প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
‘Press, সাংবাদিক, সংবাদপত্র’ এ শব্দগুলো ব্যবহার করে একটা চক্র প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। এরা বিভিন্ন গাড়ি চালক, অ্যাম্বুলেন্স চালক, এমনকি অন্য পেশার সাথে জড়িত যা সাংবাদিকতা বা সংবাদপত্র সেবার সাথে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। সম্প্রতি গণপরিবহনেও সংবাদপত্র বা Press লেখা দেখা যাচ্ছে। এভাবে ‘প্রেস, সংবাদপত্র বা সাংবাদিক’ লেখার যথেচ্ছ ব্যবহার করে যেমনি প্রতারণা করা হচ্ছে, তেমনি প্রকৃত সাংবাদিকতা পেশাকে কলুষিত করছে, বিতর্কিত করা হচ্ছে। আর গণপরিবহনে Press বা সংবাদপত্র লেখা স্টিকার লাগানো হয় অসৎ উদ্দেশ্যে।
সম্প্রতি চাঁদপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় দেখা যাচ্ছে যে, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় 'Press' লেখা। এসব সিএনজি অটোরিকশা যাত্রী পরিবহন করে থাকে। আবার এসব সিএনজি চালকের Press কার্ডে পদবী লেখা রয়েছে গাড়ি চালক। সম্প্রতি সদর উপজেলার চান্দ্রা বাজারে এমন একটা সিএনজি অটোরিকশা দেখা গেলো সামনে Press লেখা। আর এর চালকের কাছে যে Press কার্ড রয়েছে, তার পদবী হলো গাড়ি চালক। এটি চাঁদপুরের একজন সংবাদকর্মীর নজরে আসলে চালককে গণপরিবহনে Press লাগানোর কারণ জানতে চাওয়া হয়। জবাবে চালকের সরল উক্তি, ভাই পুলিশের ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য Press লাগিয়েছি। নিজেও প্রেস লেখা আইডি কার্ড নিয়েছি পুলিশ যাতে না ধরে। দৈনিক সময়ের কণ্ঠ নামে একটা পত্রিকার আইডি কার্ড এই চালক দেখালো। পদবীর সামনে লেখা-চাঁদপুর জেলার চালক। এমন আরো রয়েছে। এরা যেসব মিডিয়ার কার্ড ব্যবহার করছে, বাস্তবে এসবের অস্তিত্বও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।
একইভাবে ‘অনিক পরিবহন’ নামে একটা সিএনজি অটোরিকশায় Press লাগিয়ে এই গাড়িটি চাঁদপুর শহরে যাত্রী পরিবহন কাজে চলাচল করতে দেখা যায়। আর Press লেখা স্টিকার লাগিয়ে সে নিয়মনীতির কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে সড়ক দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই সিএনজি অটোরিকশার মালিক জনৈক অনিক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকে। তার সবচেয়ে গুরুতর প্রতারণা হচ্ছে, সে মাজহারুল ইসলাম অনিক নামে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সদস্য এবং দৈনিক চাঁদপুর দর্পণের সিনিয়র রিপোর্টারের নাম ব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার সিএনজি অটোরিকশা ‘অনিক পরিবহন’ এবং Press লাগিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। পুলিশ কোনো কারণে এই অনিক পরিবহন সিএনজিটি আটক করলে সাংবাদিক অনিক পরিচয় দিয়ে পার পেয়ে যায়। অথচ প্রকৃত সাংবাদিক অনিকের কোনো মোটরযান তো দূরে থাক, কোনো সাইকেলও নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম অনিক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরকে বলেছে বলে জানিয়েছেন। সবচেয়ে গুরুতর এবং ভয়াবহ বিষয় হলো, Press বা সংবাদপত্র লেখা এসব গাড়িতে করে মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ মালামাল পরিবহন করা হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো গাড়ির লাইসেন্স না থাকার কারণে এসব গাড়িতে Press, সংবাদপত্র লেখা স্টিকার লাগিয়ে বিনা ঝামেলায় অবৈধভাবে গাড়ি চালিয়ে থাকে। কোনো কোনো গাড়ি চালক, অ্যাম্বুলেন্স চালক Press কার্ড ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকে। অথচ এরা কোনো ধরনের অনুমোদিত মিডিয়ায় সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত নয়।
এসব বিষয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরান শোভনসহ আরো বেশ কজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা প্রথমে একবাক্যে বলেন, এসব সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিয়ম বহির্ভূত। প্রথমত কথা হচ্ছে, কোনো যাত্রীবাহী গাড়িতে Press বা সংবাদপত্র লেখা স্টিকার কোনোভাবেই লাগাতে পারে না। আর অ্যাম্বুলেন্সে তো মোটেই না। অসৎ উদ্দেশ্যে এসব লাগানো হয়। আর কেউ যদি তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল বা গাড়িতে Press বা সংবাদপত্র লেখা স্টিকার লাগায় তাহলে দেখতে হবে তিনি কোনো অনুমোদিত সংবাদপত্র বা অনুমোদিত কোনো মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত আছেন কি না। না থাকলে এটাও গুরুতর অপরাধ। তাছাড়া হোক সাংবাদিকের গাড়ি বা মিডিয়া হাউজের গাড়ি-আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তার গাড়ির লাইসেন্স এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই থাকতে হবে।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাংবাদিক, Press, সংবাদপত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করতে এবং এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আপনাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আর এসব প্রতারকদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা অপমানবোধ করেন এবং হয়রানির শিকার হন। আমরা চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাচ্ছি।