প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরে আবারো নিষিদ্ধ ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়ক ধ্বংস হওয়াসহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। এ ট্রাক্টরগুলোর মাধ্যমে ইটভাটার ইট, মাটি ও ব্যবসায়ীদের বালু বহন করা হচ্ছে। সড়কে নিষিদ্ধ ট্রাক্টর চলাচল করার ফলে সড়কের স্ট্রাকচার ধ্বংস হচ্ছে। যার ফলে দ্রুত সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে মানুষজন থাকে আতঙ্কে। কখন আবার দুর্ঘটনা ঘটায়। পূর্বে নিষিদ্ধ ট্রাক্টর অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলেও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতা খুললেই ট্রাক্টরের চাপায় প্রাণহানির ঘটনা দেখা যেতো। আনকোরা, অযোগ্য, অদক্ষ চালক দিয়ে ট্রাক্টর চালানো হতো। অপরদিকে এ সকল ট্রাক্টরের নেই কোনো কাগজপত্র। যার ফলে তারা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যেতো। এসব ট্রাক্টর অনেক মায়ের বুক খালি করে দেয়। অনেক শিশুকে করেছে এতিম। কাউকে অকালে বিধবা করে দিয়েছে। কাউকে করেছে বিপতœীক। আবার কাউকে পথে বসিয়েছে। দিনের পর দিন যখন ট্রাক্টর দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটছিল, ওই সময় নিরীহ মানুষের প্রাণহানি রোধের কথা চিন্তা করে এগিয়ে আসেন তৎকালীন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন নাহার। তিনি নিষিদ্ধ ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করে দিলে গত ক’বছরে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ইদানীং চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলায় বেপরোয়াভাবে আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক অযোগ্য চালক দিয়ে ট্রাক্টর চালানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি ট্রাক্টর চলাচল করে ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলার যে সকল এলাকার ইটের ভাটায় ট্রাক্টর ব্যবহার হয় সেগুলো হচ্ছে- বেহারীপুর, বালিথুবা, মুন্সিরহাট, কামতা, গল্লাক ও রামপুর। প্রতিটি ইটের ভাটায় ইট ও মাটি বহনের কাজে ট্রাক্টরগুলোর বেশি ব্যবহার হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলায়ও ট্রাক্টর চলাচল কম নয়। এ উপজেলায় বালু বহনের কাজে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে ট্রাক্টর। আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, কচুয়া, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলায় ট্রাক্টর দ্বারা বালু-ইট ও মাটি বহন করা হয়। বেশিরভাগ চালক অপ্রাপ্তবয়স্ক অযোগ্য ও অদক্ষ। এরা বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে ট্রাক্টর চালিয়ে থাকে। ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে অনেকেই প্রাণ হারান।
জানা যায়, ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ফরিদগঞ্জের উত্তরাঞ্চল সংবাদদাতা সেলিম মিয়া, বহু স্কুল ছাত্র-ছাত্রী ও বিভিন্ন পেশার অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু নিহত পরিবাররা সঠিক কোনো বিচার পায়নি। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এরা পার পেয়ে যায়। ঐ মহলটি ট্রাক্টর মালিকদের পক্ষ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে তাদের পক্ষে কাজ করে থাকে। যার ফলে নিহতের পরিবার সঠিক বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো হয়রানির শিকার হয়ে থাকে।
বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে তাদের বাবা-মা থাকে চিন্তিত। কখন ট্রাক্টর দুর্ঘটনা ঘটায়। এ সকল নিষিদ্ধ ট্রাক্টর চলাচল বন্ধে ও পূর্বসূরির ন্যায় ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) এগিয়ে আসবেন বলে সচেতন মহলের প্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ক’জন সচেতন ব্যক্তি বলেন, ট্রাক্টরের চাপায় অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত ট্রাক্টর-আতঙ্কে থাকি। কখন এগুলো দুর্ঘটনা ঘটায়। আমাদের উপজেলায় ইটের ভাটায় নিষিদ্ধ ট্রাক্টর দ্বারা ইট, মাটি ও ব্যবসায়ীদের বালু বহন করা হয়। এ সকল ট্রাক্টর চলাচল একেবারে বন্ধ করে দেয়া জরুরি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল বলেন, অযোগ্য অদক্ষ চালক দিয়ে ট্রাক্টর চালানোর কারণে এরা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এ সকল ট্রাক্টরের কোনো নাম্বার প্লেট না থাকায় তারা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সহজে পালিয়ে যায়। নিষিদ্ধ ঘোষিত ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
চাঁদপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধ। জেলার সকল উপজেলায় আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বলে দিয়েছি ট্রাক্টর যেখানে পাবে সেখানে সেগুলোকে আটক করে আইনের আওতায় আনার জন্যে। ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।