প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২১, ০০:০০
চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরের পরিবারের ওপর প্রভাবশালী মহলের মদদে হামলা, মেরে ফেলার হুমকি ও নির্যাতন থেকে রক্ষা এবং নিরাপত্তার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। গতকাল শনিবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন করেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরের মা হালিমা বেগম। বয়স ১৬ হলেও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোর বর্তমানে চুরির মামলায় জেল হাজতে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে হালিমা বেগমের লিখিত বক্তব্য নিম্নরূপ : গত ১৩ মে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পুরাণ রামপুর বাজারের ফ্ল্যাক্সি লোডের ব্যবসায়ী মাসুদ রাঢ়ীর দোকানে ১১ লাখ টাকা চুরি হয় বলে অভিযোগ উঠে। ১৭ দিন পর ৩০ মে আমার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে (বয়স ১৬, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে নিবন্ধিত, আইডি নং-২০০৫১৩১৪৫৩৫০৩০৬৩৫-০৬) নাজমুল হোসেন ফরহাদকে স্থানীয় কিছু যুবক আটক করে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ওই দিনই মাসুদ রাঢ়ী ফরিদগঞ্জ থানায় ৪জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করলে থানা পুলিশ আমার ছেলেকে প্রধান আসামী হিসেবে চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখায়। একই সাথে ওইদিনই রিপন হোসেন নামে আরেকজনকে আটক করে। এছাড়াও পরবর্তীতে ওই মামলায় সুরুজ নামে আরো একজনকে আটক করে। বর্তমানে আমার ছেলেসহ সকলেই চাঁদপুর কারাগারে আটক রয়েছে।
ঘটনা সেখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। তার চুরি হওয়া ১১ লাখ টাকা দেয়ার জন্য হুমকি ও চাপ প্রয়োগ শুরু করে। গত ১ জুলাই চুরি হওয়া ১১ লাখ টাকা দিতে হবে, না দিলে আমাদের মেরে ফেলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকিসহ তিনদিনের আল্টিমেটাম দেয় মাসুদ রাঢ়ী ও সন্ত্রাসী বাহিনী। তিনদিন পর ৪ জুলাই মাসুদ রাঢ়ী তার দলবল নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে। এই ঘটনায় আমিসহ আমার পরিবারের অন্তত ৭/৮জন সদস্য আহত হই। এ সময় তারা আমাদের মারধর করা ছাড়াও বাড়িঘর ভাংচুর করে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে আমরা চাঁদপুরের পুলিশ সুপার, ফরিদগঞ্জ থানার ওসি এবং সর্বশেষ ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেই। পরে প্রায় দুই/আড়াই ঘন্টা পর পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তীতে তারা আমার পরিবার ও আমার বৃদ্ধ বাবাকে দুই দফা জিম্মি করে টাকা আদায়ের জন্য। অবশ্য ওই সময় পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করে।
পরবর্তীতে আমরা থানায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করলেও অদ্যাবধি মামলা দায়ের বা কোনো আইনী পদক্ষেপ নেয় নি। ফলে আমরা ওই সন্ত্রাসী গ্রুপের পুনঃহামলার ব্যাপারে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
আমার ১৬ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে কারাগারে রয়েছে (যদিও মামলায় তাকে ১৯ বছর দেখানো হয়েছে) এবং সে যদি অপরাধী হয়, তাহলে সে শাস্তি ভোগ করুক তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা আদালতের মাধ্যমেই ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি। তবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও কেনো মামলার প্রধান আসামী করা হলো তা বোধগম্য নয়। তাছাড়া আমার ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার সুযোগে প্রকৃত চোরেরা তাকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে, এটা পুলিশও তদন্তকালে নিশ্চিত হয়েছে বলে শুনেছি।
তারপরও মামলাটি যেহেতু তদন্তাধীন এবং আদালতে চলমান, তাতে যা রায় হবে, তা আমরা মেনে নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। কিন্তু আমরা কেন হামলা-ভাংচুরের শিকার হবো ? তাই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সাথে সাথে ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে চুরির ঘটনাটিও সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। কারণ ১১ লাখ টাকা ঘরে রেখে মাসুদ রাঢ়ী দোকান খোলা রেখে নামাজ পড়তে গেলেন, এটাও সন্দেহজনক।
প্রেসক্লাব সভাপতি কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে হালিমা বেগমের স্বামী ফারুক সর্দার, পিতা বশির উল্লা, মা আশুরা বেগম, ছেলে ইমান হোসেন, আল-আমিন সর্দার ও ভাইপো মঈন হোসেন, বোন শিল্পী বেগম উপস্থিত ছিলেন।