প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
গিয়াসউদ্দিন মিলন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি (২০২২)। তিনি দৈনিক মেঘনা বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। অদম্য প্রচেষ্টা, কর্মদক্ষতা ও মেধার সমন্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্স প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৯৩ সালে তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হন।
‘চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি : প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মুখোমুখি’ শীর্ষক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ সাংবাদিক গিয়াসউদ্দিন মিলনের কথা তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।
গিয়াসউদ্দিন মিলন : আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামে। এ গ্রামে আমার শৈশব-কৈশোরের চমৎকার সময় কাটে। গ্রামের মাঠে নিয়মিত ফুটবল খেলতাম। চাঁদপুরের হয়ে আমি বিভাগীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলেছি। এছাড়া হা-ডু-ডু, ক্যারামসহ গ্রামীণ সব ধরনের খেলা কম-বেশি খেলতাম।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্স প্রথম ব্যাচের ছাত্র। ১৯৯৩ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হই। চাঁদপুর সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ ও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মাসুদুর রহমান আমার সরাসরি শিক্ষক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : বর্তমানে কলেজে সারি সারি ভবন, দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। আমাদের সময় তেমনটা ছিলো না। শুধুমাত্র দুটি ভবন ছিলো। বিশাল কলেজ মাঠে আমরা প্রচুর খেলাধুলা করতাম। প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। প্রচুর পুরস্কার অর্জন করতাম। বলতে পারেন, জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াবস্থায় পার করেছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছিলেন কারা ? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
গিয়াসউদ্দিন মিলন : যিনি আমার প্রিয় শিক্ষক, তিনিই পরে আমার সিনিয়র সহকর্মী হন। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন স্যার আমার প্রিয় শিক্ষক। এছাড়া অধ্যাপক রুহুল আমিন স্যার, প্রফেসর অসিত বরণ দাশ স্যার, প্রফেসর মোঃ মাসুদুর রহমান স্যারও আমার প্রিয় শিক্ষক। সহপাঠীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডঃ সামছুল ইসলাম মন্টু, নূরিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক সম্ভু আচার্যী, লেডীপ্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিত পোদ্দার, রাজিব আচার্যী, স্মৃতি (আমেরিকা প্রবাসী), কাকলী ও রুনা। আমাদের সময় রঙিন টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ছিলো না। আমরা বেশির ভাগ সময় পার করতাম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজ জীবনের উল্লেখযোগ্য কোনো সুখের এবং দুঃখের স্মৃতির কথা জানতে চাই, যা আজও আপনার মনে পড়ে।
গিয়াসউদ্দিন মিলন : চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াবস্থায় পুরো সময়টা মূলত সুখের ছিলো। সে সময় মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে আমি দুর্ঘটনার শিকার হই। ফলে অনেক দিন কলেজে আসতে পারিনি। সাধারণত শাহতলী থেকে ট্রেনে চড়ে কলেজে আসতে হতো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজে পড়াবস্থায় নিজেকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখতেন?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : কলেজে পড়াবস্থায় পুলিশ অফিসার কিংবা আর্মি অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমি দুটো জায়গায়ই বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ে যাই। তবে সাংবাদিকতা পেশায় তখনও কাজ করছিলাম। সেজন্যে বিকল্প কিছুই ভাবিনি। স্বপ্ন দেখি, সাংবাদিকতা পেশায়ই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আলহামদুল্লিলাহ আমি সেটি পেরেছি। এজন্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাখো কোটি শোকর আদায় করি। চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘চাঁদপুর প্রেসক্লাবে’ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ হয়েছে। এজন্যে আমি আমার ক্লাবের সাংবাদিক বন্ধুদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ক্লাস এবং আড্ডাবাজির স্মৃতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
গিয়াসউদ্দিন মিলন : অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন স্যারের ক্লাস ছিলো দুর্দান্ত। স্যার গল্পের ছলে আমাদের পাঠদান করতেন। পাঠ্যবইয়ের পড়া ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে আমাদের বলার চেষ্টা করতেন। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনাচরণের খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু ক্লাসে সবচেয়ে বেশি কঠোর অবস্থানে থাকতেন প্রফেসর অসিত বরণ দাশ স্যার। স্যারের ক্লাসে কোনো প্রকার ফাঁকিবাজি করা যেতো না। ক্লাসের বিরতিতে আমরা আড্ডাবাজি, গানসহ বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতাম। আমরা ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি ও মাঠে বসে আড্ডা দিতাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একজন আরেকজনের প্রেমের বিষয়েও তুমুল আলাপ হতো। আবার কোনো মেয়ে বন্ধুর বিয়ে কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমরা ছিলাম দাওয়াতি মেহমান। সেখানে আড্ডাবাজি আর হরেক রকমের খাওয়া-দাওয়া হতো। আমাদের বন্ধুত্ব ছিলো ভাই-বোনের মতো। এখনো মনের আয়নায় যা ভেসে উঠে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমানে কলেজে এলে কোন্ স্মৃতি বেশি মনে পড়ে?