প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ০০:০০
মতলব উত্তরে যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন বাবু হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী হলো কাজী মিজান। ১৭ জুন শনিবার নিজ দলের প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন বাবু নিহতের ঘটনায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে তার ভাই আমির হোসেন কালু থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গতকাল রোববার পর্যন্ত কাজী মিজানসহ ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্বজনরা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মিজানসহ তার লোকজনকে দায়ী করেছেন।
রোববার দুপুরে মোহনপুর আলী আহম্মদ মিয়া বহুমুখী কলেজ মাঠে মোবারক হোসেন বাবুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাহাদুরপুরে পারিবারিক কবররস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে মোবারক হোসেন বাবুর মরদেহ মোহনপুরে নিয়ে আসলে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল সমাবেশ ও কাজী মিজানুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে প্রতিবাদ জানায়।
এ ঘটনায় প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার সকালে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। দুপুর ১টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ। পরে তাকে এ ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ তথ্য দুপুর ২টার দিকে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)। পুলিশ সুপার জানান, মতলব উত্তরে যুবলীগ কর্মী বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাজী মিজানকে আটক করা হয়েছে। কাজী মিজান এই মামলার এক নম্বর আসামী। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত কাজী মিজানসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন এজাহার নামীয়। পুলিশ সুপার আরো জানান, তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার আগেরদিন রাতে যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বাড়িতে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে কাজী মিজান উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই পরদিনের ঘটনার পরিকল্পনা হয়।
এ ঘটনায় আটককৃত অন্যরা হচ্ছে : সাবিয়া বেগম, মুছা গাজী, আনোয়ার হোসেন শেখ, জুয়েল কবিরাজ, মোশারফ হোসেন মিজি, সাহিনা বেগম। তাদেরকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। আদালত কাজী মিজানসহ আসামীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। পুলিশ সূত্র জানায়, বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে কাজী মিজানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, মামলার অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ ঘটনাস্থল ও তার আশপাশে অভিযান চালাচ্ছে।
শনিবার বিকেলে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড় বাহাদুরপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় নিজদলের প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন বাবু (৪৮)।
এ ঘটনায় তার ছেলে ইমরান (১৮), জসিম উদ্দিনসহ (৩০) আরো একজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপির সমাবেশ থেকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে মোহনপুর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা হাই স্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এই সমাবেশে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে আসার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন মোবারক হোসেন বাবুসহ বেশ কজন। এ সময় বাহাদুরপুর গ্রামের রাজ্জাক প্রধানিয়ার বাহাদুরপুর গ্রামের বাড়ি থেকে মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন মোবারক হোসেন বাবুসহ কজন। একাধিক গুলিতে রক্তাক্ত হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান বাবু। এদিকে এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য নিহতের স্বজনরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান ও তার লোকজনকে দায়ী করেন।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ওসি মহিউদ্দিন বলেন, বাহাদুরপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় কাজী মিজানকে প্রধান আসামী করে ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০/৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার পর রোববার সকালে কাজী মিজানের নিজ বাড়ি থেকে তাকে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আরো ৬ জনকে আটক করেছি। অন্য আসামীদের দ্রুত আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।