প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
নিজের প্রিয় ছাত্র বুয়েটের ভিসি। সেই ছাত্র আসছেন তাঁর প্রিয় এবং শৈশবের স্মৃতিময় বিদ্যাপীঠ ডিএন (দ্বারকানাথ) হাই স্কুলে। এমন কৃতী ছাত্রকে অভিবাদন জানাতে শিক্ষক নিজেই চলে এসেছেন। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক চন্দন তালুকদারকে দেখেই পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের অন্যতম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার। এমন দৃশ্য সেখানে আবেগঘণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তির এমন দৃশ্যে সবাই সুদূর অতীতে ফিরে যান, আবেগাপ্লুত হন। আর এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় চাঁদপুর ডিএন হাই স্কুলের কৃতী শিক্ষার্থী কর্তৃক মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি ও চাঁদপুর দ্বারকানাথ (ডিএন) হাই স্কুলের প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার। সত্তর দশকের বিদ্যালয়ের এমন একজন কৃতী শিক্ষার্থী, যিনি আজ স্বমহিমায় উদ্ভাসিত, তাঁকে কাছে পেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য প্রাক্তন ছাত্ররা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হন। তিনি নিজেও যেনো সুদূর অতীত শৈশবে ফিরে যান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাকে সম্মান দেখানোর কিছু নেই, আমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এখানে এসে আমার মনে হলো আমি এখনো ছাত্র। তিনি বলেন, সৎ, স্মার্ট ও শিক্ষিত হতে পারলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন হবে। শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্মার্ট চিত্তের হতে হবে।
তিনি গতকাল ২২ জানুয়ারি বেলা সাড়ে এগারোটায় তাঁর প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতী শিক্ষার্থী কর্তৃক মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথির শিক্ষক ও ডিএন হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক চন্দন তালুকদার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডাঃ এসএম সহিদ উল্লাহর সভাপ্রধানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ কামাল হোসেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ডাঃ মুকিত সফিউল আলম, গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন ও লেডী দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ মিয়া।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অভিভাবক মোস্তফা কামাল, নাসির উদ্দিন আহমেদ ও মানপত্র পাঠ করেন শিক্ষিকা কৃষ্ণা মিস্ত্রি।
শপথবাক্য পাঠ করে ৮ম শ্রেণির ছাত্র রাফাত হোসেন। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্ণব ঢালী। বুয়েট ভিসি ও চাঁদপুর দ্বারকানাথ (ডিএন) হাইস্কুলের সাবেক কৃতী শিক্ষার্থী ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদারের সহধর্মিণী রীতা মজুমদারসহ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ শিক্ষকম-লী, অভিভাবকগণ ও শিক্ষার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বুয়েট ভিসি আরো বলেন, মা-বাবা ও পরিবারের গুরুজনদের প্রতি কর্তব্য, ভালোবাসা ও চেতনা জাগানোর জন্য এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। সন্তানেরা আজ যে শিক্ষা পেলো, তা আগামী প্রজন্মের জন্যে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে। সারাক্ষণ তারা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাবা-মার কথা শুনতে চায় না, অনেকে খবর রাখে না। মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধার এই শিক্ষা স্কুল কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা দরকার। আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো এই ধরনের প্রোগ্রাম যাতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়।
বুয়েট ভিসি আরো বলেন, আমার শিক্ষা জীবনের শুরু এই ডিএন স্কুল তথা দ্বারকানাথ স্কুল থেকে। ১৯৬৪ সালে আমার বাবা মনোরঞ্জন মজুমদার শিক্ষক হিসেবে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে বাবা আমাকে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। তখন আমাদের বাসা ছিল হাসান আলী স্কুলের পাশে ঘোষ পাড়ায়। তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির মধ্য দিয়ে আমার স্কুলজীবন ও শিক্ষাজীবন শুরু হয়। চাঁদপুরে আসার পূর্বে আমরা ফেণী জেলার দাগনভূঁইয়া গ্রামে ছিলাম। এর পূর্বে আমরা গ্রামে থাকায় স্কুল অনেক দূরে হওয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পড়া হয়নি। ডিএন স্কুলে এসেই তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি। আমার সবচেয়ে স্মৃতিময় দিন কেটেছে এ স্কুলে।
চাঁদপুর দ্বারকানাথ (ডিএন) হাইস্কুলের ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে এদিন শতাধিক শিক্ষার্থী ‘মা-বাবার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা ভক্তির’ এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের মা-বাবার পা ছুয়ে সালাম করে, বাবা-মায়ের মুখে তুলে দিয়েছে মিষ্টি। তাঁদের হাতে রজনীগন্ধ্যার ফুলের গুচ্ছ তুলে দিয়েও শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
সন্তানের এই শ্রদ্ধা ভক্তিতে এ সময় অনেক মা সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে অশ্রুসিক্ত হন। সেখানে উপস্থিত সবার মাঝে এক আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে স্কুলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের এই সনদ তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বুয়েটের ভিসি।