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। বর্তমানে পেশাগত কিংবা যে কোনো কারণে কলেজে গেলে শিক্ষাজীবনের স্মৃতি মনে ভেসে উঠে। স্যারদের যখন নিজের পরিচয় দিই, বলি আমি আপনাদেরই ছাত্র, তখন গর্বে বুকটা ভরে উঠে। একটি স্মৃতি আমার সারাজীবন মনে থাকবে, সেটি হলো, একদিন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ক্লাসে আমাকে নিয়ে স্যার শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, ‘দেখো, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী গিয়াসউদ্দিন মিলন’। সে সময় অনেকেই সমস্বরে বলে উঠলো, তারা আমাকে চেনে! আসলে এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। অতুলনীয় এক অনুভূতি। এছাড়া চাঁদপুর সরকারি কলেজের উত্তোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি আমাকে অনুপ্রাণিত করে। কলেজের সার্বিক উন্নয়নে অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ স্যার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি চাঁদপুর সরকারি কলেজসহ সারাদেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অভূতপর্ব উন্নয়ন করে চলেছেন, তা সত্যিই দৃষ্টান্তযোগ্য।
একটি স্মৃতিকথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে, একবার কলেজে ফুটবল খেলতে গিয়ে একজন শ্রদ্ধেয় স্যারের পায়ের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে স্যারের পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু স্যার, নিজের পায়ের দিকে খেয়াল না করে আগে আমাকে বলে উঠলেন, ‘বাবা তুমি ঠিক আছো?’ একে তো আমি ভয়ে হতভম্ব, তার মধ্যে আন্তরিকতা দেখে আমি বিমোহিত হই। মূল কথা হলো, আমাদের সময় ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক ছিলো খুবই মধুর। আমরা সবসময় স্যারদের যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করতাম। স্যাররাও আমাদের অভিভাবকের ন্যায় আদর-স্নেহে আগলে রাখতেন। এখনো শ্রদ্ধেয় স্যারদের দেখলে সেই সম্মান প্রদর্শন করার চেষ্টা করি। স্যাররাও আমাদের মায়া-মমতায় আগলে রাখেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
গিয়াসউদ্দিন মিলন : আমরা ৫০ বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি, সামনে ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন করবো। আমি শঙ্কিত ‘শতবর্ষ’ পাবো কি না! ৫০ বছর থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত চাঁদপুর সরকারি কলেজ যে ধারায় এগিয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে অচিরেই কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবে। আর এটিই আমার স্বপ্ন। তখন ইন্টারমিডিয়েট শাখা অন্যত্র স্থানান্তর হয়ে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। যদিও বর্তমানে অনেকে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় বলে, কাগজে-কলমে কিন্তু তা নয়। এছাড়া কলেজটি সারা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সরকারি কলেজ। এ কলেজের পড়াশোনা ও শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার দৃষ্টিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ কেনো সেরা?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : শিক্ষার পরিবেশ ও পড়ালেখার মানের জন্যে আমার দৃষ্টিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ সেরা। কলেজটিতে পর্যাপ্ত মেধাবী ও চৌকষ একঝাঁক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাঠদান করে থাকেন। শিক্ষার জন্যে প্রথমেই যেটা একান্ত প্রয়োজন, তা হলো পরিবেশ, যা চাঁদপুর সরকারি কলেজের আছে। সুরম্য ভবন থেকে শুরু করে, বিপুল বইসমৃদ্ধ পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, শহিদ মিনার, কম্পিউটার ল্যাব, সুবিশাল মাঠ, মাঠের চারপাশে ফুলগাছ, ছায়াদানকারী বৃক্ষ, পুকুর, ছাত্র-ছাত্রী নিবাস ও বাসের সুব্যবস্থা।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা/স্বপ্ন কী?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : আমার স্বপ্ন চাঁদপুর সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তিত হওয়া।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজ জীবনের উল্লেখযোগ্য অর্জন কী?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : ছোটবেলা থেকেই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ছিলো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। একটি প্রবাদ আছে, ‘তিরিশে বিদ্যা, চল্লিশে ধন, না হলে ঠন্ঠন্’। কেননা ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ। এজন্যে একজন শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে কর্মমুখি করে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, সব বাবা-মা কিন্তু সন্তানের পড়াশোনার ব্যয় বহনের সামর্থ্য হন না। একজন শিক্ষার্থীকে এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নিজে প্রতিষ্ঠা করার তাড়না নিজের রাখতে হবে। কারো উপর নির্ভর না হয়ে নিজেকে স্বনির্ভর করতে হবে। যে কাজটি আমি শিক্ষাজীবনে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতাম। ফলে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও টিউশনি করতাম। আমি নিজেদের জমিতে কৃষিকাজ করতাম। গরু পালন করতাম। আমার অনেক কবুতর ছিলো। হাটের দিন সেগুলো বাবুরহাটসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। এজন্যে কখনোই আমাকে পড়াশোনার জন্যে বাবা-মায়ের কাছে হাত পেতে টাকা নিতে হয়নি। বরং নিজের অর্জিত আয়ের টাকায় নিজের যাবতীয় ব্যয় বহন করতাম। এতে আমি যে তৃপ্তি অনুভব করতাম, তা কিন্তু একজন সন্তান কিংবা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে সাহস ও শক্তির সঞ্চার করতো। আমি মনে করি, এভাবেই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের ভেতর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রবল তৃষ্ণা থাকতে হবে। কখনোই খারাপ সঙ্গের সাথে নিজেকে জড়ানো কিংবা তুলনা করা যাবে না। নিজের মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কোন্ কোন্ সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন?
