মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২১, ০০:০০

করোনাকালে নিম্ন মধ্যবিত্তরা দিশেহারা

ফরিদগঞ্জে দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিত্তবান ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলো সাহায্যে এগিয়ে আসছে না

করোনাকালে নিম্ন মধ্যবিত্তরা দিশেহারা
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥

করোনা ভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশসহ পুরো বিশ^। অন্য দেশগুলোর তুলনায় জনসংখ্যা অপেক্ষা সংক্রমণ ইতিপূর্বে কম হলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার অনেক দিন শিথিল করে লকডাউন দিলেও গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকাডাউন চলমান। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে যাওয়ায় গুঞ্জন রয়েছে, লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার শেষ পর্যন্ত কারফিউ জারি করলেও করতে পারে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে কালক্ষেপণ হওয়ায় দুর্দশা বাড়ছে অসহায়দের। বিগত বছর করোনার শুরু থেকে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল এবং সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা নানাভাবে সমাজের অসহায় ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ বছর গত ১৩ এপ্রিল থেকে লকডাউন এবং গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন শুরু হলেও তেমন চেষ্টা দৃশ্যমান নয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ সাহায্য দেয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। যদিও এতে কিছু লোক হলেও উপকৃত হচ্ছে।

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মহামারীর সময় অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সেই আহ্বানে এখনও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের যাঁতাকলে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্তরা। দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ দান-অনুদানের জন্যে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ধরণা ও সহায়তা নিতে পারলেও নিম্ন মধ্যবিত্তরা রয়েছেন বিপদে। তারা না পারছেন বলতে, না পারছেন নিজেদের অসহায়ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন জানান, আসলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভাল রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তারপর ভাল রয়েছেন সরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক, প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কার্মচারীরা। বাকিরা কেউই ভাল নেই। করোনার এই সময়ে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া অন্যদের অবস্থা তথৈবচ। দিনের পর দিন তাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।

জনগণের জন্যে রাজনীতি এমন শ্লোগান দিলেও এ দুঃসময়ে তাদের চিন্তা বাদ দিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের নিরাপদ রাখতেই ব্যস্ত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই আছেন সেলফ কোয়ারেন্টিনে। অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও সরকারের বিরোধিতা কিংবা নানা পরামর্শ দেওয়ায় ব্যস্ত অনেকে। কিন্তু নিজেরা ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।

রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি, করোনা মহামারীতে তারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে ভোটের জন্যে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের কদর বেড়েছিল। প্রার্থীরা তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং নানাভাবে আর্থিক সহায়তা করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরুর পরও একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই তারা অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হলে এসব সম্ভাব্য প্রার্থীর অনেককেই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সহায়তার জন্য অনেকে যোগাযোগ করেও তাদের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। করোনাকালীন এ দুঃসময়ে স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধিও হাত গুটিয়ে বসে আছেন।

শুধু রাজনৈতিক দল নয়, এ দুঃসময়ে এনজিওগুলোর তৎপরতাও খুব কম। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যেভাবে এনজিওগুলোকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে, করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে তারা সেভাবে দাঁড়াচ্ছে না। সমাজের বিত্তশালীরাও তেমনভাবে নেই ছিন্নমূল মানুষের পাশে। দ্রুত এসব অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়ালে সামনের দিনগুলো তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়বে। একমুঠো ভাতের আশায় কঠোর বিধিনিষেধে ইতোমধ্যে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন।

ফরিদগঞ্জ যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান শাহীন বলেন, করোনার ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় এ মুহূর্তে সাংগঠনিক কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। যে কোনো সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়ানো সাংগঠনিক কর্মসূচির মধ্যেই পড়ে। আমি গত বছরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী মাননীয় সাংসদ সাংবাদিক শফিকুর রহমানের নির্দেশে ত্রাণ বিতরণ করেছি। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করেছি। এছাড়া ঈদুল ফিতরের সময় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছি।

ফরিদগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি আমানত গাজী বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সামগ্রীর পাশাপাশি ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। গত বছরও আমরা ফরিদগঞ্জ বিএনপির সমন্বয়ক আলহাজ্ব এম.এ. হান্নান সাহেবের নেতৃত্বে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলমত নির্বিশেষে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও ঈদুল ফিতরে সারাদেশে অসহায় মানুষদের মধ্যে খাবার ও ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে স্থানীয় নেতাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামনে ঈদুল আযহার আগেই আমরা ত্রাণ বিতরণ করবো। তবে বর্তমান এ কঠিন পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বিত্তশালীদের আরও বড় পরিসরে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জিএস তছলিম বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে মূলত কেউই ভাল নেই। আমরা সরকারিভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া আমার কথা হলো, সমাজের যারা দানবীর বা দানশীল রয়েছেন, তাদেরকে দেখেছি অবস্থাসম্পন্ন লোকদেরকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিতে। কিন্তু এদের না দিয়ে গরীব লোকজন বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়ালে তাদের ইহকাল ও পরকাল উভয় কল্যাণই হতো।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার বলেন, রাজনৈতিকভাবে বললে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আমাদের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিজয়ী। তারা সরকারি ত্রাণ সহায়তা দিয়ে চলছেন। এক্ষেত্রে যদি তারা দলের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতো তাহলে অনেক বেশি ভাল হতো। সমন্বয়ের কারণে দলে থাকা অনেক দানশীলও এগিয়ে আসতে উজ্জীবিত হতো।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, আসলে করোনার এই পরিস্থিতিতে মূলত কেউই ভাল নেই। যারা নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে দান খয়রাত করেন, তারাও আজ বেকায়দায় রয়েছে। তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। বিগত বছর আমি ব্যক্তিগতভাবে ৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই দফায় হাজার হাজার একাধিকবার ব্যবহার উপযোগী মাস্ক বিতরণ করেছি। যাদের অঢেল অর্থ আছে, তাদের এই মূহূর্তে এগিয়ে আসা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়