প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
‘বালু উত্তোলন বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টের কোনো আদেশ আছে কি না তা তো জানি না। জানলে প্রয়োজনে চিঠি পরিবর্তন করবো। ইলিশ রক্ষার পাশাপাশি নদীপথও ঠিক রাখতে হবে।’ কথাগুলো বলেছেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হারুনুর রশিদ। জেলা প্রশাসককে দেয়া তাঁর একটি চিঠির আলোকে তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।
মার্চ-এপ্রিল দু’ মাস চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ড্রেজিং বন্ধ রাখার জন্যে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও বালু উত্তোলনের বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ কিংবা জেলা প্রশাসনের সাথে বালু উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বালু উত্তোলন বন্ধের শর্ত/চুক্তি নেই বলে জানায় বালু উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা মনে করেন, এটি মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র। ব্যক্তিবিশেষের দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এটি। বিশেষ করে এখানে বালু উত্তোলন বন্ধ হলে সরকারি-বেসরকারি অনেক উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির পাশাপাশি বেড়ে যাবে ব্যয়ও। বেকার হবে এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত হাজার হাজার লোক।
মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর-এর সদ্য সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসককে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, সেটা এখনকার করা। তবে আগের সময় থেকে ফলোআপ ছিলো। আমি এ ড্রেজিং বিষয়ে মহাপরিচালকের সাথে কথা বলেছি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, শুধু কি চাঁদপুর? দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে ইলিশ চলাচল অঞ্চলে আগের সময়ের থেকে ব্যাপকহারে যত্রতত্র ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে তিনি আরো বললেন, বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলতে থাকুক। আমার সাথে বর্তমান মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার (চলতি দায়িত্ব) কথা হয়েছে। তিনি চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসককে। গত বছর আগস্ট মাসে আমি একটি মিটিংয়ে বলেছিলাম যত্রতত্র যে কোনো সময় নয়, বাছাই করা অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করুক। যাতে মাছের উৎপাদনের ক্ষেত্রে ক্ষতি না হয়। যেনো সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বা পরিকল্পিতভাবে মেইন চ্যানেলে বালু উত্তোলন করা হয়। চ্যানেলকে ডীপ বানানো। অর্থাৎ তা পরিকল্পিত উপায়ে করতে হবে। হাইকোর্টের কোনো কপি আমাদের কাছে নেই। যদি কপি দেখি তবে হয়তো সেটার আলোকে সেভাবে বলা যাবে। হাইকোর্টের আদেশকে তো অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া বালু উত্তোলনও প্রয়োজন আছে। কারণ, নদীকে তার প্রবাহধারা ঠিক রাখা আমাদের দায়িত্ব। সে জন্যে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং প্রয়োজন। এটি মাছের জন্যও উপকারী।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ড. মোঃ হারুনুর রশিদ জানান, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ এরিয়ায় নিয়মনীতি মেনে বালু উত্তোলন করার কথা। এর ব্যত্যয় হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। মেঘনা হলো ইলিশের একটি বড় মাইগ্রেটরি রুট। সবচে বড় করিডোর। আর এ সময়ে বালুর বিষয়ে চিঠি দেয়ার কারণ হলো, এ সময়ে জাটকা নদী থেকে সাগরে মাইগ্রেট করবে বড় হওয়ার জন্যে। তবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টের কোনো আদেশ আছে কিনা তা তো জানি না। জানলে প্রয়োজনে চিঠি পরিবর্তন করবো। তিনি এও বলেন, ইলিশ রক্ষার পাশাপাশি নদীপথও ঠিক রাখতে হবে। কারণ, এ পথেই শত শত নৌযান চলাচল করে। তবে বালু উত্তোলন পরিকল্পিত করা উচিৎ। আর বালুটা কোন্ কোন্ স্থান থেকে উত্তোলন করা হবে তা নির্ধারণ করা উচিৎ।
বালু উত্তোলনের দায়িত্বে ড্রেজিং প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী বোরহান খান বলেন, আমি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখেছি মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার জন্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এমন চিঠি এখনো আমি পাইনি। আমরা যেহেতু পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, সেহেতু আগামী রোববার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটি আবেদন জমা দেবো। যেহেতু আদালতের আদেশ আছে, জেলা প্রশাসনের সাথে চুক্তিও আছে। কোথাও সাময়িকভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার কথা নেই। আর নদী সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো বিশেষত বিআইডব্লিউটিএ প্রতিবছর সার্ভে করে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। সেই নির্ধারিত এলাকায় আমরা বালু উত্তোলন করি। ওই সার্ভের টাকাও আমরা দেই। সর্বশেষ গত কয়েক মাসেও এমন সার্ভে হয়েছে। আমরা নিয়ম মেনে পরিকল্পিতভাবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকায় বালু উত্তোলন করি। তাছাড়া চাঁদপুর শহর থেকে হাইমচরের চরভৈরবী এলাকা পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকায় বর্তমানে আমাদের কোনো ড্রেজিং হচ্ছে না। মূলত জেগে ওঠা ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলন করছি আমরা। এতে নদীর নাব্যতা বাড়ছে, যা মাছের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি নৌযান চলাচলও সহজতর হচ্ছে।