গিয়াসউদ্দিন মিলন : কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম না। তবে কলেজের হয়ে ফুটবল খেলতাম। বিতর্কে অংশ নিতাম। দেয়াল লিখনে অংশ নিতাম। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম। আমি যেহেতু সাংবাদিকতা পেশায় ছিলাম, তাই কলেজের যাবতীয় সংবাদ সরবরাহ করতাম। বিশেষ করে একটি কথা বলতে চাই, চাঁদপুর সরকারি কলেজে নিয়মিত কোনো সাংস্কৃতিক চর্চা নেই। যতোটুকু আছে তা দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা হওয়ার মতো না। তবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। বিতর্কের অনেক দল তৈরি হয়েছে। তাণ্ডও কিন্তু হয়েছে সিডিএম, সিকেডিএফ ও সিসিডিএফের কল্যাণে। আমি অনুরোধ করবো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে চাঁদপুর সরকারি কলেজকে এগিয়ে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে আরো ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা যে যেই বিষয়ে দক্ষ তাকে সেই বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। সাহিত্যের প্রচার ও প্রসার করতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর সাহিত্যের ম্যাগাজিন বের হয়। শিক্ষার্থীরা তাতে লিখে। এ কলেজে তা কিন্তু অনিয়মিত। এ উদ্যোগটি চাঁদপুর সরকারি কলেজেও বাস্তবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনাসহ সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হবে। এছাড়া চাঁদপুর সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীরা কোথাও সাফল্য অর্জন করলে তাদেরকে প্রতি বছর বর্ণিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধনা দেয়া যেতে পারে। এতে করে অন্য শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবে। পড়াশোনায় মনোযোগী হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : নতুনদের উদ্দেশ্য কিছু বলুন।
গিয়াসউদ্দিন মিলন : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলবো, সময় এবং মেধাকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে হবে। কোনোভাবেই নিজেকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। নিজের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের খবরাখবর এক মুহূর্তেই পাওয়া যায়। কারো যদি বই না থাকে সে খুব সহজেই মোবাইলের মাধ্যমে বের করে পড়তে পারছে। এজন্যে প্রয়োজন দক্ষতা ও কৌশল। আগে কিন্তু সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার প্রবণতা ছিলো, তা কিন্তু এখন নেই। নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কর্মমুখি শিক্ষা অর্জন করতে হবে। কারো সাফল্যে হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করা যাবে না। অন্যের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উল্লেখিত প্রশ্নের বাইরে আপনার কোনো কথা থাকলে বলুন।
গিয়াসউদ্দিন মিলন : বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। এ যুগে প্রত্যেকটি মানুষকে দুটি জিনিস মেনে চলা উচিত। একটি হলো সেক্রিফাইস, অন্যটি হলো অন্যকে ম্যানেজ করার দক্ষতা। ব্যক্তিভেদে ব্যক্তিকে ম্যানেজ করার দক্ষতা যার যতো বেশি, সে ততো দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। অধিক সম্মানের অধিকারী (শিক্ষক, বাবা-মা কিংবা শ্রদ্ধাভাজন) ব্যক্তিকে কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে তা যেমন জানতে হবে, বাজারের ব্যবসায়ী কিংবা চলাচলের পথের সঙ্গীকে কীভাবে ম্যানেজ ও সহযোগিতা করতে হবে তা-ও জানতে হবে। তাহলেই সমাজে একজন ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব। এর জন্যে মাস্টার্স-ডিগ্রির প্রয়োজন নেই।