুলিয়ে দেয়ার এই চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

অমর শিল্পী ছবি বিশ্বাসের হাহাকার-এর সাথে গলা মিলিয়ে আমারও আর্তনাদণ্ড-ফিরিয়ে দিন আমাদের চাঁদপুরবাসীর শত বছরের মাঠ ‘আজিজ আহমদ ময়দান’। ফিরিয়ে দিন।

মুনির আহমদ : একজন সিনিয়র নাগরিক। মুঠোফোন : ০১৩২৪১৭৩৯৬১।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়